বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় – বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনীর প্রবর্তক 

September 22, 2020 | 2 min read

আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে যে সমস্ত সাহিত্যিক সাধনার মাধ্যমে সমৃদ্ধতর করে তুলেছেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম উপযুক্ত গোয়েন্দা কাহিনীর প্রবর্তক। গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সী শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক কালজয়ী সৃষ্টি। ব্যোমকেশ বক্সীর সৃষ্টিকর্তা হিসেবেই তিনি বাংলা সাহিত্যে অধিক পরিচিত।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৯৯ সালের ৩০শে মার্চ উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর নামে এক ছোট্ট শহরে। তিনি মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আদি নিবাস উত্তর কলকাতার বরানগরের কুঠিঘাট অঞ্চলে। পিতার নাম ছিল তারাভূষণ। তারাভূষণ ছিলেন পূর্ণিয়ায় ডাকসাইটে উকিল, বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসেছিলেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তারাভূষণ ও সরলা দেবী একসঙ্গে গান শিখতেন। 

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ণিয়া থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে ১৯১৫ সালে কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজে তিনি শিশিরকুমার ভাদুড়ীকে শিক্ষক হিসেবে পান। কলকাতায় থাকার সময় তিনি হোস্টেল ও মেসে থেকেছেন। এই সময় অজিত সেনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যচর্চার অন্যতম দোসর এই অজিত সেন। ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, ভলিবল খেলায় তিনি ষথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। 

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় কুড়ি বছর বয়সে। কলেজে পড়াকালীন তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেছিলেন। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি চরিত্র হল গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সী। ১৯৩২ সালের ‘পথের কাঁটা, উপন্যাসে ব্যোমকেশের আত্মপ্রকাশ। এরপর তিনি ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে দশটি গোয়েন্দা কাহিনী রচনা করেন। কিন্তু রুজি-রোজগারের প্রয়োজনে ১৯৩৮ সালে তিনি বোম্বে চলে ঘান এবং হিমাংশু রায়ের বোম্বে টকিজে যোগদান করেন চিত্রনাট্য রচয়িতা হিসেবে। তিনি ১৪ বছর মুম্বাইয়ে ছিলেন চিত্রনাট্যকার হিসেবে। বোম্বের মালাড অঞ্চলে একটি বাগান ঘেরা বাড়ি ছিল শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দিকপাল সব ব্যক্তিত্বরা যেমন শচীন দেব বর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, হষিকেশ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ এখানে আড্ডা জমাতেন।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এমনই এক লেখক যিনি নিজের লেখাকে কখনো পাঠিয়েছেন চিত্রনাট্যে, কখনো বা গল্পের দুনিয়ায়। এরপর ১৯৫২ সালে সিনেমা জগতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে পুনেতে নিজের গৃহ নির্মাণ করে ও বসবাস শুরু করেন। ১৯৫১ সালে ‘চিত্রচোর’ কাহিনীর মাধ্যমে ব্যোমকেশের পুনরায় বাংলা সাহিত্যে পদার্পণ ঘটে। এই সময়ে ব্যোমকেশের কাহিনীতে সত্যবতী চরিত্রের সংযোজন ঘটে। 

তবে শুধুমাত্র গোয়েন্দা কাহিনী নয় ঐতিহাসিক রচনা লেখাতেও ছিল তাঁর অনায়াস দক্ষতা। তিনি উপন্যাসের আঙ্গিকে ইতিহাসকে তুলে ধরেছিলেন পাঠকের সামনে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় চলিত, তৎসম দুই ধরনের বাংলা ভাষায় অসামান্য দক্ষ ছিলেন। তিনি একাধারে রহস্য রোমাঞ্চ, আধিদৈবিক বিষয়কে উপজীব্য করে অসাধারণ সাহিত্যকীর্তির পরিচয় রেখেছেন। পরিমিতিবোধ ছিল তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sharadindu Bandyopadhyay

আরো দেখুন