দেশের মধ্যে প্রথম ঘরে বসেই বিনামূল্যে কোভিড টেস্ট শুরু হচ্ছে কলকাতায়
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত ‘টেস্টিং, ট্রেসিং, ট্রিটমেন্ট’ কৌশলকে আরও কার্যকর করতে নাগরিকদের বাড়ির দরজায় এবার কোভিড পরীক্ষা-পরিষেবাকে পৌঁছে দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা (KMC)। মহানগরের যে কোনও ওয়ার্ডের ক্লাব, সোসাইটি, পুজো কমিটি, আবাসন কমিটি পুরসভায় আবেদন করলেই ‘মোবাইল অ্যাম্বুল্যান্স-ল্যাব’ পাঠিয়ে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা (Covid-19 Test) হবে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা পদ্ধতিতে আধঘণ্টার মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে স্বেচ্ছায় পরীক্ষা করতে আসা নাগরিকের শরীরে নোভেল করোনা ভাইরাস আছে কি না। করোনা মোকাবিলায় পাড়ায়-পাড়ায় ‘কোভিড টেস্টিং টু ইওর ডোরস্টেপ’ কর্মসূচি শনিবার ঘোষণা করেন কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। জানান, “যদি শিবিরে কোন ব্যক্তির উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও ‘করোনা নেগেটিভ’ আসে তবে তাঁর লালারস বিনা খরচে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাবে পুরসভাই।” শিবিরের জন্য ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানকে যোগাযোগ করতে হবে পুরমন্ত্রীর নিজস্ব হোয়াটঅ্যাপ নম্বরে (৯৮৩০০৩৭৪৯৩)। পাঠাতে হবে ক্লাবের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর। পুরকর্তাদের দাবি, দেশের মধ্যে কলকাতাই প্রথম নগর নিগম যেখানে করোনা মোকাবিলায় ‘বাড়ির দরজার কোভিড টেস্টিং’ চালু করল। এর আগে চিনের ইউহানের ধাঁচে রাজপথে রাসায়নিক দিয়ে দেশের মধ্যে প্রথম জীবাণুমুক্তকরণ করে স্বয়ং বিগ-বি’র প্রশংসা কুড়িয়েছিল কলকাতা পুরসভা।
মহানগরের বস্তিতে মাইক্রোপ্ল্যানিং, বহুতল বা আবাসনে কোভিড ডিরেক্টরি এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থায়ী করোনা পরীক্ষা সেন্টার ইতিমধ্যে চালু করেছে পুরসভা। এবার একেবারে বাড়ির দরজায় পুরসভার ‘মোবাইল অ্যাম্বুল্যান্স-ল্যাব’ পাঠিয়ে নাগরিকদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষার সুবিধা চালু করে পুরভোটের আগে আরও একদফা মাস্টার স্ট্রোক দিলেন পুরমন্ত্রী। বেসরকারি হাসপাতালে কমপক্ষে ২২৫০ টাকা দিয়ে এই পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। বিরোধীরা গত দু’দিন ধরে দাবি তুলেছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে কোভিড পরীক্ষা সেন্টার চালুর। কিন্তু সেই সেন্টার গত ১৪ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে, সঙ্গে এবার ‘পাড়ায় ডাকলেই বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা’র মতো বিশেষ সুবিধা এদিন চালু করলেন পুরমন্ত্রী। ফিরহাদের কথায়,“পুরসভাকে চিঠি দেওয়ার বা ফোন করার কোনও দরকার নেই। কাউকে ধরে তদ্বিরও করাতেও হবে না। সবাই শুধু আমার হোয়াটসঅ্যাপে ঠিকানা, যোগাযোগের ফোন নম্বর পাঠিয়ে দিন। পুরসভাই জানিয়ে দেবে, কবে কোথায় পরীক্ষা করা হবে। উদে্যাক্তা সংস্থা বা সংগঠনকে অনুরোধ, আয়োজিত শিবিরে নূন্যতম ২০ জন এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ঘর রাখবেন। পিপিই কিট পরে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা না হলে গরমে কাজ করতে পারবেন না।” আগের তুলনায় পরীক্ষা শিবির বেশি চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষের এখন কোভিড টেস্টের আগ্রহ কিছুটা কমছে বলে মন্তব্য পুরমন্ত্রীর।
করোনায় মৃতের সংখ্যা কমাতে এবার শহরে বাসিন্দাদের কো-মর্বিডিটি’র তালিকা তৈরির কাজও শুরু করছে পুরসভা। স্বাস্থ্যদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে দু’মাসের মধ্যে বাড়ি-বাড়ি কর্মী পাঠিয়ে এই সমীক্ষা তথা তালিকার কাজ সম্পূর্ণ করা হবে বলে এদিন পুরমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তাঁর কথায়, “ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ, মেদবাহুল্য (ওবেসিটি) ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জন্য যাঁদের ‘কো-মর্বিডিটি’ রয়েছে সেটা জানা থাকলে কোভিড আক্রান্ত হলেই দ্রুত চিকিৎসায় সুবিধা হবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শহরে আনুষঙ্গিক অসুস্থতা অর্থাৎ কো-মর্বিডিটি জানলে করোনায় মৃতু্যর হার অনেক কমে যাবে।” গত কয়েকদিনে কলকাতায় করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কম হওয়ার জন্য লকডাউন এবং পুলিশ ও পুরসভার কড়া নজরদারির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলেও এদিন ফিরহাদ মন্তব্য করেন।