বিজেপির ঘর ভেঙে তৃণমূলে আসছেন ৩ সাংসদ ও ৮ বিধায়ক? আবার জল্পনা
দল ছাড়তে পারেন বিজেপির বেশ কয়েক জন বিধায়ক। যোগ দিতে পারেন তৃণমূলে। ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে এমন জল্পনা বাড়ছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই জল্পনা আরও উস্কে দিয়ে তৃণমূল শিবির দাবি করেছে, শুধু ৭-৮ জন বিধায়কই নন, বিজেপির ৩ সাংসদও জোড়াফুলের পথে পা বাড়িয়ে। প্রকাশ্যে তৃণমূলের সেই দাবি নস্যাৎ করছেন বিজেপি (BJP) নেতারা। কিন্তু অন্তত ৭ জন বিধায়ককে নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেও জোরদার জল্পনা।
বাংলায় অন্তত ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলেন অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যপূরণে ঝাঁপিয়েও পড়েছিল গোটা দল। কিন্তু ২ মে শাহের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছয়নি বিজেপি। ১০০ আসনও পায়নি তারা। সাকুল্যে ৭৭ আসনেই থেমে গিয়েছে গেরুয়া রথ। তার মধ্যে আবার নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা সাংসদ হিসেবেই থাকতে চেয়েছেন। অর্থাৎ বিজেপির হাতে এখন ৭৫ জন বিধায়ক। সেটাও ৫ বছর সামলে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে এখন ঘোর অনিশ্চয়তা। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ইতিমধ্যেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেছেন,বিজেপির ৩ জন সাংসদ এবং ৭-৮ জন বিধায়ক তৃণমূলের (Trinamool) সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
সূত্রের খবর, ৩ বিজেপি সাংসদের দিকে ইঙ্গিত করছে তৃণমূল। তাঁদের একজন উত্তরবঙ্গের, একজন রাঢ়বঙ্গের এবং আর এক জন দক্ষিণবঙ্গের। কিন্তু যে ৭-৮ জন বিধায়কের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা কারা? তৃণমূলের কারও নাম খোলসা করেনি। তবে বিজেপির অন্দর মহল সূত্রের খবর, দুই দিনাজপুরের ৩জন বিধায়ককে নিয়ে সংশয় রয়েছে দলেই। নদিয়া থেকে নির্বাচিত দুই বিধায়ক ছাড়াও রাঢ়বঙ্গের ১ ও দক্ষিণবঙ্গের ২ বিধায়ককে নিয়েও আশঙ্কায় বিজেপি নেতৃত্ব। তৃণমূলের তাঁরা কবে যোগ দিতে পারেন অথবা তাঁদের কি দলে নেওয়া হবে? কুণাল ঘোষ বলেন,”আবারও বলছি, বিজেপির ৩ সাংসদ এবং ৭-৮ জন বিধায়ক তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু তাঁদের বিষয়ে আমাদের দলে এখনও কোনও আলেচনা হয়নি।”
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল এবং অন্যান্য দল ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এ বারের ভোটে বিজেপির টিকিট পেয়েছেন। জিতেছেন ১০ জন। তাঁদের সকলের শিকড় কি দলের গভীরে এখনও পৌঁছেছে? প্রশ্ন রয়েছে বিজেপির অন্দরমহলেই। তবে উদ্বেগের ইতি এখাানেই হচ্ছে না। এ বারের ভোটে এমন ৫ জন বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত হয়েছে, যাঁরা আগে কোনও দলে বা সক্রিয় রাজনীতিতেই ছিলেন না। তাঁরা প্রত্যেকেই দারুণভাবে মিশে গিয়েছেন, এমনটা ভাবারও কোনও কারণ নেই বলে মনে করছে বিজেপি নেতৃত্ব। প্রকাশ্য বিজেপি নেতৃত্ব ভরপুর আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টা করছেন। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কথায়,”দল ছেড়ে কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যাবেন না। সবাই দলে থাকবেন। প্রতিনিধিদের উপরে বিজেপির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।”
তা হলে কি পুরোটাই ভিত্তিহীন জল্পনা? বিজেপির কোনও বিধায়ক বা কোনও সাংসদ তৃণমূলের পথে পা বাড়িয়ে নেই? এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে তৃণমূলকেই তোপের মুখে দাঁড় করাচ্ছেন শমীক। বলছেন, ”তৃণমূলের অস্তিত্বই অন্য দল ভাঙিয়ে তৈরি হয়েছে।”
বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে যা-ই বলুন, দলের অন্দরে জোরদার তৎপরতা। ৭৫ জন বিধায়কের মধ্যে যাঁদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক এখনও তেমন নিবিড় নয়, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। দলে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বার্তা ছড়ানো হচ্ছে, বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎও খুব ভালো। এমন দ্বি-কৌশল কতটা সফল হয়, তার উপরেই এখন নির্ভর করছে বিজেপির ঘর অটুট থাকবে না ভাঙবে?