টোকিও অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে কে কোন ইভেন্টে পদক জিতলেন দেখে নিন
অলিম্পিক্সের ইতিহাস তৈরি করল ভারত। সর্বাধিক সাতটি মেডেল টোকিও অলিম্পিক্স থেকে অর্জন করল ভারত। এখনও পর্যন্ত ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক্সে সর্বাধিক পদক জিতেছিল ভারত। সেই বছরে মোট ৬টি পদক জিতেছিল ইন্ডিয়া, এবার সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে গেলেন নীরজ চোপড়া, বজরং পুনিয়ারা। শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৫টি পদক জিতেছিল ভারত, শনিবার শেষ হতে না হতেই অলিম্পিক্সে সর্বাধিক সাতটি পদক জিতল ভারত। তবে চলতি অলিম্পিক্সে সর্বাধিক ১৮টি ইভেন্টে মোট ১২৪ জন ক্রীড়াবিদকে পাঠিয়েছিল ইন্ডিয়া। যেই তালিকায় ছিলেন ৭০জন পুরুষ ও ৫৪জন মহিলা। তবে তার মধ্যে ভারোত্তলন, হকি, বক্সিং, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি ও জ্যাভলিন, মাত্র ছটি ইভেন্ট থেকে মোট সাতটি পদক জিতল ভারত। দেখে নিন ভারতের কোন প্রতিযোগী কোন বিভাগ থেকে কোন পদক জিতলেন।
জ্যাভলিন: নীরজ চোপড়া (সোনা)
অলিম্পিক্সের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ঐতিহাসিক সোনা জয় করলেন নীরজ চোপড়া। জ্যাভেলিন থ্রো থেকে ভারতে এল অ্যাথলেটিক্সের প্রথম পদক। কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে এক নম্বরে থেকে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেন ভারতীয় তারকা। ৭ই অগস্ট নিজের সোনার পদক নিশ্চিত করেন নীরজ চোপড়া। শনিবার ফাইনালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ৮৭.৫৮ মিটার ছুড়ে পদক জিতলেন তিনি। এর আগে অ্যাথলেটিক্সে ভারত সোনা তো দূর, কোনও পদকই জেতেনি। সেই আক্ষেপ মিটিয়ে দিলেন নীরজ। ব্যক্তিগত বিভাগে মাত্র একটি সোনা ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সে শুটিংয়ে জিতেছিলেন অভিনব বিন্দ্রা। দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতলেন নীরজ চোপড়া।
ভারোত্তলন: মীরাবাঈ চানু (রুপো)
চলতি অলিম্পিক্সে মীরাবাঈ চানুর হাত ধরে টোকিও অলিম্পিক্সে প্রথম পদক জিতেছিল ভারত। মহিলাদের ৪৯ কেজি বিভাগে রুপো জিতেছিলেন মীরাবাঈ চানু। স্ন্যাচে প্রথম প্রচেষ্টায় ৮৪ ও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় তিনি ৮৭ কেজি ভারোত্তলন করেন তিনি। তৃতীয় প্রচেষ্টায় ৮৯ কেজির জন্য ঝাঁপিয়েছিলেন। যদিও সফল হননি। স্ন্যাচে ৮৪ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১০, মোট ১৯৪ কেজি ভারোত্তলন করে ব্রোঞ্জ জেতেন ইন্দোনেশিয়ার উইন্ডি আইসা। ফলে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন মীরাবাঈ চানু।
কুস্তি: রবি কুমার দাহিয়া (রুপো)
