পথদুর্ঘটনা রুখতে রাতের শহরে তৎপর কলকাতা পুলিশ
রাতের শহরে পথদুর্ঘটনা রুখতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করল কলকাতা পুলিশ। পথ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হল মদ্যপান করে গাড়ি চালানো।
এবার মদ্যপান করে গাড়ি চালানো রুখতে কলকাতা পুলিশকে অতি সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ন হতে দেখা গেল। পুলিশি তৎপরতা শুরু হতেই বিগত ছয় দিনে ২১৯ টি এমন মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। ব্রেথালাইজারে পরীক্ষা করার মাধ্যমে এই অভিযান চলছে। সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে ১১২ টি কেস এবং সোমবার ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ৮৮ টি মধ্যপান করে গাড়ি চালানোর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ টি করে এমন ঘটনা ধরা পড়ছে। এক পুলিশ কর্মীর কথায়, এই সংখ্যাটা ভাসমান হিমবাহের চূড়া মাত্র। রাত নটার পর থেকে শহর জুড়ে নানান প্রান্তে সর্বমোট ত্রিশটি জায়গায় ধর-পাকড় চালানো হচ্ছে।
পথ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে, প্রতিদিন পুলিশের তরফে তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে পরিবহণ ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ লাগু হওয়ার আগে, ৮ই নভেম্বর থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১৯ টি করে মোট ৯৫০ টি মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ হল উৎসবের মরশুম, ফলে এমনিতেই ঐ সময় এমন ঘটনার সংখ্যা বেশি থাকে। লাল বাজারের এক পুলিশ আধিকারিকের কথা ব্রেথালাইজার ফের চালু হওয়ার পরে, প্রতিদিন গড়ে ৩৭ জন করে মোটরবাইক আরোহী ধরা পড়ছে।
গত শনিবার সুলেখা ক্রসিং-এর কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ছয়জন আহত হয়েছে। পুলিশ তরফে অভিযোগ, মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গত সপ্তাহে মিনি ট্রাকের ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে, অভিযুক্ত ট্রাক ড্রাইভার বিরুদ্ধে মদ খেয়ে রাতে গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। বেলঘরিয়া ট্রাফিক গার্ডের এক সার্জেনের কথায়, রাতে নাকা চেকিংয়ের সময় দেখা যাচ্ছে গাড়ির মধ্যে যুবক যুবতীরা মদ্যপান করছেন। সামগ্রিক ঘটনায় পুলিশ খুবই চিন্তিত। সব অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার অফ পুলিশদের অতি সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সাময়িক সময়ের জন্য বাতিল করে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট, মিডিল্টন স্ট্রিট এবং পার্ক সার্কাস এলাকায় সবচেয়ে বেশি পুলিশি ধর-পাকড় চোখে পড়চ্ছে। সুলেখার দুর্ঘটনার পরে লালবাজার তরফে, যাদবপুর-বেহালা অঞ্চলে পুলিশকে সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি মিলিয়ে ২৫টি ট্রাফিক গার্ডকেই সপ্তাহান্তে রাতে নাকা চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিশনার ভিনীত কুমার গোয়েলের তরফে কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কিভাবে নজরদারি চালানো হবে তার জন্য এসওপি তৈরি করা হয়েছে। সীমিত শক্তি নিয়ে পুলিশের তরফে কাজ চালানো হচ্ছে, কারণ ৬০ শতাংশ সার্জেন করোনার বুস্টার ভ্যাকসিন নিয়েছেন, যাদের তিনটি করে টিকা নেওয়া হয়েছে তারাই কেবল নাকা নজরদারিতে থাকতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে। ডিসি ট্রাফিক অরিজিৎ সিনহার কথায়, পথ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য, ব্রেথালাইজার পরীক্ষা যাতে বাধ্যতামূলকভাবে করা হয় তা সুনিশ্চিত করা হবে। পথ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের এই ভূমিকায় স্বভাবতই খুশি শহরবাসী।