জি এস টি আদায়ে শীর্ষে বাংলা
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দৌড়ে বিজেপি শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যকে টেক্কা দিল পশ্চিমবঙ্গ। ‘কথা কম, কাজ বেশি’—এই নীতিতে কোষাগারে আয় বাড়িয়ে নজির গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আনলক পর্বে তাঁর সুদৃঢ় কিছু পদক্ষেপেই বাংলার এই সাফল্য। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) সংগ্রহ। অর্থদপ্তরের হিসেব বলছে, শুধু জুন মাসে জিএসটি বাবদ রাজ্যের কোষাগারে ঢুকেছে ৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। বাংলার কাছে পিছিয়ে পড়েছে শিল্পসমৃদ্ধ হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড কিংবা তামিলনাড়ু সহ একাধিক রাজ্য। শতাংশের হিসেবে তাদের প্রাপ্ত পয়েন্ট মাইনাসের ঘরে।
আনলক পর্বে বেসামাল অর্থনীতিকে অনুকূলে টানতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কন্টেইনমেন্ট জোন ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের রাশ আলগা করে দিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই মিলেছে হাতে গরম সাফল্য। জুন মাসে জিএসটি বাবদ এসেছে ৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে রয়েছে রাজ্যের প্রাপ্য এসজিএসটি এবং আইজিএসটি বাবদ ১ হাজার ৬৩০ কোটি। এপ্রিলে এই দুই ক্ষেত্রে কোষাগারে জমা পড়েছিল ৪০০ কোটি টাকা। আর মে মাসে জমা পড়ে ১ হাজার ১০০ কোটি। তবে ২০১৯ সালের জুনে জিএসটি বাবদ রাজ্যের আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৫১৪ কোটি। অর্থাৎ ২০২০ সালের জুন মাসের প্রাপ্ত আয়ের নিরিখে ৩৮৬ কোটি কম। তা হলে কেন এত উচ্ছ্বাস?
অর্থদপ্তরের বক্তব্য, লকডাউন পর্বে (এপ্রিল-মে) জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণ একেবারে তলানিতে ঠেকে যায়। আদায় এতটাই কম ছিল যে, কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে তার উল্লেখটুকুও করা হয়নি। কিন্তু জুন মাসে জিএসটি সংগ্রহে বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে রাজ্য। তথ্য বলছে, গেরুয়া শিবিরের নিয়ন্ত্রণাধীন দুই রাজ্য হরিয়ানা ও উত্তরাখণ্ডে জিএসটি সংগ্রহ বৃদ্ধির হার যথাক্রমে মাইনাস ২৪ শতাংশ ও মাইনাস ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে, তামিলনাডুতে মাইনাস ১৫ শতাংশ। সেখানে বাংলার এই অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। কারণ, কোভিড-যুদ্ধের সঙ্গেই উম-পুনের সম্মুখীন হতে হয়েছে বাংলাকে।
এমন জোড়া বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি অন্য কোনও রাজ্যকে। অর্থদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক বছরের শেষ মাস অর্থাৎ মার্চেই সবচেয়ে বেশি কর সংগ্রহ হয়। এ বছর লকডাউন শুরু হয় ২৩ মার্চ থেকে। ওই মাসে জিএসটি বাবদ সংগ্রহ হয়েছিল ৩ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। বিপর্যয় পর্বের সূচনাতেও বাংলায় কর আদায়ের পরিমাণ ছিল দেশের ১১টি রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু জিএসটি নয়, স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি, ভেহিকল ট্যাক্স, ইলেক্ট্রিসিটি ডিউটি, স্টেট ভ্যাট এবং রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। আবগারি কর বাবদ মাসে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আয় হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসের ৬ থেকে ১২ তারিখ, এই ছ’দিনে ১০৫ কোটিরও বেশি এসেছে কোষাগারে।