দেশ বিভাগে ফিরে যান

আদৌ কমবে কি জ্বালানির দাম? নিরুত্তর মোদী সরকার

October 19, 2021 | 3 min read

মোদী সরকারের উপরমহল একমত যে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানো দরকার। কিন্তু কী ভাবে? তার উত্তর মিলছে না।

গত বছর ছিল হাঁড়ির হাল। এ বছর সেই তুলনায় মোদী সরকারের রাজকোষের ছবি যথেষ্ট ভাল। আয়কর, কর্পোরেট কর থেকে বেশ ভাল আয় হয়েছে। জিএসটি বাবদ প্রতি মাসে কম-বেশি ১ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে আসছে। কিন্তু তার পরেও উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই করে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমাতে মোদী সরকার ইতস্তত করছে। কারণ, এয়ার ইন্ডিয়া বেচে দেওয়া গেলেও ভারত পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানা বেচে কত টাকা ঘরে আসবে, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রক এখনও নিশ্চিত নয়। পেট্রলের দাম ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। ডিজ়েলের দাম সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। এ দিকে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটও আসন্ন। ফলে সরকারকে জ্বালানির দাম কমানোর রাস্তা খুঁজতেই হচ্ছে। সরকারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে আমদানি করা অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। এপ্রিল মাসে যা ৪০ ডলারের ঘরে ছিল। অশোধিত তেলের দাম খুব শীঘ্রই কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, সামনেই শীতের মরসুম। তখন সাধারণত জ্বালানির চাহিদা অনেকটাই বাড়ে ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ায়। সে ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই।’’ অশোধিত তেল যে মাথাব্যথার কারণ, এ দিন আমেরিকায় সিইওদের সঙ্গে বৈঠকে তা মেনেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও। নির্মলার কথায়, এই অনিশ্চয়তা সামাল দিতে অন্যান্য জরুরি খাত থেকে কত টাকা কোথায় সরিয়ে আনতে হবে, সেই হিসাব প্রায় রোজ কষতে হচ্ছে তাঁদের।

গত বছর মে মাসে কেন্দ্র পেট্রলে প্রতি লিটারে ১০ টাকা ও ডিজ়েলে ১৩ টাকা শুল্ক বাড়িয়েছিল। সেই থেকেই পেট্রলে প্রায় ৩৩ টাকা এবং ডিজ়েলে প্রায় ৩২ টাকা করে কর আদায় করছে কেন্দ্র। চলতি অর্থ বছরে এপ্রিল থেকে অগস্টের পাঁচ মাসে পেট্রল-ডিজ়েলের শুল্ক থেকে ১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে সরকার। শুল্ক কমানো নিয়ে তেল মন্ত্রক এক দিকে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অন্য দিকে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী সৌদির আরব, রাশিয়ার মতো ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করেছেন। যাতে সস্তায় অশোধিত তেল আমদানি করা যায়।

কেন এখনই উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে মানুষকে সুরাহা দেওয়া হচ্ছে না? অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘তেলের দাম এখন ১০০ টাকার কোঠায়। ফলে কেন্দ্র দু’পাঁচ টাকা কমালে বিশেষ লাভ হবে না। কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে শুল্ক কমাতে হবে। রাজ্যগুলির কোষাগারের হাল কেন্দ্রের থেকেও খারাপ। তাই রাজ্যগুলি রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু পেট্রলে ১০ টাকা বা ডিজ়েলে ১৩ টাকা শুল্ক কমিয়ে দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’’ এর কারণ হিসেবে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, পেট্রল পাম্পগুলো কার্যত সরকারের কর আদায় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। জ্বালানিতে শুল্ক কমিয়ে দিলে তা থেকে সরকারের নিশ্চিত আয় ধাক্কা খাবে। তখন সেই ফাঁক ভরাট করতে বিলগ্নিকরণ থেকে আয় বাড়ানোটাই শেষ সম্বল হয়ে উঠবে। বিলগ্নিকরণ দফতরের এক আমলার বক্তব্য, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু চলতি অর্থ বছরে বিলগ্নিকরণ থেকে ১.৭৫ কোটি টাকা ঘরে তোলার লক্ষ্য পূরণ হবে কি না, তা নির্ভর করছে ভারত পেট্রোলিয়ামের মালিকানা বেচা এবং এলআইসি-র শেয়ার বাজারে ছেড়ে কত টাকা ঘরে আসছে, তার উপরে। কিন্তু আয়ের অঙ্ক নিয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া মুশকিল।’’

শুধু বিপিসিএল, এলআইসি-র ভরসায় না থেকে অর্থ মন্ত্রক একই সঙ্গে সেন্ট্রাল ইলেকট্রনিক্স, বিইএমএল, শিপিং কর্পোরেশন, নীলাচল ইস্পাত নিগম, পবনহংসের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। তেল মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আমদানির খরচও বেড়েছে। এপ্রিল থেকে অগস্টে অশোধিত দেশে ৮.৩৮ কোটি টন তেল আমদানিতে প্রায় ৪,২০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। গত বছরের এই সময়ে যা খরচ হয়েছিল, তার দ্বিগুণের বেশি। কারণ, এপ্রিলে অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলার। এখন তা ৮৫ ডলারের ঘরে।

বিরোধীরা বলছেন, গত বছর অতিমারির জন্য বিশ্ব বাজারে জ্বালানির চাহিদা কম বলে অশোধিত তেলের দামও কম ছিল। কিন্তু কেন্দ্র বাড়তি কর চাপানোয় তার ফায়দা আমজনতা পায়নি। এখন মোদী সরকার শুল্ক কমিয়ে মানুষকে সুরাহা দিতে নারাজ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী একে ‘করের মাধ্যমে তোলাবাজি’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘মোদী মিত্র’-দের ফায়দার জন্যই মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। বিমানের জ্বালানির থেকেও যে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বেশি, সে দিকে আঙুল তুলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার কটাক্ষ, ‘‘প্রতিশ্রুতি ছিল, হাওয়াই চটি পরা লোকেদের বিমান সফর করাবেন। বিজেপি সরকার মধ্যবিত্ত মানুষের রাস্তায় হাঁটাই কঠিন করে দিয়েছেন।’’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Fuel Price

আরো দেখুন