পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

বৈশাখ মানেই তুলসী ঝরা, যে লোকাচারে মিশেছে শাস্ত্র

April 18, 2023 | 2 min read

বৈশাখ মানেই তুলসী ঝরা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বৈশাখের দাবদাহে চারিদিক একেবারে শুকনো। এই সময় তুলসী গাছে ঝরা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। একটা সময় অবধি তুলসী মঞ্চ ছাড়া বাড়ি কল্পনা করা যেত না। যদিও তা এখন অনেক জায়গাতেই লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবুও অনেকাংশে এখনও ঝরা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

একটি মাটির ঘটে ছিদ্র করে তুলসী গাছের উপর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তাতে জল দেওয়া হয়। ওই ছিদ্র থেকে একটু একটু করে জল তুলসী গাছের উপরে পড়ে। গরমের সময় গাছ জল পায়।
তুলসী জলদান মন্ত্র:
গোবিন্দবল্লভাং দেবীং ভক্তচৈতন্যকারিণীম্।
স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং কৃষ্ণভক্তিপ্রদায়িনীম্ ॥

অবন ঠাকুর লিখেছেন–
চৈত্র মাসে চড়ক সন্ন্যাস গাজনে বাঁধে ভারা,
বৈশাখ মাসে তুলসী গাছে দেয় বসুধারা।

বৈশাখ মাসে সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পায়, মনে করা হয়, এই সময় বিষ্ণুভক্তগণকে জলদান করা হলে শ্রীহরি প্রীত হন। বলা হয়, তুলসী হলেন শ্রীকৃষ্ণপ্রেয়সী। তুলসীদেবী সম্বন্ধে বলা হয়েছে, তুলসী দর্শনেই পাপ নাশ হয়, জলদান করলে যম ভয় দূর হয়, রোপণ করলে তাঁর কৃপায় কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শ্রীহরির চরণে অর্পণ করা হলে কৃষ্ণপ্রেম লাভ হয়। পদ্মপুরাণে রয়েছে, মহাদেব পুত্র কার্তিকেয়কে বলেন,
সর্বেভ্যঃ পত্রপুষ্পেভ্যঃ সত্তমা তুলসী শিবা।
সর্বকামপ্রদা শুদ্ধা বৈষ্ণবী বিষ্ণুসুপ্রিয়া ॥

সমস্ত পত্র ও পুষ্পের মধ্যে তুলসী হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ। তুলসী সর্বকামপ্রদা, মঙ্গলময়ী, শুদ্ধা, মুখ্যা, বৈষ্ণবী, বিষ্ণুর প্রেয়সী এবং সর্বলোকে পরম শুভা। সেই কারণে ভগবান শিব বলেন,
যো মঞ্জরীদলৈরেব তুলস্যা বিষ্ণুমর্চয়েঃ।
তস্য পুণ্যফলং স্কন্দ কথিতুং নৈব শক্যতে॥
তত্র কেশবসান্নিধ্যং যত্রাস্তি তুলসীবনম্।
তত্র ব্রহ্মা চ কমলা সর্বদেবগণৈঃ সহ॥

পদ্মপুরাণের ব্রহ্মখণ্ডে বলা হয়েছে,
গঙ্গাদ্যাঃ সরিতঃ শ্রেষ্ঠা বিষ্ণুব্রহ্মামহেশ্বরাঃ।
দেবৈস্তীর্থৈঃ পুষ্করাদ্যৈস্তিষ্ঠান্ত তুলসীদলে॥

অর্থাৎ, গঙ্গাদি সমস্ত পবিত্র নদী এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, পুষ্করাদি সমস্ত তীর্থ সর্বদাই তুলসীদলে বিরাজ করেন। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে রয়েছে, সমগ্র পৃথিবীতে সাড়ে তিন কোটি তীর্থ আছে। তুলসীর মূলে সমস্ত তীর্থ অবস্থান করে। তুলসীদেবীর কৃপায় ভক্তবৃন্দ কৃষ্ণভক্তি লাভ করেন এবং বৃন্দাবনে বসবাসের যোগ্যতা অর্জন করেন। যে নিত্য তুলসী সেবা করে, সে যাবতীয় ক্লেশ মুক্ত হয়ে অভীষ্ঠ সিদ্ধি লাভ করেন।

শাস্ত্রে তুলসীদেবীকে জলদান করা হলে তুলসীমূলে যে জল অবশিষ্ট থাকে তারও বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।

এই নিয়ে একটি লোককাহিনীও শোনা যায়, কোনও এক সময় এক বৈষ্ণব তুলসীদেবীকে জলপ্রদান ও পরিক্রমা করে গৃহে গমন করেন। কিছুক্ষণ পর এক ক্ষুধার্ত কুকুর সেখানে এসে তুলসীদেবীর মূলে অবশিষ্ট জল পান করে। কিন্তু তখনই এক ব্যাধ এসে তাকে বলতে লাগল, ‘কুকুর! তুই কেন আমার বাড়িতে খাবার চুরি করেছিস? মাটির হাড়িটাও ভেঙে রেখে এসেছিস? তোর উচিত শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড। ব্যাধ কুকুরটিকে হত্যা করে। যমদূতগণ কুকুরকে নিতে আসলে, বিষ্ণুদূতগণ সেখানে এসে হাজির হন এবং বলেন, এই কুকুর পূর্বজন্মে জঘন্য পাপ করার কারণে নানাবিধ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু শুধু তুলসী তরুমূলের জল পান করার ফলে এর সমস্ত পাপ নাশ হয়েছে, এমনকি সে বিষ্ণুলোকে গমনের যোগ্যতাও অর্জন করেছে। সেই কুকুর বৈকুণ্ঠের দূতের সঙ্গে ভগবৎধামে গমন করে।

বৈশাখে তুলসীর পাশাপাশি শালগ্রাম শিলায় জলদানের ব্যবস্থা করলে শ্রীহরি খুশি হন। শাস্ত্র বলছে,
তুলসীদলমাত্রেণ জলস্য চুলুকেন বা।
বিক্রীণীতে স্বমাত্মানং ভক্তেভ্যো ভক্তবৎসল॥

অর্থাৎ যে ভক্ত নিষ্ঠাসহ ভগবানের উদ্দেশ্যে তুলসীপত্র এবং এক অঞ্জলি জল নিবেদন করেন, ভগবানের কৃপা সেই ভক্তর উপর সম্পূর্ণরূপে বর্ষিত হয়। সেই থেকে বৈশাখে তুলসীবৃক্ষে জলদানের রীতির জন্ম।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#scriptures, #baisakh, #tulsi tree, #custom

আরো দেখুন