মুরারইয়ে গেরুয়া শিবিরে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
মুরারইয়ে (Murarai) গেরুয়া শিবিরে প্রার্থী নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ঘোষিত প্রার্থীর বিরোধিতায় পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করা হয়েছিল। তারপরও এনিয়ে উচ্চবাচ্য না হওয়ায় দলেরই এক নেতাকে এখানে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ভোটের মুখে মুরারইয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি।
মুরারই কেন্দ্রে বিজেপির (BJP) প্রার্থী হিসাবে দলের জেলা সম্পাদক দেবাশিস রায়ের নাম ঘোষণা হতেই বিরোধিতা শুরু করেন দলের নেতা-কর্মীদের বৃহত্তর অংশ। এলাকার বিজেপি নেতা তথা জেলা কমিটির সদস্য সুধীররঞ্জন দাসগোস্বামী পরিষ্কার জানিয়েছেন, মুরারই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করতেই হবে। আমরা দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য কোনওমতেই চাপিয়ে দেওয়া এই প্রার্থীকে মেনে নেব না। শনিবারের মধ্যে আমাদের দাবি না মানা হলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তিধারী সবার কছে গ্রহণযোগ্য ও জনসংযোগ আছে, এমন কাউকে এখানে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানো হবে। আর একথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে আমরা লড়াই শুরু করে দেব। ওই নির্দল প্রার্থীর হয়েই আমরা বুথে বুথে প্রচার চালাব। শুক্রবার দলের সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসে সেই প্রার্থী ঠিক করা হবে। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য আমাদের সঙ্গে আছেন, তাই ফলও ভালো হবে বলে আশা করছি। কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, দলীয় নেতৃত্ব প্রায়ই বলে, কর্মীদের মতামতই শেষ কথা। তাহলে, এই কেন্দ্রে দেবাশিস রায়কে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে কেন কর্মীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়নি? যেভাবে দল প্রার্থী দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। তাঁকে প্রার্থী করার পিছনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি
অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ এই প্রার্থীকে কোনওমতেই মেনে নেওয়া হবে না বলে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন।
সুধীররঞ্জনবাবু আরও বলেন, জেলা কমিটির তিনজন সদস্য, ২৮১টির মধ্যে ২৫০জন বুথ সভাপতি, চারটি মণ্ডলের সভাপতি, ব্লকের আটজন সাধারণ সম্পাদক, ৪১টি শক্তিকেন্দ্র প্রমুখের মধ্যে ৩৮জন সহ কয়েকশো কর্মী আমাদের সঙ্গে আছেন। আর দেবাশিস রায়ের সঙ্গে কোনও কর্মী নেই। উনি আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার করছেন। মুখে যাই বলুন না কেন, বাস্তবে দেখবেন হালে পানি মিলবে না। ফল প্রকাশিত হলে দেখবেন উনি চতুর্থ স্থানে থাকবেন।
এসম্পর্কে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, চারিদিকে যা ঝামেলা চলছে মুরারইয়ে যাওয়াই হয়ে উঠছে না।
খুব শীঘ্রই সেখানে গিয়ে নেতৃত্বর সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। এরই মধ্যে কখনও একা, কখনও অনুগামীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন দেবাশিসবাবু। এদিন সকালে পাইকরের মুসলিম পাড়ায় তিনি একাই বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান। বিকেলে তিলোগ্রামে অনুগামীদের নিয়ে জনসংযোগ সারেন। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যর বিরোধিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটে এসবের কোনও প্রভাব পড়বে না। বিজেপি দেশের বৃহত্তম দল। প্রচুর কার্যকর্তা আছেন। আর এসব ছোটখাট ব্যাপার। ওঁরা যদি নির্দল প্রার্থী দাঁড় করায় তাতেও ভোটে আমার কোনও অসুবিধে হবে না। মানুষের মনে পদ্মফুল গেঁথে গিয়েছে। এই কেন্দ্রে আমার জয় নিশ্চিত।
উল্লেখ্য, মুরারইয়ে শুধু নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর হুঁশিয়ারিই নয়, গত সোমবার প্রার্থী বদলের দাবিতে পার্টি অফিসে তালা দিয়ে, টায়ার পুড়িয়ে পথ অবরোধও করা হয়েছিল। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে। নির্বাচনের মুখে প্রার্থী নিয়ে এমন বিক্ষোভে অস্বস্তিতে দলের জেলা নেতৃত্ব। এবার কোন্দল প্রকাশ্যে আসতেই তাঁদের সাফাই, পরিবারে বেশি লোক হলে যেমন টুকটাক অশান্তি হয় তেমনই হচ্ছে। আমরা নিজেরা আলোচনা করে সব মিটিয়ে নেব।