দার্জিলিঙের চকবাজারে সভা করে তৃণমূলের হাত শক্ত করার ডাক দিলেন বিমল গুরুং
সাড়ে তিন বছর পর ফের পাহাড়ে পা রাখলেন বিমল গুরুং। সভা করলেন দার্জিলিঙের চকবাজারে। সভা থেকে প্রত্যাশিতভাবেই আক্রমণ করলেন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিনয় তামাং অনিত থাপা শিবিরকে। আহ্বান জানালেন রাজ্য সরকারের পাশে থাকার।
রবিবার দার্জিলিঙে বিমল গুরুংয়ের সভা ঘিরে তাঁর শিবিরের তৎপরতা ছিল নজরকাড়া। এতদিন পরে দার্জিলিঙে পৌঁছে বিমল কী বার্তা দেন সেদিকেও লক্ষ্য ছিল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। রবিবার সকাল থেকেই পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে গুরুং সর্মথকরা পৌঁছে যান দার্জিলিঙে। কানায় কানায় ভরে ওঠে সভাস্থল। বিমলকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। গান- নাচ- ত্রিবর্ণ পতাকায় নেতাকে বরণ করে নেন কর্মীসমর্থকরা।
মঞ্চ থেকে বিনয় শিবিরকে ‘ডুপ্লিকেট’ বলে কটাক্ষ করেন বিমল অনুগামী নেতারা। জানিয়ে দেন পাহাড়ের শাহেনশাহ এখনও বিমল গুরুং। কোনভাবেই তাঁর আসন পাহাড়বাসীর হৃদয় থেকে টলানো যাবে না। এদিন কর্মী-সমর্থকদের ভিড় দেখে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত ছিলেন বিমল গুরুং, রোশন গিরিরা। দুজনেই জানিয়ে দেন বিনয়ের দিন শেষ। বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে জেতানোর জন্য কর্মী সমর্থকদের উদ্যোগী হতে বললেন বিমল গুরুং।
ইতিমধ্যেই ২৬ ডিসেম্বর পাহাড়ে পাল্টা পরিবর্তন যাত্রার ডাক দিয়েছেন বিনয় তামাং গোষ্ঠী। বিনয় গোষ্ঠীর নেতা অনিত থাপা বলেন, ‘‘পাহাড়বাসী কার সঙ্গে রয়েছে তা ২৬ তারিখ প্রমাণ হয়ে যাবে। সে দিনই চ্যালেঞ্জ জানানো হবে বিমল গুরুঙকে।’’
রাজ্য সরকার যে বিমলের পাশে রয়েছে তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই আদালতের ছাড়পত্র নিয়ে গুরুংয়ের পাতলেবাসের বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। গুরুংয়ের ক্রোক করা সম্পত্তি ও ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এদিন বিমলের সভা ঘিরে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশি বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। রবিবার সভা সভা করেই নিজের বাড়িতে ফিরবেন বিমল।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ২০১৭ সালের 8 জুন থেকে পাহাড়ে হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু করেছিল গুরুংয়ের নেতৃত্বাধীন মোর্চা। আগুন জ্বলে উঠেছিল পাহাড়ে। সেদিন থেকেই ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগ-পুলিশ আধিকারিক খুন ইত্যাদি ঘটনায় বিমল সহ দলের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে একেরপর এক অভিযোগ দায়ের হতে থাকে। জুলাই মাসের শেষদিকে দেশদ্রোহিতার মামলা রুজু হতেই গা-ঢাকা দেন বিমল সহ অন্য নেতারা। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি বিনয় তামাং অনিত থাপাকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়কে শান্ত করেন।
বিমল-রোশনরা বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে আত্মগোপনকালে বিজেপির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রেখে গিয়েছেন। এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিমলের সমর্থন দিয়ে দার্জিলিং লোকসভায় বিপুল ভোটে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ না হওয়ায় পাহাড়ে পায়ের নীচের আলগা হয়ে যাওয়া মাটি ফেরত পেতে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের হাত ধরেন বিমল।
রাজ্যের সাহায্যেই আপাতত পাহাড়ে প্রত্যাবর্তন ঘটল বিমলের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন এই মুহূর্তে বিমল ও বিনয় হাত মিলিয়ে নিন। যাতে রাজনৈতিক সুবিধা পায় তৃণমূল। কিন্তু এখনও সেই সম্ভাবনা দূর অস্ত। বরং জল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকার বিমলকে গুরুত্ব দেওয়ায় বিজেপি শিবিরের দিকে ঝুঁকতে পারেন বিনয় অনিতরা। সুতরাং আপাতত পাহাড় রাজনীতির দিকে নজর রয়েছে সবারই।