শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত কলকাতা
‘পরীক্ষা দিয়ে কলকাতায় যাই। সভা–সমাবেশে যোগদান করি। আবার পড়তে শুরু করলাম। পাস তো আমার করতে হবে। শহীদ সাহেবের (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) কাছে এখন প্রায়ই যাই।… এই বৎসর আমি দ্বিতীয় বিভাগে পাস করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে বেকার হোস্টেল থাকতাম।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে কলকাতার বেকার হোস্টেলে ওঠার বর্ণনা এসেছে এভাবে। বইয়ের নানা জায়গায় এই হোস্টেলের বর্ণনা এসেছে ঘুরেফিরে। সেই বর্ণনায় এক তরুণ মুজিবের ক্রমেই রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার নানা প্রমাণ মেলে।
কলকাতার তালতলা থানার বেকার হোস্টেল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে। ৮ স্মিথ লেনের এই হোস্টেলে থেকে বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। এখন ইসলামিয়া কলেজ হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। বেকার হোস্টেল সরকারি হোস্টেল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মুসলিম ছাত্রদের কলকাতায় এসে পড়াশোনা করার জন্য এটি তৈরি হয়েছিল।
১৯৪১ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় এই বেকার হোস্টেলে ছিলেন। তিনি ছিলেন ২৪ নম্বর কক্ষে। ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এখনও কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের বোর্ডে নাম রয়েছে বঙ্গবন্ধুর।
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে গড়া হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ। এই স্মৃতিকক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল ও আলমারি। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এই ভাস্কর্যের বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩ আগস্ট এই ভাস্কর্যকে পরিবর্তন করে নতুন একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। সেই ভাস্কর্যটি বানিয়েছিলেন ঢাকার শিল্পী লিটন পাল।
তরুণ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে কলকাতায়। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্নগুলো এখনও সগর্বে টিকে আছে এই শহরে।
(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো)