রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

পুরভোটে বাংলার মানচিত্র থেকে প্রায় সাফ বিজেপি, রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিক্ষুব্ধ নেতা

March 3, 2022 | 3 min read

রাজ্যের ১০৮ পুরসভার নির্বাচনে খাতা খুলতে পারেনি BJP। বিধানসভার পর পুরসভাতেও ধরাশায়ী হল পদ্ম শিবির। বাংলা BJP শূন্য হওয়ার জন্য গেরুয়া শিবিরকেই দায়ী করলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তাঁর দাবি, নতুন নেতাদের সর্বেসর্বা করার জন্যই রাজ্য BJP-র এই হাল। অমিতাভ চক্রবর্তী, অমিত মালভিয়াদের তোপ দাগার পাশাপাশি খোদ BJP রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও কটাক্ষ করেছেন জয়প্রকাশ। তাঁর কথায়, “৭২ লাখ মানুষ আজ BJP -কে রেডকার্ড দেখিয়েছে। এটা তো পরিষ্কার যে BJP -র তৎকাল নেতাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছে সাধারণ মানুষ। BJP -র নতুন টিমের কোচ অমিতাভ চক্রবর্তী বা ভার্চুয়াল চক্রবর্তী। এবার তো তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। পুরো টিমের এইরকম শোচনীয় পরাজয় হলে তো কোচের পদত্যাগ অবশ্যম্ভাবী হয়।”

বুধবার ভোটের ফল ঘোষণার পর Suvendu Adhikari প্রসঙ্গে জয়প্রকাশের বিস্ফোরক মন্তব্য, “আমার দুঃখ হয় শুভেন্দু বাবুকে দেখে। মায়াও হয়। তিনি ঘরে বাইরে লড়াই করছেন। তিনিও তমলুকের কাঁথিতে পরাজিত। তাঁর নিজের গড় হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তিনি বিরোধী দলনেতা। তাঁকে সরানোর জন্য BJP অফিসে নতুন করে পরিকল্পনা চলছে। কোনওদিন দেখব এখনকার নেতারা ‘শুভেন্দু বিদায় কাব্য’ লিখবেন।”

এদিন BJP রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সরাসরি তোপ দেগে জয়প্রকাশ বলেন, “বালুরঘাটের নিজের যে ওয়ার্ড শুধু সেখানে হেরেছেন তা নয়। নিজের যে বুথ সেটাতেও হেরেছেন। এখন যে সমস্ত নেতা যাঁরা BJP চালাচ্ছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই শোচনীয়ভাবে হেরেছেন। কারণ, এখন কোনও সংগঠন নেই।”

তাঁর সংযোজন, “এখন BJP-র টেকনিক্যাল ডিরেক্টর অমিত মালভিয়া। তাঁরও তো পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু, এঁরা পদত্যাগ করবেন কিনা জানি না। এখন যাঁরা BJP -র হয়ে টিভির সামনে আসেন, তাঁরা সকলেই তৎকাল নেতা। অর্জুন সিং তো তৎকাল নেতাই। আমাদের মাননীয় সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও তৎকাল নেতা। আড়াই বছর হল রাজনীতিতে এসেছেন। এঁরা সকলেই কিন্তু নিজের নিজের জায়গায় শোচনীয়ভাবে পরাজিত। অর্জুন সিংয়ের লোকসভা কেন্দ্রের আটটি পুরসভার ভোট হয়েছে। একটিতেও খাতা খুলতে পারেনি BJP। তিনি নাকি খুব নামিদামী নেতা। ১৮ জন সিকিউরিটি নিয়ে ঘোরেন।”

Municipal Election -এর হার সম্পর্কে প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেন, “২০২১ -এর নির্বাচনের পর কোনও পর্যালোচনা হল না! কেন আমাদের সংখ্যা ৭৭ -এ আটকে গেল, কী কী জিনিস দরকার, কী কী করতে হবে সেটা নিয়ে কেউ আলোচনা করলেন না। আজ তাই পার্টি পিছিয়ে যেতে যেতে এখানে এসে পৌঁছেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আজ BJP-র যে অবস্থা তার জন্য কতিপয় নেতা দায়ী। BJP-কে ঠিক করতে গেলে পুরো সংগঠন ঢেলে সাজাতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর মনোবল হারিয়ে যেসব কর্মী বসে গিয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আবারো সঙ্ঘবদ্ধ করতে হবে। কিন্তু, করবে কে? এই অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো লোকরা? যাঁরা রাজনীতি জানেন না, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ জানেন না, সংগঠন জানেন না, তাঁদের মতো লোক?”

রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি দিল্লিকেও এদিন তোপ দাগেন জয়প্রকাশ। বলেন, “এত বড় দেশ চালাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা বাংলার অবস্থা জানেন না? শুনেছি, দিল্লির নেতৃত্ব এখন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। আমাদেরই এক নেতা শান্তনু ঠাকুর দিল্লিতে গিয়ে এখানকার অবস্থার কথা বলেছেন। দিল্লি কিছু না করলে পার্টির শেষকৃত্য করতে হবে কিছুদিনের মধ্যেই। রাজ্যের বেশিরভাগ কর্মী আমাদের সঙ্গে আছেন। অর্থাৎ জয়প্রকাশ মজুমদার ও তাঁর সঙ্গে যাঁরা আছেন তাঁদের পাশে আছেন। জেলা থেকে আজও কয়েকশো ফোন এসেছে আমাদের কাছে।”

BJP-র শোচনীয় হার প্রসঙ্গে নেতা বলেন, “আমি ভাবছি যে এখন এই পার্টি এই জায়গায় এসে পৌঁছল কী করে? CPIM আমাদের থেকে ভালো ফল করেছে। নির্দল প্রার্থীরা আরও ভালো ফল করেছে। এবার ২৩ শতাংশ ভোট কমেছে BJP -র। এর জন্য কারা দায়ী? কর্মী বা সংগঠন তো রাতারাতি উবে যায়নি। কিছুজন পার্টিকে এই জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। সারা পশ্চিমবঙ্গে যেসব BJP কর্মী রয়েছেন তাদের স্বার্থে আজই সংগঠন নতুন করে সাজানো উচিত। পুরনো সব নেতাদের বাদ দিয়ে এখন কাজে নেতৃত্ব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে সেই নেতৃত্ব কে বাদ দিয়ে আবার ঢেলে সাজিয়ে BJP-র মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা উচিত বলে আমি মনে করি।”

আবেগপ্রবণ রাজনীতিকের কথায়, “পার্টি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করেছে। বলা চলে, পার্টির কয়েকজন নেতা করেছেন। আর সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই পার্টিকেই সাময়িক বরখাস্ত করল।”

দলবদলের সম্ভাবনা রয়েছে? সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন এড়িয়ে জয়প্রকাশের উত্তর, “এই মুহূর্তে আমি দলের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার উদ্দেশ্য পার্টিকে পরিচ্ছন্ন ও পরিশ্রুত করে আবারও কোমর বাঁধা।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #suvendu adhikari, #jay prakash Majumdar

আরো দেখুন