লাগাতার অনশনে কৃষকরা, অনড় কেন্দ্রও
একদিকে কৃষকদের দিনভর অনশন। অন্যদিকে, অনড় নরেন্দ্র মোদি সরকার। কৃষি আইন নিয়ে রাজধানীর সীমানায় সংঘাতের আঁচ আরও তীব্রতর হচ্ছে। সরকার স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, আইন প্রত্যাহার হবে না। এরপরও ফাঁক থেকেই যাচ্ছে। কারণ, কেন্দ্র যে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে মরিয়া, তা সোমবার আরও একবার প্রকাশ হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমারের (Narendra Singh Tomar) বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘আইনের সমর্থনে বহু কৃষক সংগঠন রয়েছে। তবে আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। আইনে কী সংশোধন সরকার করতে চায়, তা আন্দোলনকারীদের কাছে প্রস্তাবাকারে পাঠানো হয়েছে। আমরা আলোচনার অপেক্ষায় আছি। আইনের যে কোনও অংশ নিয়ে সরকার আলোচনায় প্রস্তুত।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও বলেছেন, ‘কৃষি এবং কৃষকদের ক্ষতি হয়, এমন কোনও পদক্ষেপ কেন্দ্র নেবে না।’
টানা ১৯ দিনের বিক্ষোভে কোণঠাসা কেন্দ্র। এদিন সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন কৃষিমন্ত্রী। রবিবারও অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তোমার। এদিন দুপুরে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কৃষি আইনের পক্ষে থাকা সারা ভারত কিষান সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধিরা। কমিটির আওতায় থাকা বিভিন্ন রাজ্যের ১০টি কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানান, ‘কৃষি আইন সম্পূর্ণ বাতিলের প্রয়োজন নেই।’ একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘কৃষক বিক্ষোভ সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।’ আন্দোলনকারী কৃষকদের পক্ষে হান্নান মোল্লা অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে রাজনীতির প্রভাব নেই। এটি খেটে খাওয়া কৃষকদের আন্দোলন। সরকার আমাদের আন্দোলনের চাপে ভয় পেয়ে সাজানো কিছু সংগঠনকে দিয়ে পরিস্থিতি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
সোমবার শুরুতেই কৃষকেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘সারা দিন জল স্পর্শ করব না। না খেয়ে মরে যাব, তবু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ দিনের শেষে দিল্লি-জয়পুর হাইওয়েতে মিছিল আটকে দেওয়ায় পুলিসের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধেছে কৃষকদের। জল্পনা, কৃষক আন্দোলনের (Farmers Protest) নতুন কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতে চলেছে রাজস্থান-হরিয়ানা সীমানা। সিংঘু, তিক্রি, গাজিপুর সীমানার মতো দিল্লি সংলগ্ন একাধিক সীমানা এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে অনশন ধর্নায় বসেছেন আন্দোলনকারী কৃষকেরা।
এদিনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ে ধরে ট্রাক্টর নিয়ে মিছিল করে আসছিলেন কৃষকেরা। রাজস্থান-হরিয়ানা সীমানাতেই সেই মিছিল আটকে দেয় পুলিস। ট্রাক্টরের উপর উঠে চাবিও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপরেই দিল্লি-জয়পুর এক্সপ্রসওয়েতে পুলিসের সঙ্গে কৃষকদের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। বিক্ষোভকারীদের টেনে-হিঁচড়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকজন কৃষককে আটক করে পুলিস। তার প্রতিবাদে শয়ে শয়ে কৃষক হাইওয়ে আটকে ধর্নায় বসেন। ছুটে যায় বিশাল পুলিসবাহিনী। লখনউতেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কৃষকদের সমর্থনে এদিন দিনভর অনশন করেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং আপের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। অনশনের হুমকি দিয়ে তোমারকে চিঠি লিখেছেন আন্না হাজারেও। চিল্লা সীমানায় অনির্দিষ্টকালের অনশনে বসেছেন ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের মুখপাত্র।