আলিপুরদুয়ারের উন্নয়ন: পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মোদীকে জবাব মমতার
আলিপুরদুয়ারের উন্নয়ন: পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মোদীকে জবাব মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:০০: আলিপুরদুয়ারে বিজেপির “পরির্বতন সংকল্প সভা” থেকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে একের পর এক অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে প্রাথমিকভাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করার পর লিখিতভাবে প্রত্যেকটি অভিযোগ খণ্ডন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ভাবে আলিপুরদুয়ার জেলার উন্নয়ন করেছে রাজ্য সরকার, তার তথ্য দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দুয়ারে প্রশাসন:
প্রশাসনিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে তথা মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনকে পৌঁছে দিতে ২০১৪ সালের জুন মাসে আলিপুরদুয়ারকে বাংলার ২০তম জেলা হিসেবে গঠন করা হয়। গঠন হওয়ার সময় থেকে উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতিসাধন করা হয়েছে, যার জেরে জেলার প্রত্যেক নাগরিক অন্তত একটি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করেছেন।
পরিকাঠামোগত উন্নয়ন:
পরিকাঠামোগতভাবে জেলার অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলার প্রশাসনিক ভবন “ডুয়ার্স কন্যা”র তৈরি হওয়া। এর সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নতিসাধন করা হয়েছে, যেমন:
- স্বাস্থ্য: ফালাকাটায় তৈরি হয়েছে মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, একটি আয়ুষ হাসপাতাল, নার্সিং স্কুল, দুটি SNCU, ৭টি SNSU, ৩টি ব্লাড ব্যাংক এবং ২০৭টি ওয়েলনেস সেন্টার।
- শিক্ষা: আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৭টি নতুন সরকারি কলেজ, ১৫টি প্রাইমারি স্কুল, ৫২টি আপার প্রাইমারি স্কুল এবং ১৫টি ছাত্রাবাস তৈরি করা হয়েছে।
- জনগণের সুবিধা: ৬টি কিষাণ মান্ডি, ৩টি সুফল বাংলা স্টল, ৮টি কর্মতীর্থ, ৫৬০টি অঙ্গনওয়াড়ি, ৮টি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, নতুন ফালাকাটা সুপার মার্কেট, একটি নতুন স্টেডিয়াম, একটি মহিলা থানা, এবং ৬০টি বাংলা সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: টিভি চ্যানেলে আমার সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে বসুন, মোদীকে চ্যালেঞ্জ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা:
আলিপুরদুয়ারের মানুষকে বিভিন্ন সরকারি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- লক্ষ্মীর ভাণ্ডার: ৩.৫৭ লক্ষ মানুষ
- কন্যাশ্রী: ৫.৭২ লক্ষ মানুষ
- খাদ্যসাথী: ১২.৯১ লক্ষ মানুষ
- সবুজ সাথী: ২.৫৪ লক্ষ মানুষ
- রূপশ্রী: ৪৬,০০০ মানুষ
- স্বাস্থ্য সাথী: ৪ লক্ষের অধিক মানুষ
- শিক্ষাশ্রী: ৩.১০ লক্ষ মানুষ
- ঐক্যশ্রী: ২.০৫ লক্ষ মানুষ
- তরুণের স্বপ্নের অধীনে ট্যাব: ৬৩ হাজার মানুষ
- জয় জোহর পেনশন: ১৫,৩৯৬ মানুষ
- তফসিলি বন্ধু পেনশন: ২৯,৪৮৬ মানুষ
- কৃষক বন্ধু (নতুন): ৯৫,০০০ মানুষ
- বাংলার শস্য বীমা: ১.১৮ লক্ষ মানুষ
- বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা: ২.৭৫ লক্ষ মানুষ
পাট্টা বিতরণ:
- ১৭,০৭২ জমি পাট্টা, ১২,১৬৪ উদ্বাস্তু পাট্টা, ৬,৩৯৭ বন পাট্টা এবং ১,১২৭ চা সুন্দরী পাট্টা সহ রাজ্য সরকার মোট ৩৭,০০০ পাট্টা বিতরণ করেছে।
উন্নয়নমূলক প্রকল্প:
- জলস্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় ৩.৬৫ লক্ষ বাড়ির মধ্যে ২.১১ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে গিয়েছে।
- বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অধীনে ৪৫,৫১১ পরিবার গৃহ নির্মাণের জন্য ৫৪৬.১৩ কোটি টাকা পেয়েছে।
- কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে ২.৮৪ লক্ষ মানুষের জন্য ১.২৮ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে, ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন:
- পথশ্রী প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ সড়ক সহ ৪,২৬৬ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা।
