১০০ একর পতিত জমিতে ইস্পাত শিল্প গড়ার উদ্যোগ হলদিয়ায়
শিল্পাঞ্চলে লগ্নি টানতে এবার নয়া উদ্যোগ নিল হলদিয়া (haldia) বন্দর কর্তৃপক্ষ। শিল্প গড়তে একলপ্তে ১০০একরের বেশি জমি দিতে আগ্রহী তারা। বন্দর সংলগ্ন অব্যবহৃত ওই জমিতে ইস্পাত শিল্প গড়ার জন্য সম্প্রতি বিভিন্ন শিল্প সংস্থার কাছে ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ বা ইচ্ছাপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অব্যবহৃত এই জমি বন্দরের অধিকৃত নিজস্ব জায়গা। হলদিয়ায় ইস্পাত বা ওই জাতীয় শিল্প গড়ে উঠলে বন্দর মারফত স্টিল ও কয়লা জাতীয় পণ্য পরিবহণ কয়েকগুণ বাড়বে। এর ফলে বন্দরের বাণিজ্য ও আয় বাড়ার পাশাপাশি কাজ পাবেন শিল্পাঞ্চলের বহু মানুষ। এর জন্য বন্দরের পরিকাঠামো আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিকল্প ভাবনার মাধ্যমে কীভাবে বন্দরের নাব্যতা সমস্যার বাধা অতিক্রম করা যায়, সেজন্য বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২১জুন বন্দরের আহ্বান করা ইচ্ছাপত্রের জন্য বিডিং প্রক্রিয়া রয়েছে। এর জন্য প্রতিযোগিতামূলক একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ১৮মে অনলাইন টেন্ডারে ইচ্ছাপত্র আহ্বান করেছিল বন্দরের প্রশাসনিক বিভাগ। দীর্ঘদিন পর হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ এধরনের উদ্যোগ নিল। বন্দরের এক কর্তা জানান, প্রায় দু’দশক ধরে প্রবল নাব্যতা সমস্যায় ভুগছে হলদিয়া। ফলে বড় জাহাজ ঢুকতে পারে না। এজন্য বন্দর মারফত পণ্য আনা কমিয়ে দিয়েছে একাধিক শিল্প সংস্থা। এক দশক আগে হলদিয়া আইওসি রিফাইনারি ১০মিলিয়ন টনের বেশি ক্রড অয়েল আনা বন্ধ করে দেয়। রিফাইনারি এখন পারাদ্বীপ বন্দর থেকে পাইপলাইনে ওই কাঁচামাল আনে। ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে বন্দর।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অধিকৃত এলাকায় সাধারণত সেই সমস্ত শিল্প সংস্থাকে জমি দেওয়া হয়, যাতে বন্দর ও শিল্প সংস্থা উভয়ে উপকৃত হয়। পণ্য পরিবহণ খরচ কম হয় এবং শিল্পের উৎপাদন ব্যয় কমে। শিল্প সংস্থা বন্দর মারফত পণ্য পরিবহণ করবে, এই শর্তেই মূলত কম টাকায় জমি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হলদিয়ায় বর্তমানে বন্দরের জমিতে গড়ে ওঠা কয়েকটি শিল্প সংস্থা থেকে কর্তৃপক্ষ সেভাবে উপকৃত হচ্ছে না। এইচএফসি রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা বন্ধ হওয়ার পর বন্দরের ১৭৫একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বন্দর চাইছে, এই ধরনের শিল্প বন্দরের জমিতে গড়ে উঠুক, যেখানে বন্দর ও হলদিয়ার মানুষ উভয়ের লাভ হয়।
হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার(প্রশাসন) প্রভীনকুমার দাস বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ হলদিয়ায় ইস্পাত শিল্প জাতীয় শিল্পে লগ্নি টানতে আগ্রহী। এছাড়া হলদিয়া বন্দর সংলগ্ন এলাকায় গ্যাসভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগের চাহিদা রয়েছে। নাব্যতা সমস্যার বাধা অতিক্রম করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবিষয়ে কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যান বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছেন। চেন্নাই আইআইটি সহ বেশ কয়েকটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। বড় জাহাজে পণ্য আনতে সাগর ও স্যান্ডহেডে ট্রান্সলোডিং শুরু হয়েছে। ফলে পণ্য পরিবহণ কয়েক মিলিয়ন টন বেড়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বন্দরের ডকে এই প্রথম স্বয়ংক্রিয় লকগেট সিস্টেম চালু হচ্ছে। রাতে ডক এলাকাজুড়ে কার্গো অপারেশন ও নিরাপত্তার জন্য নতুন করে সাড়ে ১১কোটি টাকা খরচে হাইমাস্ট লাইট লাগানো হচ্ছে।