সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, সেন্ট্রাল ভিস্তার ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা
‘নো ফটোগ্রাফি, নো ভিডিও রেকর্ডিং’। এমনই সাদা-নীল সাইনবোর্ডে মুখ ঢেকেছে কেন্দ্রীয় সরকারের সাধের সেন্ট্রাল ভিস্তা (Central Vista) প্রকল্প। মুখ লুকিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (Narendra Modi)। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই তাঁকে ক্যামেরার সামনে আসতে দেখা যায়নি। একইভাবে খোঁজ নেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। তাঁর নামে দিল্লি পুলিসে মিসিং ডায়েরি হয়েছে। দু’টি বিষয়কে টেনে লাগাতার আক্রমণের ধারা অব্যাহত রেখেছে বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার হিন্দিতে ট্যুইট করেছেন, ‘ভ্যাকসিন, অক্সিজেন আর ওষুধের সঙ্গে মোদিও গায়েব! দেখা যাচ্ছে শুধু সেন্ট্রাল ভিস্তা, ওষুধে জিএসটি, আর এখানে ওখানে প্রধানমন্ত্রীর ছবি!’ যদিও একটু ভুলই লিখেছেন তিনি। কারণ, গত দু’-তিন ধরেই সেন্ট্রাল ভিস্তার কোনও ছবি আর তোলা যাচ্ছে না। রাজধানীতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে নির্মাণকারী শ্রমিকরা কীভাবে থাকছেন, তাও সামনে আসেনি।
২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ইন্ডিয়া গেটের লনের অদূরেই শুরু হয়েছে রাজপথের দু’পাশ ঢেলে সাজার কাজ। হয়েছে নতুন নামকরণও, সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউ। রাজধানীতে করোনার বাড়বাড়ন্ত, লকডাউন, টিকা-অক্সিজেন-ওষুধ-হাসপাতালে বেডের হাহাকার—কোনও কিছুই সেই নির্মাণকাজ আটকাতে পারেনি। ‘জরুরি পরিষেবা’র তকমা লাগিয়ে তা চালিয়ে যাচ্ছে মোদি সরকার। টিকার বদলে লুটিয়েন্স দিল্লির ভোলবদলে জোর দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। প্রকল্পের একগাদা ছবিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপর গত রবিবার থেকে সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউয়ের নির্মাণস্থলের বাইরে দেখা মিলছে কেন্দ্রীয় পূর্তদপ্তরের লাগানো সাইনবোর্ডগুলির। ছবি-ভিডিও তোলার পাশাপাশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাধারণের প্রবেশও।
কেন এই সাইনবোর্ড? শুধু কি সমালোচনা এড়াতেই? উত্তর দিতে চাননি কেন্দ্রীয় পূর্তদপ্তরের মুখপাত্র। সাইনবোর্ডে সেন্ট্রাল ভিস্তার নির্মাণকারী সংস্থা শাপুরজি পালোনজির নাম রয়েছে। সেই সংস্থার মুখপাত্রও এব্যাপারে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নেট নাগরিকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আক্রমণ করা হচ্ছে মোদি সরকারকে। বুধবারই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেন্ট্রাল ভিস্তার নির্মাণ বন্ধ রেখে ওই টাকা অক্সিজেন এবং টিকায় লাগানোর আর্জি জানিয়েছিল দেশের ১২জন বিরোধী নেতানেত্রী। এদিন দেশ-বিদেশের ৭৫জন বুদ্ধিজীবী ও স্কলার মোদিকে খোলা চিঠি দিয়ে প্রকল্প স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছেন। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, স্কলার গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, ভাস্কর অনীশ কাপুরদের মতে, সঙ্কটকালে বিপুল ব্যয়ের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পে অর্থ খরচ না করে, তা দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত। ছত্তিশগড়েও বিধানসভা ভবন পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সে রাজ্যের কংগ্রেস সরকার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থাকেই প্রকাশ্যে এনেছে। এমন অবস্থায় মোদির ভাবমূর্তি বজায় রাখতে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। গতকাল থেকেই সেই প্রচেষ্টাকে তীব্র কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। করোনা সঙ্কট মোকাবিলার ব্যর্থতা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মোদিকে আক্রমণ শানাচ্ছেন রাহুল গান্ধী। বুধবারই তিনি ট্যুইট করেন, ‘বারবার দুঃসংবাদ আসছে। প্রাথমিক সমস্যাগুলি এখনও মেটানো হয়নি। এই মহামারীতে কেন্দ্রের নৃশংসতা কত দিন সহ্য করবে দেশবাসী? যাঁর জবাব দেওয়ার কথা, তিনি কোথাও লুকিয়ে বসে আছেন।’ পরে কংগ্রেসের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে ‘মোদি-শাহ গায়েব হ্যায়’ হ্যাশট্যাগ এবং পোস্টার একের পর এক শেয়ার করা হয়।
ট্যুইটারে এদিন সকাল থেকেই ট্রেন্ডিং ছিল হ্যাশট্যাগ অমিত শাহ মিসিং। দিল্লিতে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআইয়ের সাধারণ সম্পাদক নাগেশ কারিয়াপ্পা দিল্লি পুলিসে অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিখোঁজ। তার স্ক্রিনশটও ভাইরাল হয়। গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গা-যমুনায় বহু মৃতদেহ ভেসে যেতে দেখা দিয়েছে। তা নিয়েও সরব হয়েছে কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘কী দুর্দিন এল এই নতুন ভারতে! নদীতে দেহ ভেসে যাচ্ছে অথচ দেখতে পাচ্ছে না সরকার। লজ্জা…।’