তৃণমূল নেতাকে খুনের ছক, ধৃত ৬ বাংলাদেশি
শান্তিনিকেতনের প্রত্যন্ত গ্রাম তালতোড়। নির্জন জায়গায় একতলা বাড়ি। সপ্তাহখানেক আগে ওই বাড়িটি ভাড়া নেয় ছয় যুবক। রংমিস্ত্রি বলে পরিচয় দেয়। তাই কেউ সন্দেহের চোখে দেখেনি। কিন্তু ছবিটা বদলে গেল রবিবার ভোরে পুলিসের গোপন অপারেশনে। গ্রামে ঢুকে ছয় যুবককে তুলে নিয়ে এল পুলিস। তার মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। উদ্ধার হয় প্রচুর আগ্রেয়াস্ত্র ও বোমা তৈরির মশলা। পুলিস ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে, নানুরের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা কাজল শেখকে খুন করার জন্য তারা সুপারি নিয়েছিল। সেই কারণেই ঘরভাড়া নিয়ে রেইকি করছিল। ঘটনা জানাজানি হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তবে কে বা কারা খুনের সুপারি দিয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশি দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হওয়ায় রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বোলপুরে এসেছে। তারাও তদন্ত করবে। পুলিস সুপার শ্যাম সিং বলেন, কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
তবে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখকে খুনের জন্যই বাংলাদেশের দুষ্কতীদের ভাড়া করা হয়েছিল। এলাকা চেনানোর জন্য তাদের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় দুই দুষ্কৃতী। ১৯ সেপ্টেম্বর ওই চার বাংলাদেশি উত্তর ২৪ পরগনার কাসেম বাজারের সীমান্ত পেরিয়ে এরাজ্যে ঢুকেছিল। কাজল শেখ বলেন, বাম আমল থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করছি। শত্রু তো আছেই। কিন্তু কারা এই পরিকল্পনা করেছিল, কিছুই বুঝতে পারছি না। পুলিস নিশ্চয়ই তদন্ত করে পিছনে কারা রয়েছে তা বের করবে। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেতৃত্বের উপর আঘাত হেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য চক্রান্ত করা হচ্ছে। পুলিস সজাগ আছে বলেই ঘটনার আগে দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ে গিয়েছে। তবে পুলিসের অনুমান, এই ঘটনায় আরও অনেকেই জড়িত আছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে দু’টি ওয়ান শটার, দু’টি সেভেন এমএম, একটি নাইন এমএম পিস্তল ও কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে পুলিস প্রায় ছ’কেজি বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার করেছে।
পুলিস ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে, মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক বন্দিই বাংলাদেশের কুখ্যাত দুষ্কৃতী রফিক ফকির, মহম্মদ মুরাদ মুন্সি, মহম্মদ দুলামিয়া ও মহম্মদ বিলাল হোসেনকে ভাড়া করে। বাংলাদেশে তার এক পরিচিত রয়েছে। তার মাধ্যমেই বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের সুপারি দেওয়া হয়। শান্তিনিকেতন থানার খোসকদমপুরের সৈয়দ আনোয়ার আলি ও বোলপুরের মুলুকের বাসিন্দা শেখ কাজল তাদের থাকার ব্যবস্থা করে। ধৃতদের এদিন বোলপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। এসিজেএম অয়নকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের ১৪ দিন পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি আইনজীবী ফিরোজ পাল বলেন, ধৃত বাংলাদেশিরা পাসপোর্ট, ভিসা দেখাতে পারেনি। তারা আদালতে সেকথা স্বীকারও করেছে।