কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

বইমেলায় উদ্বোধন হল শঙ্খ ঘোষ মঞ্চের, কবিই হয়ে উঠলেন দুই বাংলার মাঝের মিলনসেতু

March 3, 2022 | 2 min read

 বেঁচে থাকলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জীবনের ৯০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের দিনটিতে তিনি নিজেকে কতটা আড়ালে রাখতেন সেই প্রশ্ন ওঠা এখন অবান্তর। কিন্তু এটা ঠিক তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে পদ্মাপারের বাংলা থেকে দূরভাষগুলোও ভিড় এড়াতে পারত না। সেটা যে কতটা সত্যি বুধবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলা দেখিয়ে দিল।

শঙ্খ ঘোষ (Shankha Ghosh) প্রয়াত হয়েছেন গত বছরের ২১ এপ্রিল। করোনা পরবর্তী সময়ে সাহিত্যও অন্য খাতে হয়তো বইতে শুরু করেছে। বইলেও কিন্তু শঙ্খ ঘোষকে নিয়েই চলবে। বইমেলায় দুই বাংলার মিলনে সেতু হয়ে রইলেন তিনিই।

বইমেলায় উদ্বোধন হল শঙ্খ ঘোষ মঞ্চের। গিল্ডের দুই কর্তা সুধাংশুশেখর দে ও ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েও দিলেন, এটাই যাতে প্রতিবারই স্থায়ী মঞ্চ হিসাবে থাকে সেই চেষ্টা থাকবে। এর আগে দেব সাহিত্য কুটির-এর রূপা মজুমদার ঠিক এই আবদারই রেখেছেন। আর যাঁর হাত ধরে মঞ্চের আনুষ্ঠানিক সূচনা সেই কামাল চৌধুরী স্মৃতিচারণ করলেন শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড়তা নিয়ে। বলা ভাল আত্মীয়তার। কবি কামাল চৌধুরী বাংলাদেশের মুখ্যসচিবও ছিলেন, এখন শেখ মুজিবের ১২৫ বছর উদযাপনের জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব। ওপার বাংলার কবি তারিক সুজাদ বা উপদূতাবাসের কর্তারাও ছিলেন। এপারের মন্ত্রী লেখক হুমায়ুন কবীর, সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, অভীক মজুমদার, কবি প্রসূন ভৌমিক, দে’জ পাবলিশিং-এর শুভঙ্কর দে ছাড়াও ছিলেন শঙ্খ ঘোষের কন্যা সেমন্তী। ছিলেন শিকাগোর বাঙালি সাহিত্যিক সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্চালনায় ইমানুল হক। প্রতিদিনই লিটল ম্যাগাজিনের স্টলের পাশের এই মঞ্চে হবে গান, কবিতার আসর বা আড্ডা।

‌আজ ও কাল বইমেলা প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ দিবস। এদিন সুদৃশ্য বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে এলেন ইমদাদুল হক মিলন। কিছু দূরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুদিন সম্পর্কিত ভুলও শুধরে নেওয়া হয়েছে এদিন। বইমেলা এগিয়েছে সেই পুরনো স্রোতেই। হয়েছে একের পর এক বই প্রকাশ। বি বি কুণ্ডু অ্যান্ড গ্র্যান্ড সন্সের পক্ষে এমনই এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সস্ত্রীক অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। ছিলেন সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, বেথুন কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণা রায়, কবি সুজিত সরকার, বিশ্ববিকাশ কুণ্ডু। হরিপদ ভৌমিক-এর বই ‘সেকালের কলকাতা’য় রসগোল্লার ইতিহাস প্রকাশিত হয়েছে অন্য ভাবে। চঞ্চলকুমার ঘোষের গবেষণায় এসেছে ঈশ্বরভূমি বারাণসী। বাচিক শিল্পী মেঘ বসুকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ফোটোগ্রাফার অতনু পাল বারাণসীর ছবি তুলেছেন। গীতিকণ্ঠ মজুমদারের বই ‘রবীন্দ্রনাথের ধর্ম বনাম পৌত্তলিকতা’ প্রকাশ হয়েছে।

ভীম গ্রন্থের লেখক পীযূষ গায়েন উল্লেখ করলেন, কলেজ স্ট্রিট থেকে বাবাসাহেবের বিষয়ে বই প্রকাশ কম হয়েছে। হরিপদবাবু কীভাবে রসগোল্লা বাংলার হিসাবে স্বীকৃতি পেল বললেন। ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই ওড়িশার দাবির পর শুরু হয় রস-যুদ্ধ। এদিন ‘গদ্য পদ্য প্রবন্ধের’ দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করেন পবিত্র সরকার। ছিলেন গায়ক লেখক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। এর মধ্যেই প্রেস কর্নারে জঙ্গলমহলের ও সেই সম্পর্কিত তিনটি বই প্রকাশের জন্য এসেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও বর্তমান মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। জাগো বাংলার স্টলে দেখা গেল সন্ধ্যা পেরিয়েও ভিড়। চলছে লোকগান। রয়েছেন দোলা সেন থেকে শুরু করে সাহিত্যিক বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী।

অন্যদিকে, সাহিত্যিক পৃথ্বীরাজ সেনের নতুন বই ‘বিশ্বের নির্বাচিত সাধক সাধিকা’ প্রকাশিত হয়েছে। সব ধর্মের ১৮০ জনের সাধকদের কথা রয়েছে গিরিজা লাইব্রেরির এই বইয়ে। এদিন কাব্যমহল করেছিল কবিতাপাঠের আসর। ছিল বই পড়ার আর পড়ানোর আরজি। ডালিয়া বসুরা মানুষকে কাছে টেনেছেন কবিতায়। অডিটোরিয়ামের বাইরে বেহালা বাজিয়ে মানুষের মন টানছিল এক যুবক। বইমেলায় এই টানগুলোই ফিরে ফিরে আসে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Shankha Ghosh, #Kolkata Book fair 2022, #shankha ghosh mancha

আরো দেখুন