রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

জিআই তকমা পেতে লড়াইয়ে নামছে সুন্দরবনের মধু

March 3, 2021 | 2 min read

মধু তো মধুই হয়। কিন্তু সুন্দরবনের বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ হাতে সংগৃহীত মধু’র স্বাদ ও চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। যা বিশ্বের আর কোথাও মেলে না।

সুন্দরবনের মধু’র আর এক নাম ‘ব্লাড হানি’। অর্থাৎ শোণিত মধু। শুধু লালচে আভার কারণে এমন নামকরণ নয়। জল-জঙ্গল ডিঙিয়ে মউলিরা পৌঁছে যান বাঘ আর কুমিরের ডেরায়। জীবন বাজি রেখে সেখান থেকে ছিনিয়ে আনেন মধু। এবার সেই মধু (Honey) ‘জিআই’ তকমা পেতে লড়াইয়ে নামছে সুন্দরবন। ইতিমধ্যেই চেন্নাইয়ে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস-এর সদর দপ্তরে তার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গিয়েছে। তবে শুধুমাত্র মৃত্যুভয়ের গল্প শুনিয়ে জিআই (GI) আদায় করা যায় না, তা জানেন সবাই। সেক্ষেত্রে গন্ধ, বর্ণ আর গুণমানে তাঁদের মধু’র যে কোনও বিকল্প নেই, তার প্রমাণে মরিয়া সুন্দরবনবাসী।

কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যদি কোনও জিনিস পাওয়া যায় এবং যার কদর বেশি, তার জিআইয়ের জন্য আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্ত হল, আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে, সেটির জন্ম বা ‘অরিজিন’ ওই এলাকাতেই। আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। যেমন দার্জিলিং চা, বালুচরি শাড়ি, তুলাইপাঞ্জি চাল বা রসগোল্লা। মূলত, ব্যবসা বাড়ানোই জিআই পাওয়ার মূল লক্ষ্য। রপ্তানির ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেয় এই তকমা। সেই লড়াইয়ে বাংলার নয়া সংযোজন সুন্দরবনের মধু। এটির জন্য আবেদন করেছে ‘বি বাস্কেট সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মধু ছাড়াও এই মুহূর্তে জিআই পাওয়ার অপেক্ষায় বাংলা থেকে রয়েছে মসলিন, তসর ও গরদ।

সোসাইটি জানিয়েছে, এদেশে প্রাকৃতিক উপায়ে যে মধু উৎপাদন করা হয়, তার ৯০ শতাংশ আসে সুন্দরবন থেকে। এখানে প্রায় দু’হাজার মানুষ মধু সংগ্রহের কাজ করেন। বছরে প্রায় ১১১ টন মধু উৎপাদন হয়। খলসি, গরান আর বাইন গাছের ফুলে যে মধু থাকে, তাই-মূলত সুন্দরবনের মধু হিসেবে বাজারে আসে। ম্যানগ্রোভ থেকেও সংগ্রহ করা হয় মধু। তবে সংগ্রহের সূচনা কবে, তার নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি সোসাইটি। তারা জানিয়েছে, এই সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু মধু সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় মউলিরা গান বাঁধেন, মন্ত্রোচ্চারণ করেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই প্রথা চলছে আসছে। মউলিদের কথা লোকমুখেও ফিরছে। প্রাণে বাঁচতে দক্ষিণরায়কে স্মরণ করে তাঁদের গান চিনিয়ে দেয়—সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ এক প্রাচীন জীবিকা। সুন্দরবনের মধু জিআই পেলে, এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার মিলন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘সত্যিই এখানকার মধু বিশ্বের বাজারে প্রতিষ্ঠা পেলে তার চেয়ে ভালো কিছু হয় না এই অঞ্চলের জন্য।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#sundarbans, #honey

আরো দেখুন