করোনা আবহে ধান ফলিয়ে ও কেঁচোসার তৈরি করে আয় শিলিগুড়ির মহিলাদের
খড় থেকে আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, মেহগনি গাছের চারা, ঘর সাজানোর গাছ এবং কেঁচোসার বিক্রি করেও লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে। করোনাকালে এভাবেই সংসারের স্বচ্ছলতা বজায় রেখেছেন নকশালবাড়ির মহিলারা। তাঁরা বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের বক্তব্য, কৃষিদপ্তর এবং পঞ্চায়েত দপ্তরের সুসংহত এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের (সিএডিসি) সহযোগিতায় এমনটা সম্ভব হয়েছে। করোনা (Covid19) পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কৃষিদপ্তরের আধিকারিকরা বলেন, সবরকমভাবে সরকারি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি গোষ্ঠীগুলির উৎপাদিত ফসল, চারাগাছ ও সার বাজারজাত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে প্রচুর মানুষের পেশা কার্যত বিপন্ন। অনেকেই এখন সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেকে পেশা বদল করেছেন। কিন্তু, শিলিগুড়ি (Siliguri) মহকুমার নকশালবাড়ি ব্লকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ধরে রেখেছেন। তাঁরা ধান চাষ, কেঁচোসার, মেহগনি গাছ ও ঘর সাজানোর গাছের নার্সারি তৈরি করেই অর্থ উপার্জন করছেন।
ওই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বাথাবাড়ির ‘মহিমা’ মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী অন্যতম। এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ১০ জন। তাঁদের স্বামীদের কেউ কাঠমিস্ত্রি, কেউ টোটোচালক, রাজমিস্ত্রির কাজের সঙ্গে যুক্ত। গোষ্ঠীর সভানেত্রী বিজয়া সিংহ বলেন, গতবছর প্রায় আট বিঘা জমি লিজ নিয়ে জৈব উপায়ে কেরালা সুন্দরী ও চমৎকার ধান চাষ করি। কৃষিদপ্তর ওই দুই প্রজাতির ধানের বীজ দেয়। জমি তৈরি, গাছ লাগানো, ধান তোলা সবটাই নিজেরা করেছি। এতে ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১২৭ মণ। যা থেকে লিজের চুক্তি অনুসারে জমির মালিককে বিঘা প্রতি তিন মণ করে ধান দিতে হয়েছে। বাকি ধান গোষ্ঠীর পাঁচ সদস্যের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। এই চাষে খরচ হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। খড় বিক্রি করেই সেই খরচ উঠে যায়। এখন সেই ধান থেকে উৎপাদিত চাল দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।
গোষ্ঠীর সভানেত্রী বলেন, এবারও ধান চাষ করেছি। পাশাপাশি প্রায় ৩ হাজার মেহগনি গাছের চারা তৈরি করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কৃষিদপ্তর সেই চারা কিনে নেবে বলে জানিয়েছে। তাছাড়া কৃষিদপ্তরের আতমা প্রকল্প থেকে ১০ হাজার টাকা সাহায্য পেয়েছি। স্বাভাবিকভাবে গোষ্ঠীর মাধ্যমেই সংসার সচল রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে স্বামী ও মেয়ে সহ তিনজনের সংসার চালাতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।
এই ব্লকের মণিরামে অবস্থিত আরএকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ‘সাইপাত্রী’। এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যাও ১০। এখানকার মহিলারা কেঁচোসার তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। কলাবাড়ি ফরেস্টের কাছে গোষ্ঠীর মহিলারা কচুরিপানা, ঘাস, কলাগাছ, কেঁচো প্রভৃতি দিয়ে সার প্রস্তুত করছেন। মাসে এখানে ৪ থেকে সাড়ে ৫ কুইন্টাল সার প্রস্তুত হয়। দাম ২ হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল। গোষ্ঠীর সভানেত্রী মুনা খৈরালা বলেন, কৃষিদপ্তরের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছি। এতে কিছুটা সুবিধা হয়েছে।
স্থানীয় আরওএকটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ‘সৃষ্টি’ ঘর সাজানোর গাছের নার্সারি তৈরি করেছে। গোষ্ঠীর সভানেত্রী বিনা লামা বলেন, মাসে চারা বিক্রি করে ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হয়। মরশুমে তা কিছুটা বাড়ে। আর রাজ্য সরকার আয়োজিত মেলায় স্টল দিয়ে আয় হয় দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা। সংশ্লিষ্ট তিনটি গোষ্ঠীর মহিলারা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে গোষ্ঠীগুলি চালাতে পারছি। তাই করোনাকালেও সংসার চালাতে গিয়ে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না।