দেশ বিভাগে ফিরে যান

রামমন্দির চত্বরে নামে-বেনামে জমির কারবার চালাচ্ছেন জনপ্রতিনিধি, সরকারি আমলারা

December 22, 2021 | 2 min read

রামমন্দির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই জমি কেনাবেচার আঁতুরঘরের পরিণত হয়েছে অযোধ্যা। উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী,আমলরা, বিধায়কেরাই এই বেআইনি কারবার চালাচ্ছেন।

২০১৯সালের ৯ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দির নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। তারপর থেকেই রামমন্দির চত্বরে জমি কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মন্ত্রী-আমলা-বিধায়করা। নামে-বেনামে চলছে জমি খরিদ! কেবল জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তারাই নন, তাদের আত্মীয়রাও দেদার জমি কিনছেন। অযোধ্যা যেন রিয়েল এস্টেটের প্রাণ কেন্দ্র। 

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট তৈরি হওয়ায় পর থেকে প্রায় ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রামমন্দির তৈরি হওয়ার পরের লাভের আশায় ভিড় করছেন অনেকেই। ফায়দা তুলতে তারা জমি কিনে রাখছেন এখন থেকেই, ক্রেতাদের তালিকায় রয়েছেন, স্থানীয় বিধায়কেরা। অযোধ্যায় কাজ করছেন এমন আমলা-আধিকারিকদের আত্মীয়-পরিজনরাও রয়েছেন ক্রেতাদের তালিকায়। এমনকি স্থানীয় রেভিনিউ অফিসের কর্মীরা যাদের কাজ এসব দেখা, তারাও রয়েছেন এই তালিকায়। এক বেসরকারি সাংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। 

সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনোর পর থেকেই রামমন্দির সংলগ্ন ৫ কিলোমিটার বৃত্তের মধ্যে নানান জায়গায় জমিগুলো কেনা হয়েছে। একদিকে যেমন অযোধ্যার রাজ্য ওবিসি কমিশনের সদস্য থেকে শুরু করে বিধায়ক, মেয়ররা নিজের নামেই জমি কিনেছেন। অপরদকে, সাব ডিভিশানাল ম্যাজিস্ট্রেট, অযোধ্যা পুলিশের ডিআইজি, সার্কেল ইন্সপেক্টর, ডিভিশানাল কমিশনার, স্টেট ইনফরমেশন কমিশনার ইত্যাদি পদাধিকারীদের আত্মীয়স্বজনেরা জমি কিনেছেন। এমন প্রায় ১৪ টি ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। 

অন্যদিকে প্রায় ৫ টি ক্ষেত্রে জমি হস্তান্তর নিয়ে সমস্যা দেখা গিয়েছে। জমি কেনাবেচা নিয়ে নানান অসঙ্গতি রয়েছে। মহর্ষি রামায়ণ বিদ্যাপীঠ ট্রাস্টের (MRVT) বিরুদ্ধে দলিত গ্রামবাসীদের থেকে জমি কেনার অভিযোগ রয়েছে। আবার দেখা যাচ্ছে অভিযোগের অনুসন্ধানকারী সরকারি আধিকারিকদের আত্মীয়েরাই সেই জমি কিনছেন। নানা রকম ভাবে সামগ্রিক পরিস্থিতির জল ঘোলা করা হচ্ছে। অন্ততঃ চারটি এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে, যেখানে জমি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দলিতের জমি কেনার অভিযোগ করা হয়েছে। তারা যখন বিক্রি করতে যাচ্ছেন তখন এই দলিতের জমি কেনার অভিযোগ সামনে আনা হচ্ছে। যারা অভিযোগ আনছেন সেই সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মীয়দের পরে ঐ জমি কিনতে দেখা যাচ্ছে । সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এ উত্তরপ্রদেশ। 

এমনই একটি অভিযোগ উঠেছে এম পি আগরওয়ালের বিরুদ্ধে। তিনি ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে অযোধ্যার ডিভিশানাল কমিশনার পদে আসীন রয়েছেন। তার শ্বশুড় কেশব প্রসাদ আগরওয়াল ২০২০ সালের ১০ই ডিসেম্বর ৩১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মহর্ষি রামায়ণ বিদ্যাপীঠ ট্রাস্ট থেকে বরহাটা মঞ্জা অঞ্চলে ২,৫৩০ বর্গ মিটার জমি কেনেন। ঐ একই দিনে ডিভিশনাল কমিশনারের শ্যালক আনন্দ বর্ধন একই গ্রামে এমআরভিটি কাছে থেকে সাড়ে পনেরো লক্ষ টাকা দিয়ে ১২৬০ বর্গ মিটার জমি কিনেছিলেন। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা গিয়েছে, ঐ কমিশনারের স্ত্রী, তাঁর বাবার কোম্পানি হেলম্যান্ড কনস্ট্রাকটরস অ্যান্ড বিলডার্স লিমিটেডের ব্যবসায়ীক অংশীদার। এইভাবেই নানা রকম অসদুপায় অবলম্বন করে রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে অযোধ্যায় জমির কারবার জমে উঠেছে। বলাইবাহুল্য, এই বেআইনি জমি কারবারের নেপথ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সুস্পষ্ট মদত এবং সমর্থন রয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Uttar Pradesh, #bjp, #Ram Temple, #Ayodhya Land Deal

আরো দেখুন