কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

শুক্রবার মমতার দলীয় বৈঠক

June 28, 2020 | 2 min read

এ বার ২১ জুলাই ধর্মতলায় অন্যান্য বারের মতো জমায়েত সম্ভব নয় বলে শুক্রবারই জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বিকল্প পথে দল কী ভাবে শহিদ দিবস পালন করবে, তা আগামী ৩, শুক্রবার জুলাই ঘোষণা করা হতে পারে। ওই দিন বিকেল ৪টেয় দলের সাংসদ-বিধায়ক-জেলা সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠক করার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের অনেকেই মনে করছেন ত্রাণ-দুর্নীতি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থতিতে ৩ তারিখের বৈঠকে শৃঙ্খলার প্রশ্নে কঠোর বার্তা দিতে পারেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নবান্নে গত বুধবার, ২৪ জুন সর্বদল বৈঠকের পর ৩ জুলাই দলের সঙ্গে মমতার প্রথম বৈঠক। তাই, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে কথাগুলো সে দিন তিনি নবান্ন সভাঘরে বলেছিলেন, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে সেগুলো তিনি নিজের দলের কাছে ৩ তারিখের বৈঠকে স্পষ্ট করে দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিটি বছরের ২১ জুলাই তৃণমূলের কাছে সমান মর্যাদার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বারও ২১ জুলাই কলকাতায় সেই চেনা ভিড়ের ছবিটা দেখা যেত বলে দলের নেতাদের বক্তব্য। কিন্তু করোনা পরিস্থতিতে জমায়েতের কোনও প্রশ্ন না-থাকায় সোশ্যাল মিডিয়াতেই তৃণমূলের তরফে বিকল্প ব্যবস্থা করা হতে পারে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। খোলা মঞ্চ হোক বা সোশ্যাল মিডিয়া, তৃণমূল নেত্রীর বক্তৃতা তাঁর দলের কর্মীদের একই ভাবে উদ্বুদ্ধ করে। তাই, এ বার ২১ জুলাইয়ের সেই বক্তৃতা কখন, কী ভাবে শোনা যাবে, তা জানতে মুখিয়ে তাঁর অনুগামীরা।

দলীয় নেতৃত্বের একাংশের অনুমান, ৩ তারিখের বৈঠকে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যের অনেকটা জুড়ে থাকতে পারে অনুশাসন-বার্তা। সদ্য তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা সভাপতিদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, উম্পুন ত্রাণ, রেশন বন্টন বা সরকারি প্রকল্পে দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ এলে দ্রুত তদন্ত করে রাজ্য নেতৃত্বকে তা জানাতে হবে। গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শক্রমে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। গত কয়েক দিনে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত প্রধান, সাধারণ পঞ্চায়েত সদস্যর মতো পদাধিকারীদের বহিষ্কার করে ‘শুদ্ধকরণ’ বার্তাও দেওয়া হয়েছে দলের তরফে।

শুক্রবার মমতার দলীয় বৈঠক

কিন্তু শাসক শিবিরে গত কয়েক সপ্তাহের তৎপরতা থেকে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, নিচু তলায় স্বজনপোষণের ঝোঁক যাতে সংক্রমিত না-হয়, তা সুনিশ্চিত করতে শোকজ ও বহিষ্কারের আরও কিছু নজির আগামী কয়েক দিনে রাখা হতে পারে। রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসক ও শাসকদলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতির প্রশ্নে যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছেন, তার প্রতিফলন প্রশাসন ও শাসকদল, দু’জায়গাতেই পড়তে শুরু করেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি।

তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই তাঁর কঠোর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, গরিব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছতেই হবে। তাঁর নির্দেশের পর আর কার কী বলার থাকতে পারে!’

মূলত দুই ২৪ পরগনায় উম্পুন-ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বেশি। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য প্রায় একই রকম। তাঁরা বলছেন, ‘আম্পান ত্রাণে দলের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্গত মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের দিয়ে বিক্ষোভ করানোর চেষ্টা হচ্ছে।’

তবে প্রায়শই এই ধরনের বিক্ষোভ ঘটতে থাকলে ঘা খেতে পারে শাসকদলের ভাবমূর্তি। যা গত লোকসভা ভোটের পর ‘দিদি’র নামে ভরসা করেই ফেরাতে হয়েছিল তৃণমূলকে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে একেবারে নিচু তলায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে শাসক নেতাদের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা ঘোচাতে ‘দিদি’ নামটাই ছিল দলের সম্বল। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে জনতা যে অভাব অভিযোগ জানিয়েছিল, তার বিহিত করতে নিরন্তর পরিশ্রম চালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পর্বেই জঙ্গলমহল-সহ রাজ্যের বহু জায়গায় দলের অন্দরে চিহ্ণিত করা হয়েছিল এমন নেতাদের, যাঁরা তাঁর সরকারের ভালো কাজে জল ঢেলে দিচ্ছিলেন। আম্পান-পরবর্তী পরিস্থতিতে সেই ছবির পুনরাবৃত্তি রুখতে এ বারও নিজে আসরে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tmc, #Mamata Banerjee

আরো দেখুন