রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

আব্বাস সিদ্দিকিকে জবাব দিতে জোড়া কৌশল তৃণমূলের

January 9, 2021 | 2 min read

আব্বাস সিদ্দিকির মোকাবিলায় কৌশল চূড়ান্ত করছে বাংলার শাসক তৃণমূল। দলের অন্দরের খবর, আগামী বিধানসভা ভোটে প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি-র মতোই তৃণমূলকে উদ্বেগে রেখেছেন ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকি (Abbas Siddiqui)। সূত্রের খবর, ফুরফুরা শরিফের এই পিরজাদার মোকাবিলায় দলের সংখ্যালঘু নেতাদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

আব্বাস ঘোষণা করেছেন, আগামী ২১ জানুয়ারি তিনি নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করবেন। ওইদিনই তিনি মোট ১০টি রাজনৈতিক শক্তিকে একজোট করে নিয়ে একুশের ভোটযুদ্ধের জন্য নিজের ফ্রন্টের বিষয়েও ঘোষণা করবেন। ওই ঘোষণার পরেও আপাতত নীরব রয়েছে তৃণমূল। কিন্তু দলের শীর্ষনেতারা জানেন, আব্বাস তাঁদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে পারেন। বিধানসভা ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণ করতে চাইছে বিজেপি। ফলে তৃণমূলের (Trinamool) প্রয়োজন গোটা রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটকে তাদের অনুকূলে এককাট্টা করা। কিন্তু আব্বাস তাঁর দল এবং জোট নিয়ে ময়দানে নামলে ওই ভোট অটুট থাকবে কি না, তা নিয়ে খানিকটা সন্দেহ রয়েছে। ফলে আব্বাসকে মোকাবিলা করতেই হবে তৃণমূলকে।

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই আব্বাস সংক্রান্ত তথ্য জড়ো করে তাঁকে আক্রমণের কৌশল সাজিয়েছে জোড়াফুল শিবির। মূলত দু’ধরনের কৌশল স্থির হয়েছে আব্বাসকে রুখতে। আব্বাস সংখ্যালঘু মুসলমানদের লক্ষ্য করে ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হলে প্রথম কৌশলে তাঁকে ঘায়েল করার রাস্তা নেবে তৃণমূল। দ্বিতীয়, আব্বাস ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়ে দল ঘোষণা করলে সেই জবাব হবে একটু অন্য ধাঁচে। সম্প্রতি ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলমিন’ (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi) ফুরফুরা শরিফে এসে বৈঠক করে গিয়েছেন আব্বাসের সঙ্গে। বৈঠকের পর তিনি ঘোষণা করে গিয়েছেন, বাংলায় আব্বাসের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলবে তাঁর দল। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে উদ্বেগের অবকাশ তৈরি হয়েছে। আব্বাস, মিমের প্রধান ওয়েইসি বা তাঁদের জোটকে কোনও ভাবেই হাল্কা করে দেখছে না বাংলার শাসকদল।

বিহারের বিধানসভা ভোটে পাঁচটি আসন পেয়েছে ওয়েইসির মিম (AIMIM)। এ বার তাদের নজর বাংলার দিকে। মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাদের নজর রয়েছে। আব্বাসের সঙ্গে মলে তারা ওই সব জেলায় বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে কার্যত মনস্থির করেই ফেলেছে। আব্বাসের দল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা।

সূত্রের খবর, আব্বাস নতুন দলের ঘোষণার পরেই ময়দানে নামবেন রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি হাজি নুরুল ইসলাম। আগামী ভোটযুদ্ধে অচেনা প্রতিপক্ষ আব্বাস প্রসঙ্গে কটাক্ষের সুরে শনিবার হাজি নুরুল বলেন, ‘‘আগে ওরা দল বা ফ্রন্ট— যা-ই হোক, ঘোষণা করুক। তারপর আমরা ময়দানে নেমে জবাব দেব। এখন কিছু বলছি না। দল ঘোষণা করলেই ওরা জবাব পাবে। নতুন দল করে ওরা খুব বেশি লাভবান হবে না। কৌশলে ওরা মুসলিমদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চাইছে। আমরা তার মোকাবিলায় তৈরি রয়েছি। এখন কিছু বলতে গেলেই তো প্রচার করবে ‘ধর্মগুরু’ বলে। তাই জবাব পাবেই। এটা যে বিহার নয়, সেটা ওদের বুঝিয়ে দেব!’’

এই প্রসঙ্গে আব্বাস বলেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যাঁদের ময়দানে নামাবে সমাজে তাঁদের ভুমিকা কী হবে, তা মানুষ বুঝে নেবে। এতদিনে তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করেছেন, না শুধু পার্টির চামচাগিরি করেছেন! তা-ও জনগণ জানে। আর আমি পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য নেমেছি, শুধুমাত্র সংখ্যালঘু মানুষদের জন্য নয়।’’ তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণের কৌশল প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘রাজনীতি করতে গিয়ে ওরা কৌশল অবলম্বন করবে, এটাই স্বাভাবিক। ঠিক সময়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁদের আক্রমণের মোকাবিলা আমরাও করব। তবে সবার আগে তাঁদের জবাব দিতে হবে, কেন এই রাজনৈতিক দলটি হল? বাংলার মানুষকেও জবাব দিতে হবে, স্বাস্থ্য-শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলেও তা হল না কেন? কেন এখনও জঙ্গলমহলে মাওবাদী অপবাদ দিয়ে কেন আদিবাসী ভাইবোনদের মিথ্যে কেস দেওয়া হচ্ছে। মতুয়ারা কেন অধিকার পেল না? সংখ্যালঘুরা ৭৩ বছরেও অধিকার পায়নি, আপনার জমানাতেও পেল না কেন?”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Asaduddin Owaisi, #Trinamool Congress, #Abbas Siddiqui

আরো দেখুন