বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

ভাগ্য অনিশ্চিত শপিং মলের ৫০ হাজার কর্মীর

May 8, 2020 | 3 min read

দীর্ঘ লকডাউনে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজ্যের শপিং মলগুলি। শুধু তাই নয়, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে বা শীঘ্রই শপিং মল খোলা না হলে কাজ হারাতে পারেন প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত প্রায় ৫০ হাজার কর্মী।

এর মধ্যেই ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙা করতে রাজ্যের গ্রিন ও অরেঞ্জ জোনগুলিতে দোকানপাট খোলায় অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। ভিড় এলাকার বাইরের দোকান খোলায় আপাতত ছাড়পত্র মিলেছে। খুলেছে মদের দোকানও। কিন্তু, শপিং মল খোলায় এখনও অনুমোদন দেয়নি রাজ্য সরকার। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্যের শপিং মলগুলির কর্তারা।

এ প্রসঙ্গে মার্লিন গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা অ্যাক্রোপলিস মলের কর্ণধার সুশীল মোহতা বলেন, ‘দোকান মালিকরা ভাড়া দেওয়া বন্ধ করেছে। এমনকি কমন এরিয়ার মেইন্টেন্যান্স চার্জও পাচ্ছি না। অথচ, ব্যাঙ্কতো ইএমআই নেওয়া বন্ধ করবে না। যদিও এখন তিন মাসের মোরাটোরিয়াম রয়েছে। কিন্তু, তিন মাস পরে তো দিতে হবেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মালিকরা ভাড়া দিতে শুরু করবে আশা করাও অন্যায়। কারণ তাদেরও স্টক মজুত পরে রয়েছে। বিক্রিও বন্ধ।’

ভাগ্য অনিশ্চিত শপিং মলের ৫০ হাজার কর্মীর

রাজ্য সরকারের কাছে বিদ্যুতের ফিক্সড ডিমান্ড, কর্পোরেশন ট্যাক্স সমেত একাধিক ক্ষেত্রে সাময়িক ছাড় চেয়েছে মল মালিকরা। শপিং মল খোলার আগে এবং পরে কী ধরনের বিধিনিষেধ মানা হবে সে বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরি করেছে শপিং মলগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন শপিং সেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এসসিএআই)। রাজ্য সরকারের কাছে ওই এসওপি পেশ করা হয়েছে। সুশীলের কথায়, ‘শপিং মলগুলি অনেক সংগঠিত এবং এখানকার কর্মীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বর্তমানে, শপিং মলের ভিতরের ওষুধের দোকান, মুদিখানার দোকান খোলা রয়েছে। শপিং মলের দোকানগুলিতে আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ। রাজ্য সরকারের জিএসটি বাবদ আয় আসবে।’

কলকাতা ও সন্নিহিত এলাকায় মোট ১০-১২টি শপিং মল রয়েছে। মল মালিকের সংখ্যা ৫-৬জন। দমদম নাগেরবাজার থেকে শুরু করে সাউথ সিটি এবং হাওড়ার দু’টি মল মিলিয়ে এর মোট আয়তন প্রায় ৫০ লক্ষ বর্গফুট, জানান ফোরাম মলের নির্মাতা সংস্থা ফোরাম প্রোজেক্টস-এর কর্ণধার রাহুল সরাফ। রাজ্যের পক্ষে এই মল মালিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে তা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হবে বলেই মনে করেন তিনি।

তাঁর কথায়, ‘রাজ্য সরকার গড়িয়াহাট মার্কেট বা নিউ মার্কেট খুলতে গেলে যে সমস্যা হবে, শপিং মলের ক্ষেত্রে তা হবে না। কারণ, শপিং মলগুলি অনেক বেশি সংগঠিত এবং উন্নত প্রক্রিয়ায় কাজ করে।’ শপিং মলগুলির দোকানগুলিতে প্রতি বর্গফুটে কমপক্ষে ৩,০০০ টাকার পণ্য মজুত রয়েছে। সেই হিসাবে সমস্ত প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার পণ্য অবিক্রিত পড়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দোকান মালিকদের বিপুল অঙ্কের মূলধন আটকে রয়েছে। আয় বন্ধ হওয়ায় তারাও বিপাকে পড়েছে। একদিকে তাদের ঋণের বোঝা বাড়ছে। অন্যদিকে, মল মালিকদেরও বিপুল ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্টোর ম্যানেজার থেকে শুরু করে জুনিয়ার অফিসার, সেলস বয়/গার্ল, সিকিওরিটি, সুপারভাইজার প্রতিটি কর্মীকে মার্চ পর্যন্ত বেতন দেওয়া গিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বেতন দেওয়ার সম্ভাবনাও কমবে। এর ফলে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার কর্মীর চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যার একটা বড় অংশের বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে, রাহুল জানান।

তাঁর চাপা অনুযোগ, ‘মদের দোকান খোলার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কর্মীদের সেখানে লাগানো হয়েছে। তেমন হলে মলগুলি করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে যাবতীয় বিধিনিষেধ এবং এসওপি মেনে চলছে কি না তা দেখার জন্য মল পিছু ৫-৬ জন পুলিশ নিয়োগ করতে পারে।’ কতদিন এই যন্ত্রণা বয়ে চলতে হবে সেটাই এখন তাঁর প্রশ্ন।

ইতিমধ্যেই কারখানাগুলিতে, বিশেষ করে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিতে উৎপাদন শুরুর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করতে গেলে ক্রেতাচাহিদা বাড়াতে হবে এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে, অভিমত রাহুলের।

যদিও এ বিষয়ে একটু আলাদা দৃষ্টিভঙ্গী মনি গোষ্ঠীর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালার। তিনি বলেন, ‘আর পাঁচটা শিল্প ক্ষেত্রের মতো শপিং মলগুলিও বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তুত। কিন্তু, তার আগে মানু্ষের মনে বিশ্বব্যাপী এই মহামারী নিয়ে যে ভীতির জন্ম হয়েছে তা কমা দরকার। আগে যতটা স্বাভাবিক হয়ে মানুষ শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসতেন এখন সেই স্বাভাবিকতা থাকবে না। তা ছাড়া মদের দোকান খোলার পর কী অবস্থা হয়েছে তা দেখাই যাচ্ছে। সেখানে শপিং মলগুলি যতই এসওপি নিক না কেন, একসঙ্গে ২০০-৩০০ দোকান খুললে এবং ২,০০০-৩,০০০ গ্রাহক উপস্থিত হলে তাঁরা আদৌ কতটা শৃঙ্খলা মেনে চলবেন সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Lockdown, #jobloss, #shopping mall employees

আরো দেখুন