করোনা নিরাময়ে আশার আলো ন্যানো সায়েন্সে, সফল দলে ২ বাঙালি
করোনা (Covid 19) নিরাময়ে আশার আলো দেখাচ্ছে ন্যানো সায়েন্স। একটি মৌলপদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রূপকেই ন্যানো বলে (এক মিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগ হল ন্যানোমিটার)। একদল আন্তর্জাতিক গবেষক দাবি করছেন, বিভিন্ন কার্বন ন্যানো মেটেরিয়াল ১৩টি আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী। এগুলি শুধু অ্যান্টি ভাইরাল এজেন্ট হিসেবেই শুধু কাজ করছে না, নতুন টিস্যু গঠনেও ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছে। যে যে ব্যাকটেরিয়া বা আণুবীক্ষণিক জীব করোনার সংক্রমণকে জটিল করে তোলে, সেগুলিকেও মারতে বিশেষ ভূমিকা নেয় এগুলি। ‘স্যাকরেড’ নামে ২৩ জন বিজ্ঞানীর একটি দলে রয়েছেন একাধিক বাঙালিও। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির আন্তর্জাতিক জার্নাল এসিএস ন্যানোতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
স্যাকরেড— পুরো কথাটি হল সেলফ অ্যাসেমবেলড কোভিড রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ডাইরেকটিভস কনসোর্টিয়াম। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এর সদস্য বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আশা করছেন, ক্যান্সার নিরাময়ে যেভাবে পদার্থবিদ্যা রেডিওথেরাপি সহ বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে এসে সহায়ক হয়েছে, করোনার ক্ষেত্রেও ন্যানো বিজ্ঞান সেই ভূমিকা নেবে। মূল গবেষক ফ্রান্সের অধ্যাপিকা অ্যাঞ্জেল সেরানো অ্যারোকা। স্পেনের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়ায় তিনি এর আগেও ভাইরাস নিধন মাস্ক আবিষ্কার করে শোরগোল ফেলেছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপে দলের অন্য এক বিজ্ঞানীর মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, কার্বন বেসড ন্যানো মেটেরিয়াল (সিবিএন)-গুলি করোনা নিরাময়ে খুবই আশা জাগাচ্ছে। করোনার নিউমোনিয়াকে আরও জটিল করে তোলে কোনও গৌণ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাংগাস (ছত্রাক)। ব্রড স্পেকট্রামে বা বড় ক্ষেত্রে নিয়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কার্বন ন্যানো মেটেরিয়ালের বিভিন্ন ডেরিভেটিভ বা আণবিক রূপ যেমন কার্বন ডটস, গ্রাফেন বা ফুলরিন সেই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস বা ভাইরাসের পাশাপাশি সার্স কোভ-২ বা কোভিড ভাইরাসকেও নিষ্ক্রিয় করে দেয়। বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। কিছু কিছু আবার এতটাই শক্তিশালী যে সুপারবাগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলি মাল্টিড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট। অর্থাৎ, একাধিক ওষুধও সেগুলিকে মারতে পারে না। সেই অবস্থায় এ ধরনের কার্বন অণু কার্যকর হবে। এদের তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আবার নতুন টিস্যু জন্মানোর ক্ষেত্রেও এগুলি সহায়ক।
এই গবেষণায় রয়েছেন দুই বাঙালি। তাঁরা হলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই কলকাতা)-এর অধ্যাপক পবিত্র পাল চৌধুরী ও মেদিনীপুরের পিংলা কলেজের গণিতের সহ অধ্যাপক শেখ শরিফ হাসান। বেশ কিছু ভারতীয় বিজ্ঞানীও রয়েছেন। শরিফ হাসান বলেন, গবেষণার গাণিতিক বিশ্লেষণগুলি করে দেখেছি, এর কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত। করোনার টিকা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন ছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে, কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েও করোনা হচ্ছে। ফলে আশঙ্কা সত্যিই হয়েছে। তাই এবার বিকল্প চিকিৎসা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই ওষুধ মানবদেহে তো বটেই, পরিবেশেও কোনও বিরুপ প্রভাব ফেলে না। কোনও বিষক্রিয়াও নেই। ব্যাকটেরিয়াগুলি এই ওষুধে অভ্যস্ত হয়ে নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে, এমন সম্ভাবনাও খুবই কম।