করোনাকালে বাংলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ব্যাপক উন্নতি, বিনিয়োগ হাজার কোটিরও বেশি
সিঙ্গুরের পর থেকেই বিরোধীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘শিল্পবিরোধী’ তকমা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সেই প্রচার যে কতটা অসার, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দপ্তর স্বাস্থ্যেই রয়েছে তার হাতেগরম প্রমাণ। কোভিডে যেখানে গোটা দেশের অর্থনীতিতেই সমস্যা, সেখানে গত ১ বছরে বাংলায় শুধু স্বাস্থ্যে বিনিয়োগই হয়েছে হাজার কোটির বেশি। অনুমোদন পেয়েছে ৬৬টি নতুন বেসরকারি নার্সিং স্কুল, চালুর মুখে ৩টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। ১টিতে ছাত্র ভর্তি শুরু হয়ে গিয়েছে। বাটানগর, সাঁতরাগাছি ও রাজারহাটে আরও ৩টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ৩টি প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্য গোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, বড়-ছোট-মাঝারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, প্যাথোলজিক্যাল সেন্টার, ডে কেয়ার ইউনিট ইত্যাদি চালুর জন্য স্রেফ এক বছরে আবেদন জমা পড়েছে ১৯১১টি!
বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের এক পোড়খাওয়া আধিকারিক বলেন, সবই আসলে চাহিদা আর জোগানের বিষয়। চাহিদা আছে। তাই জোগানেরও ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। নার্সিংয়ে প্রচুর সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডাক্তারিতেও তাই। মেডিক্যাল অফিসার থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব এখনও প্রচুর। তাঁর ভাষায়, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে ভারতের আরও একটি বৃহৎ মেডিক্যাল হাব হতে চলেছে বাংলা। তখন দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারত নয়, সারা দেশ বলবে, ‘পুবে তাকাও’!
সূত্রের খবর, একটি ১৫০ আসনের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়তে আনুমানিক খরচ লাগে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। একটি বেসরকারি নার্সিং স্কুল করতে খরচ ২-৭ কোটি। স্বাস্থ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ছে হু হু করে। আর তার কেন্দ্রবিন্দু বাংলা।
সূত্রের খবর, ডাঃ রঞ্জন পাইয়ের মণিপাল হাসপাতাল গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই সল্টলেকের একটি ঝাঁ চকচকে বেসরকারি হাসপাতালের মালিকানা হাতে নিয়েছে। পূর্ব ভারতের আর একটি বড় গোষ্ঠীর হাসপাতাল কেনার বিষয়ে তারা অনেকটাই এগিয়েছে। ডাঃ দেবী শেঠির নারায়াণা হেলথ-এর রাজ্যে ৫টি বড় হাসপাতাল রয়েছে ইতিমধ্যেই। তারা পরবর্তী বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে। ডাঃ প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি’র অ্যাপোলো ২০২৪ সালের মধ্যে বাটানগরে নতুন মেডিক্যাল কলেজ চালু করতে চাইছে। প্রসঙ্গত, এই ৩টি গোষ্ঠী বর্তমানে দেশের প্রথম তিন হাসপাতাল গোষ্ঠী। এছাড়া ছোট ও মাঝারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য গোষ্ঠী চালু করছে বিভিন্ন রোগের নতুন বড় হাসপাতাল। একটি বাঙালি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান চালু করবে নয়া ক্যান্সার হাসপাতাল।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, গত ১ বছরে জমা পড়া ১৯১১টি আবেদনের মধ্যে ৪০০টি ছিল হাসপাতাল-নার্সিংহোমের। তার মধ্যে ১০০ শয্যার বেশি হাসপাতালের সংখ্যা প্রায় ৪০টি। লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থাকা নয়, এর মধ্যে এক হাজারের বেশি আবেদন মঞ্জুর করে দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর।