২০২৪শের খেলা মোদীর বিরুদ্ধে মমতারই, বলছে অন্যতম মার্কিন সংবাদ সংস্থা এনপিআর-অ্যাপল
কলকাতার রাস্তা জোড়া এক মহিলার হাস্যোজ্জ্বল মুখ। কলকাতা সিটি বাসের পাশে, গঙ্গা নদীর তীরে পোস্টারেও এক মুখ। তার ছবি কখনো দুর্গা হিসেবে, কখনো বা মাদার ইন্ডিয়া হিসেবে। তিনি আর কেউ নন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন এক রাজ্যের শাসনের ভার তাঁর ওপর যার জনসংখ্যা অনেক দেশের থেকেও বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ কোটি মানুষের শাসনকর্তা। এরকমভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলে ধরেছে অন্যতম মার্কিন সংবাদ সংস্থা এনপিআর-অ্যাপল।
আক্রমনাত্বক বক্তৃতা, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী, এই ৬৬ বছরের সাদা সুতির শাড়ি পরিহিতা মহিলাকে গোটা দেশের ‘দিদি’ করে তুলেছে। সাম্প্রদায়িকতার নামে মোদীর দেশ ভাগের চক্রান্তের তিনিই একমাত্র ‘অ্যান্টিডোট’। আর তাঁর এই আদৰ্শই চলতি বছরের মে মাসে বিধানসভা ভোটে তাঁকে বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছে। এরকমই মনে করছে এনপিআর-অ্যাপল।
এনপিআর-অ্যাপল-এর বক্তব্য অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী ভারতীয়দের মমতাই এখন শেষ ভরসা। তিনি ইতিমধ্যেই মোদীর হিন্দুবাদী নীতির তীব্ৰ সমালোচক।
তাঁর জীবনের ওপর ভিত্তি করেই ২০১৯ সালে ‘বাঘিনী’ নামের একটি বাংলা সিনেমা তৈরি হয়েছিল। এ বছরের টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ১০০ জন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বের তালিকাতেও রয়েছেন তিনি। পরিবার তন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েক দশকের মধ্যে তিনিই ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় আঞ্চলিক, অহিন্দিভাষী নেত্রী যিনি গোটা দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এমনই মনে করছে এনপিআর-অ্যাপল সংস্থা।
পরিবারের সাহায্য ছাড়াই পিতৃতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন তিনি। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে দুধের ডিপো থেকে দুধ এনে রাস্তায় বিক্রি করে চালাতে হয় নিজের এবং পরিবারের পেট।
কংগ্রেসের যুবনেত্রী থেকে শুরু করে মাত্র ২৯ বছর বয়সে সাংসদ হওয়া। তারপর কংগ্রেস ছেড়ে ১৯৯৮ সালে নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করা। তিনিই বাংলার অগ্নিকন্যা।
তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য ১০ বছর আগে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে নিজের দলের সরকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া।
তিনি বেশ কয়েকবার ক্যাবিনেট মন্ত্রীও হয়েছেন। তিনিই ভারতের প্রথম মহিলা কয়লা এবং রেলমন্ত্রী। তিনি ক্রীড়া এবং শিশু ও নারী কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রীত্বও সামলেছেন।
এনপিআর-অ্যাপল সংস্থা মনে করছে তিনি মোদীর বিজয় পথে ৫ ফুটের একটি কাঁটা। তাঁর সাদা সুতির শাড়ি যেন মাদার টেরেসা, গান্ধীর মতোই সততার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু কিছু ছবিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে ভাঙা পায়ে ফুটবল খেলতে। বিধানসভা ভোটে তিনি ভাঙা পা নিয়েই হুইল চেয়ারে বসে প্রচার করেছেন। স্লোগান ছিল খেলা হবে। আর তারই প্রতীক সেই ছবি। তৃণমূলের দাবি ছিল বিজেপি কর্মীরাই ইচ্ছে করে মমতার পা ভেঙেছিল।
মুসলিম তোষণ নিয়ে মমতাকে জর্জরিত করতে বার বার ভুয়ো ভিডিও প্রকাশ করেছে বিজেপি। কিন্তু দমে যাননি তিনি। হিন্দু- মুসলিম নির্বিশেষে রাজ্যবাসীর জন্যে একের পর এক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প এনেছেন।
এক রাজনৈতিক সংবাদদাতার মতে, ‘এক অহিন্দিভাষী রাজ্যের আঞ্চলিক পোশাক পরিহিতা কোন নেতা বা নেত্রী দেশের প্রেক্ষাপটে এর আগে কখনো এত প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেননি।’
তৃণমূল এখন বাংলা ছেড়ে অন্যান্য রাজ্যেও পা বাড়িয়েছে। ত্রিপুরা এবং গোয়ায় ইতিমধ্যেই গেরুয়া ডেরায় সফলভাবে দাঁত ফুঁটিয়েছে তারা। তাদের লক্ষ্য ২০২৪- এ মোদীর আসন ছিনিয়ে নেওয়া। সেই লক্ষ্যে কতোটা সফল হবেন মমতা তা সময় বলবে, এরকমই ভেবেছে এনপিআর-অ্যাপল সংস্থা।
ভারতীয় মহিলারা এখন অনেক বেশি করে ভোট দিচ্ছেন। তাদের স্বামী বা পরিবার নয় নিজেদের প্রার্থী তারা নিজেই নির্বাচন করছেন। সেক্ষেত্রে মহিলা ভোটাররা এই মুহূর্তে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারাই এখন সিদ্ধান্ত নেবেন দেশে কোন সরকার থাকবে। আর মহিলাদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় তাদের ‘দিদি’। এ দিক থেকে যে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন মমতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, মনে করছে এনপিআর-অ্যাপল সংস্থা।