বাড়ি বসে দেখে নিন কিছু কালজয়ী বাংলা সিনেমা
করোনার আতঙ্কে লকডাউন, লকডাউনের ফলস্বরূপ গৃহবন্দী দশা। অনেকেই হাঁপিয়ে উঠছেন। সারাদিন ফোন, ফেসবুক আর কখনো সখনো টেলিভিশনের পর্দায় নিউজ চ্যানেল দেখে করোনাতঙ্ককে আরেকটু বাড়িয়ে নেওয়া। কিন্তু এভাবে কি আর সময় কাটে? আর এত সবে কাটলো ক’টা দিন মাত্র।
এপ্রিলের ১৪ তারিখ আসতে এখনো ঢের দেরী। এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে বাংলা সিনেমার স্বর্ণ যুগে একবার উঁকি দিয়ে দেখলে হয় না! উত্তম সুচিত্রা তো আছেনই আর কিংবদন্তী পরিচালকদের নামের ওজন নেহাত কম না। বিশ্ব বরেণ্য সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত স্বমহিমায় বিরাজ করেছেন ওই স্বর্ণ যুগে। চলুন বেছে নেওয়া যাক পাঁচটি উজ্জ্বল রত্নকে-
পথের পাঁচালিঃ
বাংলা সিনেমা যতদিন থাকবে ততদিনই প্রাসঙ্গিক থাকবে সত্যজিৎ রায়ের এই ছবিটি। বিভূতি ভূষন বন্দোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাসকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় যেন সিনেমার পর্দায় ছবি একেছিলেন। প্রতিটি চরিত্রের সাথে মানানসই কাস্টিং এবং অনবদ্য চিত্রগ্রহন সিনেমাটিকে অমর করে রেখেছে। কাশবনের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে অপু দুর্গার জীবনে প্রথম রেলগাড়ি দর্শনের দৃশ্যটি খুব সম্ভবত বাংলা সিনেমার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ দৃশ্য।
গল্প হলেও সত্যিঃ
তপন সিংহের পরিচালনায় সাতের দশকে এই সিনেমাটি আজও সমান জনপ্রিয়। একটি যৌথ পরিবারে দৈনন্দিন কাজের অশান্তি নিবারণ করতে আবির্ভাব হয় রাঁধুনি কাম চাকর ধনঞ্জয়ের। সে পারেনা এমন কোন কাজ নেই রান্না বান্না করা, কাপড় কাচা , গানের সুর করা সব জানে সে । ধনঞ্জয়ের চরিত্রটিকে অমর করে গেছেন অভিনেতা রবি ঘোষ।
হারানো সুরঃ
অনেকেরই মতে উত্তম-সুচিত্রা জুটির সেরা ছবি হারানো সুর। একটি ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট এর পরে নায়ক স্মৃতি লোপ পাওয়া এবং লেডি ডাক্তার সুচিত্রা সেনের সুচিকিৎসায় সুস্থ হয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়া এবং তার পরবর্তী পট পরিবর্তনের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই সিনেমাটি। কালজয়ী এই সিনেমার পরিচালক ছিলেন অজয় কর। সুচিত্রার লিপে “তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার” গানটি শোনেননি এমন বাঙালি বিরল।
মেঘে ঢাকা তারাঃ
১৯৬০ সালে মুক্তি পেয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা কলকাতার জনারন্যে ঠাঁই নেওয়া একটি পরিবারের কাহিনী নিয়ে ঋত্বিক ঘটকের ছবি মেঘে ঢাকা তারা। এই ছবিতে নীতার ভূমিকায় সুপ্রিয়া দেবী তাঁর জীবনের সেরা পারফরম্যান্সটি করে গেছেন। নীতার দাদা শঙ্করের চরিত্রে অনিল চট্টোপাধ্যায়-ও ছিলেন অনবদ্য। ছবির শেষে বেঁচে থাকার তাড়না নিয়ে নীতার আর্তি ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই’ এখনো মনের সূক্ষ অনুভূতিকে প্রবল ভাবে নাড়া দিয়ে যায়।
ধন্যি মেয়েঃ
সিরিয়াস ছবি দেখে মন ভার হয়ে গেলে দেখে নিতে পারেন পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ধন্যি মেয়ে। উত্তম কুমার, জয়া ভাদুরী, জহর রায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যাইয়-এর অভিনীত এই ছবিটির পরত্র পরত্র সূক্ষ হাস্যরস নিহীত আছে। বাঙালির প্রিয় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে হাড়ভাঙা গ্রাম এবং সর্বমঙ্গলা স্পোর্টিং ক্লাবের শিল্ডের লড়াই মোড় নেয় বগলা- মনসার অর্থাৎ জয়া ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিয়েতে।