বাম জমানায় ধুঁকতে থাকা ‘মঞ্জুষা’ লাভ এনে দিচ্ছে রাজ্য সরকারের কোষাগারে

১৯৭৬ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের হাত ধরে দিনের আলো দেখেছিল মঞ্জুষা।

March 1, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

 বাম জমানায় ধুঁকতে থাকা সংস্থা। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আর চালানো যাবে না। তুলেই দেওয়া হবে ‘মঞ্জুষা’। মাঝে দশটা বছর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে সেই মঞ্জুষাই রাজ্য সরকারের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে মুনাফার টাকা। লোকসানের বেড়াজাল ভেঙে লাভে ফেরা? ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ থেকেই। 


১৯৭৬ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের হাত ধরে দিনের আলো দেখেছিল মঞ্জুষা। প্রায় অর্ধশতাব্দী… লাভের মুখ দেখেনি সংস্থাটি। বছরের পর বছর লোকসানে চলায় রাজ্যের হস্তশিল্প নিগম পরিচালিত মঞ্জুষার ক্ষতির বহর বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ কোটি টাকায়। ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের ঘাটতি মিটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। শেষ ছ’বছরে অর্থাৎ ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষ থেকে লাভের মুখ দেখলেও রাজ্যের কোষাগারে ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ তুলে দিতে পারেনি মঞ্জুষা। কারণ, আর্থিক ক্ষতি না মেটালে ডিভিডেন্ড দেওয়া যায় না। ২৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি মিটিয়ে চলতি বছর প্রথমবার রাজ্যের কোষাগারে মুনাফার ভাগ দিল তারা। 


২০১০-’১১ সালে প্রাইস ওয়াটার হাউসকে দিয়ে অডিট করিয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। তাদের বক্তব্য ছিল, এই সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল। ফলে সব সম্পত্তি বেচে, সেই টাকায় কর্মীদের স্বেচ্ছা অবসর দিয়ে মঞ্জুষা বন্ধ করে দেওয়া হোক। তারই তোড়জোড় শুরু করে বাম সরকার। তখনই বন্ধ করে দেওয়া হয় চর্মজ, তন্তুশ্রী। আতান্তরে পড়ে যান প্রায় ২৫১ জন কর্মচারী। তবে মঞ্জুষার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই পালাবদল হয় রাজ্যে। হস্তশিল্পীদের কথা মাথায় রেখেই বিষয়টিকে সহানুভুতির সঙ্গে দেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন সরকারের নীতির উপর ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় মঞ্জুষা। বাম আমলে প্রতি মাসে রাজ্যকে প্রায় দু’কোটি টাকা দিতে হতো এই সংস্থার কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য। আর উল্টো ছবি ২০১৭-১৮ থেকে। রাজ্যের আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজনই পড়েনি মঞ্জুষার। বরং লোকসান মিটিয়ে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সংস্থার হাতে রয়েছে ছ’কোটি টাকা। তার মধ্যে রাজ্যকে ডিভিডেন্ড দেওয়ার জন্য প্রায় এক কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে অর্থদপ্তর। নির্দিষ্ট অঙ্কটা হল, ৯৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। বাকি ৫ কোটি টাকা ব্যবহার হবে আগামী অর্থবর্ষে মঞ্জুষার মাধ্যমে হস্তশিল্পের উন্নয়ন প্রকল্পে।

ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত ছাড়পত্রের বিষয়টি নিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি পেয়েছে মঞ্জুষা। শুধু রাজ্যকে ডিভিডেন্ড দেওয়াই নয়, চলতি আর্থিক বছরে তারা রেকর্ড ৫.৫ লক্ষ কর্মদিবসও সৃষ্টি করেছে। সংস্থাটিকে দাঁড় করাতে নিজেদের শো-রুমের পাশাপাশি পাইকারি বাজার ও ই-কমার্সের মাধ্যমে হস্তশিল্পীদের তৈরি সামগ্রী বিক্রি শুরু হয়। যেখানে ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে লোকসান হয়েছিল প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা, সেখানে ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে সংস্থা লেনদেন করেছে ১৬৪.৫০ কোটি টাকা। আর লাভ হয়েছে প্রায় ১০.৩৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মঞ্জুষা ৪.১৮ কোটি টাকার লাভের মুখ দেখেছে বলে অর্থদপ্তর সূত্রে খবর। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এবং বস্ত্রশিল্প দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রীর অার্থিক নীতিই মঞ্জুষাকে আজ উন্নয়নের এই স্তরে নিয়ে এসেছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen