কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

শেষ রবিবারে জমজমাট পুজোর বাজার

October 19, 2020 | 2 min read

প্রতিকী চিত্র

কোভিডের আতঙ্ক ভুলে রীতিমতো বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে পথে নেমে পড়ল বাঙালি। পুজোর আগে শেষ রবিবারের উপচে পড়া ভিড়ে বিকিকিনি দারুণ হল বটে, তবে সংক্রমণের দরজা হাট করে খুলে গেল কি না, সে প্রশ্ন থেকেই গেল।

কথায় আছে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার।’ কোভিড পরিস্থিতিতে ব্যবসার নিরিখে তা হাড়ে হাড়ে টের পেল শহরের ব্যবসায়ী মহল। উত্তরের হাতিবাগান কিংবা দক্ষিণের গড়িয়াহাট—সর্বত্রই বিপুল সংখ্যক কালোমাথা নজরে এসেছে। তিলোত্তমার অন্যতম শপিং স্পট নিউমার্কেট। রবিবার সেখানেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না বললেই চলে। কোভিডের ছোঁয়াচের আশঙ্কা সরিয়ে রেখে ফ্যাশনের রাস্তায় নেমে পড়েছেন শহরবাসী। এদিনের বাজারমুখী জনসমাগম অন্তত সে কথারই জানান দিয়েছে।

ঘড়িতে তখন বিকেল চারটে। হাতিবাগান চত্বর চলতি পরিস্থিতির নিরিখে প্রায় ‘প্যাকড্-আপ’ বললেই চলে। দামদস্তুর করে সেরাটা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন প্রায় প্রত্যেকেই। দুই হাতের ব্যাগের ভারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে আবার কোল্ড ড্রিঙ্কে গলা ভিজিয়েছেন। নতুন জামা কাপড় কেনার উদ্যম যেন ছাপিয়ে গিয়েছে করোনাকে। শুধু জামাকাপড় বললে ভুল হবে। সাজসজ্জার গয়না-লিপস্টিক থেকে শুরু করে ব্যাগ, জুতো সবকিছুর দোকানে ভিড় ছিল যথেষ্ট। সিঁথি মোড় থেকে হাতিবাগানে আসা ক্রেতা সুদেষ্ণা আচার্য বলেন, ‘কোভিডের আতঙ্ক ভুলে পুজোর আবেগে মেতে ওঠাই এখন অন্যতম লক্ষ্য। ওয়ার্ক ফ্রম হোম, লকডাউন তো অনেক হল। এবার সচেতন থেকে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা। তাই পুজোর কেনাকাটা মাস্ট। তাই শেষ রবিবারকেই পাখির চোখ করেছেন ক্রেতারা।’

মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট চত্বর শহরবাসীর কেনাকাটার কেন্দ্রস্থল। লকডাউনে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। রবিবার দুপুর থেকে সেই ক্ষতি প্রায় সুদে-আসলে মিটিয়ে নিয়েছে ধর্মতলা। শপিং মল থেকে গ্র্যান্ড হোটেলের তলার স্টল, হগ মার্কেটে থেকে নিউমার্কেট চত্বর সর্বত্র অগণিত ক্রেতা। সেখানকার ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, এ বছর নিত্যনতুন জামাকাপড়ের তুলনায় প্রতিদিনের ব্যবহার করা পোশাকের চাহিদা বেশি। কেনাকাটার ধরন যাই হোক, ভিড়ের নিরিখে উত্তর কলকাতার হাতিবাগানকে টেক্কা দিয়েছে নিউ মার্কেট।

শনিবারের তুলনায় পুজোর আগে শেষ রবিবারে এই জনসমাগম খুব আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। আশা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এদিনের বিকিকিনিতে যথেষ্ট সন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ট্রেন চালু থাকলে বাজার আরও ভালো হতো। গড়িয়াহাটের ব্যবসায়ী স্বপন দাস বলেন, ‘ভালোই হয়েছে ব্যবসা। কলকাতা ক্রেতাদের নিয়ে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে যথেষ্ট সন্তোষজনক।’

দূরত্ব শিকেয় তুলে জনসমাগমের ফলে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন করা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘সংক্রমণ প্রতিরোধে দরকার ইমিউনিটি, ভালো করে খাওয়া-দাওয়া না-করলে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ব। আর খেতে গেলে ভাল ব্যবসা অত্যন্ত জরুরি।’ তাই সংক্রমণের ভয় থাকলেও পেট চালাতে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের এই সমাগমকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীমহল। অন্যদিকে চিকিৎসকদের মতে, ভারতে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পুজোর বাজার জমজমাট হলেও সংক্রমণ এড়াতে বিশেষজ্ঞদের মতামত, সুস্থ এবং সচেতন থেকে পুজো উপভোগ করুন প্রত্যেক শহরবাসী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#durga Pujo, #Durga Puja 2020, #Pujo Bazar

আরো দেখুন