কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

মোহনলাল, দলমাদলদের পর দমদমে উদ্ধার ক্লাইভের আমলের কামান, জানুন ইতিহাস

April 6, 2023 | 2 min read

উদ্ধার ক্লাইভের আমলের কামান ছবি সৌজন্যেঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৭৫৬ সিরাজ আক্রমণ করলেন কলকাতা, গুঁড়িয়ে দিলেন পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম। পার্কস্ট্রিট ছেড়ে পালালেন সাহেবরা। গ্রান্ড হোটেলের সামনে রানিমুদির গলিতে কামান রেখে চলল লড়াই। পতন হল ইংরেজদের, আলিবর্দির নামে কলকাতা হয়ে উঠল আলিনগর। যার পাল্টা পলাশী। কিন্তু অস্ত্রগুলো? যেগুলো সিরাজ রেখে গিয়েছিলেন! ব্রিটিশরা যেসব কামান ব্যবহার করেছিল সেগুলির কি হল? সব চাপা পড়ল কল্লোলিনী কলকাতার নীচে? হয়ত তাই। সেখান থেকেই উন্মোচিত হল কলকাতার ইতিহাসের নতুন দিক। প্রায় আড়াইশো বছর ধরে সবার চোখে সামনে পড়েছিল ইতিহাসের এই উপাদান। আদপে জিনিসটি হল একটি কামান। দমদম সেন্ট্রাল জেলের মোড়ে রাস্তার ধারে বহুদিন ধরেই উঁকি দিচ্ছিল একটি কামানের মুখ। মাটির উপরে উচ্চতা প্রায় এক ফুটের মতো। কামানটির প্রকৃত গভীরতা ঠিক কতটা তা জানা যায়নি। দিন পনেরো আগে এই কামানটি নিয়ে প্রথম হইচই শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, রাজ্য সরকারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি বিপ্লব রায় এই কামান উদ্ধারের উদ্যোগ নেন। অবশেষে ১৫ দিনের চেষ্টায় দমদম পুরসভা, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং সিইএসসির উদ্যোগে গতকাল অর্থাৎ বুধবার দমদম সেন্ট্রাল জেলের কাছেই যশোর রোডের মোড়ে ওই কামানটিকে মাটি খুঁড়ে বের করা হয়। কামানটিকে নিউ সেক্রেটারিয়েটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর।

দাঁড়া রে! দাঁড়া রে ফিরে! দাঁড়া এইক্ষণ
দাঁড়াও ক্ষত্রিয়গণ!
যদি ভঙ্গ দেও রণ,
গর্জিলা মোহনলাল, নিকটে শমন।
নবীনচন্দ্র সেনের কবিতা পলাশীর যুদ্ধের উল্লেখিত চরণে মোহনলাল কামানের কথা এসেছে। বিষ্ণুপুরে রয়েছে দলামাদল কামান, এটি মল্লরাজাদের আমলের অন্যতম নিদর্শন। মুর্শিদাবদে রয়েছে জাহানকোষা কামান। মুর্শিদকুলি খাঁ-র তোপখানা অন্যতম সেরা অস্ত্র ছিল এটি। আজও মুর্শিদাবাদে জাহানকোষা শোভা পাচ্ছে। হাজারদুয়ারীর মাঠে রয়েছে বাচ্চাওয়ালি তোপ।

মনে করা হচ্ছে, কামানটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের। উদ্ধার হাওয়া কামানটির দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ৮ ইঞ্চি। কামানটি প্রায় ১ ফুট মাটির উপরে ছিল। বাকি অংশ মাটির তলায়। কামান বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ১৭৬৩ থেকে ১৭৭০ সালের মধ্যে কামানটি তৈরি করা হয়েছিল। কামানের ওজন প্রায় ৬ টন। মনে করা হচ্ছে, কামানটি ১৮ কিলোগ্রাম ওজনের গোলা ১,২০০ থেকে ১,৫০০ গজ দূরে ছুঁড়তে পারত।

কামানের উদ্ধার স্থল থেকে ক্লাইভ হাউসের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। অনুমান করা হচ্ছে, কামানটি যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, হয়ত যশোর রোড থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেলের মধ্যবর্তী কোনও জায়গা তা রাখা ছিল। জানা গিয়েছে, আলিপুরে বা অন্যান্য জায়গায় কামানটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সত্তরের দশকে মেট্রো রেলের জন্য খনন কার্যের সময়ও মাটির নীচ থেকে কয়েকটি প্রাচীন কামান উদ্ধার হয়েছিল। তবে এই প্রথমবার এমন কোনও প্রাচীন কামান মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল। মনে করা হচ্ছে, এমন আরও কামান কলকাতায় রয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Kolkata, #History, #dumdum, #Robert Clive, #British, #canon, #clive regime

আরো দেখুন