দেশ বিভাগে ফিরে যান

জিএসটির নামে দেশের ব্যবসায়ীদের ফ্যাসাদে ফেলা হয়েছে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ বণিক সংগঠনগুলির

May 17, 2022 | 2 min read

 এক দেশ, একটাই কর ব্যবস্থা। এই ভাবনা থেকেই দেশে চালু হয়েছিল জিএসটি। কর ব্যবস্থার সরলীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েই সে পথে হাঁটে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হল কই? বরং জিএসটির নামে আদতে দেশের কয়েক কোটি ব্যবসায়ীকে ফ্যাসাদে ফেলা হয়েছে, এমনই অভিযোগ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির সর্বভারতীয় মঞ্চ কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের। তাদের বক্তব্য, নতুন এই কর ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে ১ হাজার ১০০টিরও বেশি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশোধনীর সংখ্যা ছিল ৯২৭টি। ফলে ক্রমশ জটিল হয়ে গিয়েছে জিএসটি আইন। অন্যদিকে রাজ্যগুলিকেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্রমশ অফিসারদের দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠছে এই পণ্য পরিষেবা কর। সব মিলিয়ে কার্যত ব্যবসা করাই দায় বলেই আঙুল তুলেছে ট্রেডারদের এই মঞ্চ।


জিএসটি নিয়ে ঠিক কী অভিযোগ দেশের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠনটির? তাদের বক্তব্য, প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে ব্যবসার পথ সহজ করার কথা বলছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিয়মিত ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’ সংক্রান্ত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। তাতে অংশ নিচ্ছে রাজ্যগুলি। কিন্তু জিএসটির মতো দেশের অন্যতম করকাঠামোটিতে যে ভূরি ভূরি গলদ রয়ে গিয়েছে, তার সুরাহা হয়নি এখনও। উল্টে গোটা ব্যবস্থাটি ক্রমশ জটিল হয়েছে। ফলে কর জমা এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পদক্ষেপগুলি নেওয়া রীতিমতো সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্র চাইছে, জিএসটি দেওয়ার যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করুন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু যেভাবে বারবার আইন সংশোধন করা হচ্ছে, তাতে এমনটা কি আদৌ সম্ভব? 


কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খান্ডেলওয়ালের সাফ কথা, সম্প্রতি জিএসটিতে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তাতে করদাতাদের স্বাভাবিক নিয়মে বিচার পাওয়ার রাস্তা নেই। কারণ, কর্তৃপক্ষকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যেখানে করদাতা বা ব্যবসায়ীকে কোনও নোটিস বা শুনানির সুযোগ না দিয়েই জিএসটি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা যেতে পারে। জিএসটি অফিসারদের হাতে অপার ক্ষমতা। অথচ তার যে চূড়ান্ত অপব্যবহার হতে পারে, সেই দিকে নজরই দেওয়া হয়নি। ফলে জিএসটি ধীরে ধীরে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠছে। যে স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা কেন্দ্র বারবার বলছে, বাস্তবে তা কি আদৌ হচ্ছে? প্রশ্ন প্রবীণবাবুর। তিনি আরও বলেন, ‘জিএসটি ব্যবস্থা কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বহু ব্যবসায় এখনও কম্পিউটার বা তাতে কাজ করার মতো লোক নিযুক্ত নেই। তাই আমরা বারবার বলছি, কম্পিউটার নির্ভরতা কমানো হোক। আয়করে যেমন কম্পিউটারের ব্যবহার অনেক কম, এক্ষেত্রেও তা করা যেতে পারে। কিন্তু এসব কানে তোলার লোক নেই।’  


জিএসটি চালুর পক্ষে বরাবরই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি সরকার তাড়াহুড়োয় যেভাবে তা চালু করেছে, তার বিরোধিতায় সরবও হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এতে সঙ্কটে পড়বে ব্যবসায়ী মহল। সেই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে সর্বত্র। এবার ব্যবসায়ী সংগঠনও সরব হল। তাদের দাবি, সরকার যদি জিএসটি জট খোলার বিষয়ে সহযোগিতা চায়, তারা সবসময় রাজি। কিন্তু সরকারকে আগে সেই সদর্থক চিন্তা করতে হবে। তা হবে কি, প্রশ্ন সেটাই।

অভিযোগ
জিএসটি বিধির সংশোধন হলে, তা সময়ে পোর্টালে তোলা হয় না। তার খেসারত দিতে হয় ব্যবসায়ীদের
চার বছর কেটে গেলেও, ন্যাশনাল অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালই তৈরি করেনি কেন্দ্র। সুরাহা পেতে নাজেহাল ব্যবসায়ীরা 
‘সেন্ট্রাল অ্যাডভান্স রুলিং অথরিটি’ গঠন করা হয়নি। ফলে রাজ্যগুলি নিজেদের মতো করে আইনের ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাচ্ছে না । আইনটি সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করতে গেলে ব্যবসায়ীদের সর্বস্তরে যেভাবে পরিকাঠামোগত সুযোগ করে দেওয়া দরকার, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Nirmala Sitharaman, #Economy, #GST, #GST Council

আরো দেখুন