প্রবল বর্ষণে হায়দরাবাদে বন্যা পরিস্থিতি
জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে গাড়ি। ঠিক খেলনার মতো! একটি গাড়ি উঠে যাচ্ছে অন্যটির উপর। জলস্রোতে ঘুরপাক খাচ্ছেন এক বানভাসী ব্যক্তি। রাস্তার একটি খুঁটি প্রাণপণে ধরে রয়েছেন। সাহায্য চাইছেন। কিন্তু ঘূর্ণির তীব্রতা দেখে জলে নামতে সাহস পাচ্ছেন না দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যরা। বুধবার সকাল থেকে এমনই অসংখ্য ভিডিওতে ছয়লাপ সোশ্যাল মিডিয়া। সৌজন্যে হায়দরাবাদের দুর্যোগ। দিন তিনেকের প্রবল বর্ষণ। যার জেরে বিপর্যস্ত তেলেঙ্গানার স্বাভাবিক জনজীবন। রাজ্যের মোট ১৪টি জেলায় তৈরি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। প্লাবিত একাধিক অঞ্চল। ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক পরিষেবা। ইতিমধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বলি ১৫ জন। ওল্ড হায়দরাবাদের বান্দালাগুড়ায় একটি আবাসনের দেওয়াল চাপা পড়ে ন’জন মারা গিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে দু’মাসের শিশুও রয়েছে বলে খবর।
ফলকনামার পুলিস কমিশনার এম এ মজিদ বলেন, ‘আবাসনটির দেওয়াল ভেঙে মোট ১০টি বাড়ি চাপা পড়ে। তার মধ্যে দু’টি বাড়ি ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ন’জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন একই পরিবারের। আহত চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওয়াইসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গভীর রাতে বান্দালাগুড়ায় যান এমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মেও বিপর্যয়ের ছবি-ভিডিও উঠে আসে। জলের তোড়ে মানুষ ও যানবাহনের ভেসে যাওয়ার ছবি দেদারে শেয়ার করেছেন নেটিজেনদের অনেকে।
সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে থাকে। ফলে বেগম বাজার, খৈরতাবাদ, মেহেদিপত্তনম ও টলিচৌকির মতো শহরের বেশ কিছু নিচু জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। টলিচৌকিতে আটকা পড়ে যায় একাধিক পরিবার। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুলিস ও দমকলের যৌথ প্রচেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়। গ্রেটার হায়দরাবাদেও জলবন্দি মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কর্মীরা। এদিন বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব শ্রী সোমেশ কুমার। তারপর গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অধীনে থাকা সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগামী ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেটার হায়দরাবাদ পুর কর্তৃপক্ষ ও জেলাশাসকদের রিলিফ ক্যাম্প খুলতে বলা হয়েছে। জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় এদিন সকালে হিমায়ত সাগর জলাশয়ের লকগেট খোলা হয়।
অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার বহু অঞ্চলও জলের তলায়। ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে আরেক উপকূলবর্তী রাজ্য ওড়িশাতেও। ইতিমধ্যে গজপতি জেলার ১২টি গ্রামের পাঁচশোরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসন।