দেশ বিভাগে ফিরে যান

ঊর্ধ্বমুখী গ্যাসের দাম, কমছে উজ্জ্বলার গ্রাহক

July 26, 2021 | 2 min read

‘বাড়িতে গ্যাস থাকার জন্যই করোনাকালে গ্রামের মা, বোনদের বাইরে গিয়ে কাঠের জোগাড় করতে হয়নি।’ গতবছর এই বাণী শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে। আর ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’ প্রকল্পের ধ্বজা উড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে এক বছরে। ‘সৌজন্যে’ রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া দাম। মধ্যবিত্তই যেখানে গ্যাস কিনতে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন, সেখানে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এর নিট ফল, বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে মোদির সাধের এই প্রকল্প। গত আর্থিক বছরে হু হু করে নেমেছে গ্রাহক সংখ্যা। বছরের শুরুতে যে সংখ্যক গ্রাহক গ্যাস কিনতেন, বছর শেষে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।


গরিব মানুষ যাতে কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করা থেকে সরে আসেন এবং পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমে, সেই উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা চালু করে কেন্দ্র। এক্ষেত্রে গ্যাসের সংযোগ, রেগুলেটর ও পাইপের দাম গ্রাহককে দিতে হয় না। তার জন্য প্রায় ১ হাজার ৬৫০ টাকা মেটায় কেন্দ্র। কিন্তু সিলিন্ডারের দাম চোকাতে হয় গ্রাহককেই। চলতি মাসে কলকাতায় সিলিন্ডারের দাম ৮৬১ টাকা। অথচ ভর্তুকির অঙ্ক নামমাত্র। তাই কার্যত বাজারদরেই গ্যাস কিনতে হচ্ছে উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদেরও। আর তাতে যে নাভিশ্বাস উঠেছে গরিব মানুষের, পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ।
উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যাক কাঁকসা ব্লকের কথা। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা মুংলি বাসকি। এখন নিয়মিত জঙ্গল থেকে কাঠ আনেন তিনি। অথচ রান্নার জন্য বাড়িতে গ্যাস আছে। তাহলে কেন? জবাব মেলে, ‘গ্যাস ভরানোর টাকা কোথায় পাব? তাই আবার জঙ্গল থেকেই কাঠ আনতে শুরু করেছি।’ মুংলি বাসকি বা তাঁর প্রতিবেশী মঙ্গলি টুডুদের এটাই এখন রোজনামচা। বনদপ্তরের কেন্দ্রীয় সর্কেলের মুখ্য বনপাল এস কুলান ডাইভেল বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়লে জঙ্গলের উপর তো চাপ বাড়বেই।’ দক্ষিণ-পশ্চিম সার্কেলের বনপাল এম আর ভাটের কথায়, ‘এখন ধানকাটার সময়। তাই কাঠ কাটার চাপ কিছুটা কম। তবে পরবর্তীতে এই ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।’


গত বছর লকডাউন চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল, তিন মাসের জন্য সিলিন্ডারের দাম চোকাতে হবে না উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদের। দেখা গিয়েছিল, সেই সময় প্রচুর গ্রাহক সিলিন্ডার কিনেছেন। তথ্য বলছে, উজ্জ্বলা যোজনায় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গ্রাহক পিছু গড়ে ১.৭৮টা সিলিন্ডার বিক্রি হয়। তিনমাস কাটতেই বিক্রি কমতে শুরু করে সিলিন্ডারের। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকপিছু সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছিল ১.০৯টা। পরের তিন মাসে তা হয় ০.৯৮। আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে তা হয় ০.৮৫। অর্থাৎ সেই সময় তিন মাসে একটি সিলিন্ডারও খরচ করেননি গ্রাহকরা। অর্থাৎ, বিফলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য। মাথাচাড়া দিচ্ছে দূষণ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Ujjwala Gas, #gas price hike

আরো দেখুন