লখিমপুরের কৃষকদের হাতে উত্তরপ্রদেশের ভাগ্য! চিন্তায় গেরুয়া শিবির
রাজ্যের তরাই অঞ্চল যে নির্বাচনী আগ্রহের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে একথা স্বপ্নেও ভাবেনি উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি। জাতপাতের বাইরে গিয়ে, উচ্চবর্ণ, দলিত, হিন্দু, মুসলিমকে ছাপিয়ে কৃষকরাই যে এভাবে এই গোবলয়ের রাজধানীর ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে, একথাও ছিল অজানা। ২০২১ সালের অক্টোবর মাস সব সমীকরণ, রসায়ন আর নির্বাচনী অঙ্ক পাল্টে দিয়েছে। রাজ্যের প্রান্তিক জেলা লখিমপুর খেরির প্রান্তিক এক গ্রাম্য জনপদ টিকুনিয়া সংলগ্ন এলাকার কৃষকদের ক্ষোভ সামলানোই যে ভোটে প্রধান কর্তব্য হবে এবার সেটা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেনি বিজেপি। আগামিকাল উত্তরপ্রদেশের ৬০টি আসনে ভোটগ্রহণ। তালিকায় রয়েছে হাই প্রোফাইল লখনউ থেকে রায়বেরিলি। অথচ গোটা দেশের রাজনীতির মন পড়ে রয়েছে ওই প্রান্তিক লখিমপুরেই।
বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল করা কৃষকদের জিপে তলায় পিষ্ট করে মেরে ফেলা হয়েছিল এখানেই। আর এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠেছে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্রের পুত্রের। প্রবল জনরোষ এবং দেশজোড়া উত্তাপের আঁচে মন্ত্রীপুত্র আশিস মিশ্রকে রাজ্যের যোগী আদিত্যনাথ সরকার গ্রেপ্তার করলেও ঘটনাচক্রে তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন ভোটের প্রাক্কালে। সুতরাং কৃষক শ্রেণির ভোটের গতিপ্রকৃতি বুধবার কোনদিকে যাবে? এই শঙ্কায় আতঙ্কিত বিজেপি। লখিমপুর খেরি নিয়ে কোনওদিন ভাবতে হবে, এই কথা চিন্তাও করেনি বিজেপি।
পরিসংখ্যানগতভাবে বুধবার চতুর্থ দফায় যে ৬০ আসনে ভোটগ্রহণ হতে চলেছে, তার সিংহভাগ কেন্দ্রেই ২০১৭ সালের ঝড় তুলেছিল বিজেপি। সেই বছর শুধু লখিমপুর নয়, সংলগ্ন পিলিভিট, সীতাপুর সর্বত্র বিজেপি প্রায় সব আসনে জয়লাভ করে। অবধ অঞ্চলেও বিজেপি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু কৃষকদের আন্দোলন গোটা অঙ্ককেই টালমাটাল করে দিয়েছে। কৃষকরা রোদে জলে অনড় হয়ে আন্দোলন করেছেন দিল্লির সীমানায়। কিন্তু তার প্রভাব পড়েছে গোটা তরাইয়ের প্রান্তে প্রান্তে। তারই পরিণতি ছিল লখিমপুর খেরির ওই কৃষক আন্দোলন। প্রথম তিনটি দফার ভোটের পরই বিজেপির টেনশন দ্বিগুণ হয়েছে। এমনকী গরিষ্ঠতা না পাওয়ার আশঙ্কায় রীতিমতো স্ট্র্যাটেজি মিটিং চলছে দিনভর। দিল্লির তাবৎ নেতানেত্রীরা ছুটে এসেছেন উত্তরপ্রদেশ। গোটা রাজ্যটাকেই চষে ফেলছেন তাঁরা। হাতে আর মাত্র চারটি দফার নির্বাচন বাকি। অবধ এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্কট আরও তীব্র হতে বাধ্য। সেই কারণেই, হঠাৎ উন্নয়নের ঘোষণাকে ছেড়ে এখন যোগী আদিত্যনাথ কখনও বলছেন বিনামূল্যে ট্যাব দেওয়া হবে, কখনও আবার বলছেন, অযোধ্যার রামমন্দির হবে জাতীয় মন্দির।