গনির জেলায় নিশ্চিহ্ন কংগ্রেস
মালদহ থেকে বারবার শূন্য হাতে ফিরতে হয় বলে এবারও জেলায় নির্বাচনী প্রচারে এসে আক্ষেপ করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারে মমতার সেই আক্ষেপ সুদে আসলে অনেকটাই মিটিয়ে দিলেন মালদহের মানুষ। রবিবার ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, দলনেত্রীকে কথা দিয়েছিলাম, এবার শূন্য হাতে ফেরাব না। জেলার আটটি বিধানসভা তাঁর হাতে তুলে দিয়ে কিছুটা কথা রেখেছি। রবিবার ‘হাইভোল্টেজ’ বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মালদহ জেলাজুড়ে উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় মৌসম এখন কোয়ারেন্টাইনে। ‘ঘরবন্দি’ থেকেও প্রতিমুহূর্তে তাঁর নজর ছিল ভোটের ফলের দিকে। বিকেলে জেলার চিত্র স্পষ্ট হতেই বলেন, বাংলার আত্মসম্মান আমরা ভূলুণ্ঠিত হতে দিইনি। যারা বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি বোঝে না, মানুষ তাদের পরাজিত করেছে।
কথায় আছে, সকাল দেখেই বোঝা যায়, দিনের বাকিটা কেমন যাবে। এদিন মালদহের ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের ইভিএম খোলার পর থেকেই কার্যত তৃণমূলের পালে হাওয়া লাগে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়ার দাপট বেড়ে তা তুমুল ঝড়ে পরিণত হয়। সেই ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যায় গনির জেলার কংগ্রেসের দুর্গ। চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই জোড়াফুল শিবিরে উল্লাস চোখে পড়ে। বিজেপি অবশ্য দুপুরের পর ম্রিয়মান হয়ে যায়। জেলার কিছু আসনে প্রথম কয়েক রাউন্ডেই তৃণমূল কার্যত ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। গুটিকয়েক আসনে অবশ্য শেষপর্যন্ত টানটান লড়াই চলে। দিনের শেষে চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতীপুর, রতুয়া, মানিকচক, মোথাবাড়ি, সুজাপুর এবং বৈষ্ণবনগর আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হন। এরমধ্যে সুজাপুর গত বিধানসভা পর্যন্ত কংগ্রেসের দখলে ছিল।
সেখানে একসময় গনিখান চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। সেই গনির ‘গড়ে’ এদিন তৃণমূল প্রার্থী আব্দুল গনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। গনি পরিবারের সদস্য ইশা খান চৌধুরীকে তিনি পরাজিত করেন। ইংলিশবাজারের বিদায়ী বিধায়ক তথা পুরপ্রধান তৃণমূলের নীহাররঞ্জন ঘোষ চাঁচল আসনে জয়লাভ করেন। রতুয়া আসনে প্রবীণ তৃণমূল নেতা সমর মুখোপাধ্যায় জিতেছেন। উত্তর মালদহের চারটি বিধানসভার প্রার্থীদের সমর্থনে তৃণমূল নেত্রী জনসভা করেছিলেন। সেই চারটি আসনের প্রতিটিতেই এদিন তৃণমূল প্রার্থীরা আশাতীত ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে, মানিকচক আসনে দলবদলু নেতা তথা মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র পরাজিত করেন। পাশের আসন মোথাবাড়িতে আরএক প্রাক্তন মন্ত্রী তৃণমূলের সাবিনা ইয়াসমিন জয়লাভ করেন। এদিকে হবিবপুর, গাজোল, মালদহ এবং ইংলিশবাজার আসনে বিজেপি জয়লাভ করলেও দখলে থাকা বৈষ্ণবনগর আসনটি তাদের হাতছাড়া হয়েছে। সেখানে বিদায়ী বিধায়ক স্বাধীন সরকার স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হন। ইংলিশবাজার আসনে প্রাক্তন মন্ত্রী তৃণমূলের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী হেরেছেন। সেখানে জয়ী হয়েছেন বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। সাবিত্রী মিত্র এবং শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী কয়েকদিন আগেই করোনায় আক্রান্ত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তাঁরা দুই হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভোটে ধরাশায়ী করলেন। মালদহ আসনে গুলিবিদ্ধ বিজেপি প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা জয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে, মালদহ জেলায় সবচেয়ে করুণ অবস্থা সংযুক্ত মোর্চার। তারা কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। উত্তর মালদহ লোকসভার সাতটি আসনের মধ্যে চারটিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। দক্ষিণ মালদহ লোকসভার অন্তর্গত পাঁচটি আসন এই জেলায়। তারমধ্যে চারটিতেই ঘাসফুল শিবির জয়ী হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে জেলার একটি আসনেও তৃণমূল জয় পায়নি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে উত্তর মালদহে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে ছিল। দক্ষিণ মালদহের সবক’টি আসনেই পিছিয়ে ছিল শাসক দল। ফলে এবারের সাফল্যকে বিপুল জয় বলেই মনে করছে দল।