বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত বর্ধমান
বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পশ্চিম বর্ধমান। জেলা বিজেপি কার্যালয়ে আদি এবং নব্য কর্মীদের মধ্যে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। তারপর মুহূর্তের মধ্যে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি গাড়িতেও। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এমনকী বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
সূত্রের খবর, বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর অপসারণের দাবিতে সরব বিজেপির একটি গোষ্ঠী। তাঁদের অভিযোগ, বর্ধমান সফরে এসে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার উদ্বোধন করা দলীয় কার্যালয়ে অনৈতিক কাজ হচ্ছে। সেই অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিজেপির পুরনো কর্মীরা। বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। অভিযোগ, নতুন কর্মীরা ওই দলীয় কার্যালয়ের ছাদ থেকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। বিক্ষোভকারীরাও পালটা ইট ছুঁড়তে থাকে। ভেঙে যায় পার্টি অফিসের জানালা।
পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলেও বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে যুব মোর্চার বৈঠক অশান্ত হয়। বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা রাঢ়বঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন এবং স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় উপস্থিতিতেই চলে বচসা এবং বিশৃঙ্খলা। শেষ পর্যন্ত দুই নেতার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন জিটি রোডে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। রাস্তার উপরে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গাড়িগুলি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বর্ধমান থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। লাঠি উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয়। দমকল অগ্নিকাণ্ড সামাল দেয়।
এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে দু’পক্ষই পুলিশের উপর ইট ছোড়ে বলে অভিযোগ। বেশ কয়েকটি মোটরবাইক ও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, তাঁরা পুরনো কর্মী। দলের মার খেয়েছেন। কিন্তু যাঁদের সঙ্গে লড়াই করে এসেছেন, তাঁদের দলে নেওয়া হচ্ছে। কোনও কথা শোনা হচ্ছে না। দলে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। তাঁরা বারবার সাংসদ থেকে দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। কিন্তু ফল হয়নি।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা বিজেপিতেও মূল দ্বন্দ্ব ‘আদি বনাম নব্য’। আসানসোলে জেলা দফতরে গোলামালের সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে বন্ধ করে দেওয়া হয় দরজা। সম্প্রতি বিজেপি জেলা যুব মোর্চার কমিটি ঘোষণা হয়েছে। তাতে বাদ পড়েছেন অনেকেই। যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁদের অভিযোগ, পুরনো বিজেপি কর্মীদের বাদ দিয়ে তৃণমূল থেকে আসা নিষ্ক্রিয় এবং নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মাইক হাতে নিয়ে বাবুল এবং অরবিন্দ পরিস্থিতি সামাল দেন। যুযুধান দু’পক্ষকে শান্ত করে ফের বৈঠক শুরু করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বাবুলের মন্তব্য, ‘সংসার বড় হলে অশান্তি ঝগড়া হয়। সব মিটে গিয়েছে।’