- ১৫০ কোটি টাকারও বেশি টাকা ব্যয়ে ৪৫টি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বালা, বসরা, দিমা, বুড়িতোর্সা, কুমাই এবং আরও অনেক নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
- আলিপুরদুয়ারে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে।
চা বাগান ও চা শ্রমিকদের উন্নয়ন:
- ৮টি বন্ধ হওয়া বাগান রাজ্য সরকার পুনরায় চালু করেছে।
- আলিপুরদুয়ারের ৬১টি চা বাগানে শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হয়েছে। যা ভারতে সর্বোচ্চ। বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় এবং বিনামূল্যে রেশন, পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হয়। মহিলা শ্রমিকদের সুবিধার জন্য ক্রেসও তৈরি করা হয়েছে।
- চা সুন্দরী প্রকল্পের আওতায় ২,৯৬৯টি পরিবারের জন্য ঘর তৈরি হয়েছে, আরও ১৪,০০০ পরিবার বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।
শিল্প:
- জোড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হচ্ছে। ১৪,১০৫টি এমএসএমই ইউনিট তৈরি হয়েছে। যার মাধ্যমে ৩৮,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
পর্যটন:
- চা পর্যটন প্রকল্প এবং দুটি ধর্মীয় পর্যটন সার্কিটের মাধ্যমে এখানকার পর্যটনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যে হোম স্টে গুলি (৭৪টি রেজিস্টারড) আছে সেখানে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে।
রাজবংশী ও কামতাপুরী উন্নয়ন:
- বাংলার রাজবংশী ও কামতাপুরীকে (বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া) আমরা সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছি। তাই এখন আমাদের ১৩টি ভাষা সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। এগুলি হল – সাঁওতালি, কুরুখ, কুর্মালি, রাজবংশী, কামতাপুরী, পাঞ্জাবি, নেপালি, উর্দু, হিন্দি, ওড়িয়া, তেলেগু।
- উত্তরবঙ্গের মানুষের সংস্কৃতিকে প্রচার করার জন্য উন্নয়ন বোর্ড এবং একাডেমি গঠন করা হয়েছে।
- ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, এবং তার সংস্কার করা বাড়িটি এখন একটি জাদুঘর।
- প্রায় ২০০ রাজবংশী স্কুলকে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
- ১০০টি সাদরি ভাষার স্কুল খোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সিলেবাস তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
- রাজ্য পুলিশে নারায়ণী ব্যাটালিয়ন (সদর দপ্তর – মেখলিগঞ্জ) গঠন করা হয়েছে।
- বাবুরহাটে মহাবীর চিলা রায়ের ১৫ ফুট উঁচু একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
আদিবাসী উন্নয়ন:
- সারনা/সারি ধর্মের স্বীকৃতির জন্য একটি বিল পাস করা হয়েছে।
- আদবাসীদের জমি অন্যদের কাছে যারা আদবাসী নন এমন কারও কাছে হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- বনাঞ্চলের পাট্টা বিতরণ করা হচ্ছে।
- বিরসা মুন্ডা এবং পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিন এবং হুল দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং পবিত্র করম পুজোয় রাজ্যে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
- ৩ লক্ষেরও বেশি আদিবাসী মানুষ ‘জয় জোহর’ (old age pension) ভাতা পান।
- সাঁওতালি ভাষার বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কলেজগুলিতে সাঁওতালি ভাষায় ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়েছে।
- জহর থান এবং মাঝি থানগুলির উন্নয়ন করা হয়েছে।
- আদিবাসী শিল্পীদের ধামসা মাদল বিতরণ করা হচ্ছে।
সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, আলিপুরদুয়ারের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমাদের নেওয়া উদ্যোগগুলির মধ্যে এগুলো কয়েকটি। আমরা সর্বদা বাংলার মানুষের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি, তাই তারা আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা ধর্ম, বর্ণ বা সংকীর্ণ মানসিকতার ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করি না। আমরা সবসময় জনগণের জন্য কাজ করি, সর্বদা তাদের পাশে থাকি।