ফ্রি-স্টাইল কুস্তির ৫৭ কেজি বিভাগের ফাইনালে পরাজিত হলেন রবি। গোল্ড মেডেল বাউটে দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জাভুর উগুয়েভের কাছে ৪-৭ ব্যবধানে হার মানেন ভারতীয় তারকা। তবে এ দিন ম্যাচ হারলেও অলিম্পিক্সে ৫৭ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগে রুপো জিতেছেন রবি কুমার দাহিয়া।
ব্যাডমিন্টন: পিভি সিন্ধু (ব্রোঞ্জ)
রিও অলিম্পিক্সে রুপোর পদক জিতলেও টোকিওয় ফাইনালে উঠতে পারেননি পিভি সিন্ধু। ফলে এবার ব্যাডমিন্টনের ওমেনস সিঙ্গলসে সোনা বা রুপো জয়ের সম্ভাবনা আগেই শেষ হয়ে যায় পুসারলার। যদিও ব্রোঞ্জ জয়ের সুযোগটাকে কাজে লাগাতে মরিয়া ছিলেন ভারতীয় তারকা। ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচে সিন্ধুর প্রতিপক্ষ ছিলেন চিনের হি বিংজিয়াও। ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচে ৫৩ মিনিটের লড়াইয়ে তিনি ২১-১৩, ২১-১৫ স্ট্রেট গেমে পরাজিত করেন বিংজিয়াওকে এবং ব্রোঞ্জ পদক গলায় ঝোলান।
বক্সিং: লভলিনা বড়গোহাঁই (ব্রোঞ্জ)
বিশ্বচ্যাম্পিয়নের কাছে হেরে ব্রোঞ্জ পদকেই সন্তুষ্ট থাকতে হল ভারতের লভলিনা বড়গোহাঁইকে। মেয়েদের বক্সিংয়ের ওয়েল্টারওয়েট (৬৪-৬৯ কেজি) বিভাগের সেমিফাইনালে তুরস্কের বুসেনাজ সুরমেনেলির কাছে ০-৫ ব্যবধানে পরাজিত হলেন ভারতীয় বক্সার। ব্রোঞ্জ পদক গলায় ঝুয়িলেই টোকিও অলিম্পিক্সকে বিদায় জানালেন লভলিনা বড়গোহাঁই।
হকি: পুরুষ দল (ব্রোঞ্জ)
৪১ বছর পরে ফের অলিম্পিক্সে পদক জিতল ভারতের হকি দল। ৫ই অগস্ট বৃহস্পতিবার টোকিও অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতল শ্রীজেশরা। হার না মানা মানসিকতার সৌজন্যে অলিম্পিক্সে ৪১ বছরের পদক খরা কাটল ভারতের। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দেড় মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল খেয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে এল ভারত। সাত মিনিটের ব্যবধানে চারটি গোল করে পুরোপুরি খেলা ঘুরিয়ে দিলেন মনপ্রীত সিংরা। অবশেষে ৪১ বছর পরে অলিম্পিক্সে পদক জেতে ভারতীয় হকি দল। এদিন ব্রোঞ্জ পদক জেতে ভারতের পুরুষ হকি দল।
কুস্তি: বজরং পুনিয়া (ব্রোঞ্জ)
টোকিও অলিম্পিক্সের কুস্তিতে ভারতের অন্যতম পদক সম্ভাবনা ছিলেন বজরং পুনিয়া। সেই সম্ভাবনাকে তিনি বাস্তবে রূপ দিলেন শেষমেশ। ছেলেদের ফ্রি-স্টাইল কুস্তির ৬৫ কেজি বিভাগের সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় সোনা ও রুপোর দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন আগেই। তবে ব্রোঞ্জ জিতে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করলেন বজরং পুনিয়া
১৩০ কোটির দেশে ১৮টি ইভেন্টে মোট ১২৪ জন ক্রীড়াবিদের থেকে সাতটি পদক জিতে অলিম্পিক্সে নতুন স্বপ্ন দেখতে চাইছে ভারত। কারণ এই প্রথম কোনও অলিম্পিক্স থেকে সর্বাধিক ৭টি পদক জিতল ভারত। প্যারিস অলিম্পিক্সে যেন পদকের এই সংখ্যা যেন সকলকে ছাপিয়ে যায় এটাই আশা রইল।