দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

জগদ্ধাত্রী পুজোয় পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ল তারাপীঠে

November 14, 2021 | 2 min read

জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ল তারাপীঠে। শনিবার সন্ধ্যায় দেবী তারাকে জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো করা হয়। মাকে ডাকের সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী, একইদিনে মায়ের সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজো হয়। বছরের এই একটা দিনেই বাজনা সহযোগে তারাপীঠে আরতি নিবেদন করা হয়। 


তারাপীঠে কোনও দেবী মূর্তি পুজোর চল নেই। বহু যুগ ধরে কালী, দুর্গা, সরস্বতী, জগদ্ধাত্রী ইত্যাদি সকল দেবীর আরাধনা তারামায়ের মূর্তির উপর হয়ে আসছে। দেবী তারাই এখানে আরাধ্যাদেবী। এদিন ভোরে মায়ের স্নান ও মঙ্গলারতির পর ভক্তদের জন্য গর্ভগৃহ খুলে দেওয়া হয়। সারাদিন দেবী তারা রূপে পূজিত হন। সন্ধ্যায় মাকে ডাকের সাজে সাজিয়ে দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো নিবেদন করা হয়।

মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়  বলেন, এখানে দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পুজোর চল নেই। তারা মূর্তির উপরেই সকল দেবীর পুজো নিবেদন করা হয়। এদিন দেবী তারাকে জগদ্ধাত্রী রূপে সাজিয়ে বিশেষ পুজো করা হয়। বছরের এই দিনটিতেই কেবলমাত্র ভাড়া করে আনা বিভিন্ন বাজনা সহযোগে মায়ের সন্ধ্যারতি হয়। এদিন মাকে দু’বার অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে পোলাও, খিচুড়ি, বলির পাঁঠার মাংস, শোল মাছ, মিষ্টি ও পায়েস দেওয়া হয়। 

মন্দির কমিটির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ফিবছর বিশেষ বিশেষ তিথিতে তারাপীঠে ভক্ত সামাগম বাড়ছে। তাই ভক্তদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীর পাশাপাশি পুলিসের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ রোধে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রতিনিয়ত মাইকিং করে ভক্তদের সচেতন করা হচ্ছে।

আগে বছরের এই একটা দিনেই তারা মাকে ডাকের সাজে সাজানো হতো। কিন্তু, এখন প্রায়ই মাকে ডাকের সাজ পরানো হচ্ছে। ফলে বিশেষ এই দিনে জগদ্ধাত্রী রূপে দেবী তারার ঐতিহ্য অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে সেবাইতদের একাংশ ও পুণ্যার্থীদের অভিযোগ। তাঁরা বলেন, জগদ্ধাত্রী পুজোয় ডাকের সাজে মাকে দেখার জন্যই সারাবছর অধীর অপেক্ষায় থাকেন ভক্তরা। তাই শুধুমাত্র এই সময়েই মাকে ডাকের সাজে সাজানো হোক। 

লজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল গিরি বলেন, ভিড় এড়াতে অনেকে চন্দননগরে না গিয়ে তারাপীঠে এসেছেন। এখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক। পরের দিন রবিবার হওয়ায় গতবারের থেকে ভিড় কয়েকগুণ বেড়েছে।  

তারাপীঠ লাগোয়া দেখুরিয়া গ্রাম ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে জগদ্ধাত্রী পুজোর মানচিত্রে। মণ্ডপ, আলো আর প্রতিমার নতুনত্বের টানে বাইরের বহু মানুষ দেখুরিয়ায় ভিড় করছেন। জনশ্রুতি, প্রায় ৭০০বছর আগে দক্ষিণা কালীর পুজোর সঙ্গে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী মায়ের আরাধনা। প্রথম দিকে গ্রামের মঙ্গল কামনায় তাল পাতা দিয়ে ঘেরা জায়গায় অস্থায়ী বেদী বানিয়ে তন্ত্র মতে মায়ের আরাধনা করা হতো। বর্তমানে অবশ্য স্থায়ী বেদী নির্মাণ হয়েছে। এখানে দক্ষিণা কালী গ্রাম্য দেবতা। আর জগদ্ধাত্রী ইষ্টদেবী। শনিবার সকালে আদিবাসী নৃত্য, ঢাক ও কাঁসর বাজনা সহযোগে ঘট আনার শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন মহিলারা। পঞ্জিকা মেনে এদিন সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজো হয়।

পুজো উদ্যোক্তা সৌমেশ্বর ভট্টাচার্য, পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, আগে গ্রাম্য দেবতার মন্দিরের সামনে একটি ছাগ বলি দেওয়া হয়। পরে ইষ্টদেবীর সামনে আরও তিনটি বলি হয়। রাতে প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষকে পাত পেড়ে ভোগ খাওয়ানো হয়। পুজো উপলক্ষে মন্দির চত্বরে মেলা বসেছে। রবিবার দশমীপুজো শেষে প্রতিমা বিসর্জন হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tarapith temple, #Jagadhatri Puja

আরো দেখুন