হিংসা এখন নিয়ন্ত্রণে আছে হাইকোর্টকে জানাল রাজ্য
ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে জানাল রাজ্য সরকার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলছে। সেখানে রাজ্যের তরফে ২৭ পাতার হলফনামা জমা দেওয়া হয়। তাতে এই জনস্বার্থ মামলার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রাজ্যের বক্তব্য, ৩ মে পর্যন্ত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের হাতে। তার পরের দু’দিন কিছু ঘটনা ঘটলেও এখন সব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের পর্যবেক্ষণ- ভোট পরবর্তী হিংসায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ রাজ্যকেই দিতে হবে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে রাজ্যকে।
যদিও পাঁচ বিচারপতির ওই বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন প্রশ্ন তোলেন, কারা সত্যিকার ক্ষতিগ্রস্ত, সেটা কী ভাবে প্রমাণ হবে? আগামী মঙ্গলবার, ২৫ মে রাজ্য আদালতে জানাবে, এই সব হিংসার ঘটনা জানানোর জন্য কোনও ‘ডেডিকেটেড’ ই-মেল আইডি দেওয়া হয়েছে কি না। সে দিনই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবারই রাজ্যকে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় এক বিজেপি কর্মীর নিহত হওয়া সংক্রান্ত মামলায় নোটিস পাঠিয়েছে। শীর্ষ আদালতে এই নিয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী মঙ্গলবার, ২৫ তারিখই। গত ২ মে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর হিংসায় অভিজিৎ সরকার নামে এক বিজেপি কর্মীর প্রাণহানি নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই হয়। নিহত অভিজিতের ভাই বিশ্বজিৎ সরকার দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, আদালত যেন বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে ঘটনার তদন্ত করে। ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ারও আবেদন জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে। হারাণ অধিকারী নামে অন্য এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় একই দাবি ওঠে। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই নোটিস পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিনীত শরণের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন নিহত অভিজিতের ভাই বিশ্বজিৎ সরকার। সেই আবেদনের ভিত্তিতে আদালত জানতে চেয়েছে, বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের বিষয়ে কী ভাবছে রাজ্য সরকার।
এ দিন কলকাতা হাইকোর্টে শুনানির শুরুতেই আদালতের তরফে জানানো হয়, যাঁরা ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন, তাঁরা এই ব্যাপারে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ-সহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশন এবং জাতীয় তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো এই ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছ থেকে রিপোর্ট নেবে।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ খুন হয়েছেন, সেই সঙ্গে অনেকে আহত এবং ঘরছাড়া হয়েছেন বলে অভিযোগ জানিয়ে প্রায় হাফ ডজন মামলা হয় হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানির জন্য পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ তৈরি করে আদালত। শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে পুনর্বাসন রাজ্যকেই দিতে হবে, এটা রাজ্যের দায়িত্ব।
এ দিন মামলাকারীদের তরফে এক আইনজীবীর অভিযোগ, কেবল এন্টালি এলাকাতেই ১২৫ জন ঘরছাড়া, রাজ্যে গত রবিবার কার্যত লকডাউন শুরু হওয়ায় তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় সোমবার বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। তবে ঘরছাড়াদের পুলিশ কী ভাবে বাড়ি পোঁছে দেবে, সেই প্রশ্ন তোলেন বেঞ্চের অন্যতম সদস্য, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন। তাঁর প্রশ্ন, কী প্রমাণ আছে যে, এঁরা নির্যাতিত? অ্যাডভোকেট জেনারেলকে আদালত প্রশ্ন করে, মানবাধিকার কমিশন-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে বহু অভিযোগ জানিয়েছিল, তার সংখ্যা কত? কোনও আলাদা ই-মেল আইডি কি রাজ্য দিয়েছে, হিংসার ব্যাপারে যেখানে সরাসরি অভিযোগ জানানো যাবে? এ দিন এই ব্যাপারে এজি কিছু জানাননি। আগামী মঙ্গলবার, ২৫ তারিখের শুনানিতে এই ব্যাপারে রাজ্য উত্তর দেবে।