দেশ বিভাগে ফিরে যান

কেবল আমূল-নন্দিনীই নয়, সমবায়গুলিকেই পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিতে চায় BJP

April 24, 2023 | 3 min read

দেশের সমবায়গুলিকেই পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে বিজেপি ছবি সৌজন্যেঃ Krishi Jagran

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভারতীয় জনতা পার্টি’র লুকানো এজেন্ডা হল দেশের স্বনির্ভর, লাভজনক সংস্থাগুলিকে বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া। যেমন গুজরাট মিল্ক কো-অপারেটিভের সাথে কর্নাটকের নন্দিনীকে মিলিয়ে দেওয়ার উদ্যোগের পিছনেও দীর্ঘ পরিকল্পনা রয়েছে।

গুজরাতের আমূল ব্যবসা বাড়াতে কর্নাটকে যেতে চায়। কর্নাটকের নন্দিনীর তাতে ঘোর আপত্তি। তাদের বক্তব্য, আমূলের ঘোষণা সমবায় নীতির পরিপন্থী। একটি সমবায় আর একটি সমবায়ের ব্যবসায় থাবা বসাতে পারে না। নন্দিনীর হয়ে লড়াইয়ে নেমে পড়েছে কর্নাটকের হোটেল-রেস্তোরাঁও। বেঙ্গালুরুর হোটেল ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন আমূলের জন্য ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।

গুজরাতের আমূলের বিরুদ্ধে কর্নাটকের নন্দিনীর অভিযোগ, আমূল ঢুকে পড়লে বাজারে পিছিয়ে পড়বে নন্দিনী। চর্চা শুরু হয়েছে, বাজার দখলের এই লড়াই কি নিছকই ব্যবসা বৃদ্ধি নাকি এর পিছনে আছে রাজনীতি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অমিত শাহ সমবায় মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিজেপির সমবায় দখলের রাজনীতিতে নয়া মাত্রা যোগ হয়েছে। সমবায় সংস্থায় পদ্ম ফোটাতে কেন্দ্রের নীতি-নির্দেশিকায় প্রবলভাবে প্রতিযোগিতার বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। কারণ, দেশের বেশিরভাগ সমবায় সংস্থা কংগ্রেস অথবা আঞ্চলিক দলের দখলে।


গতমাসেই গুজরাতে আমূল-সহ দুধের সব ক’টি সমবায় প্রশাসনকে কংগ্রেস মুক্ত করেছে বিজেপি। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আসা সমবায় কর্তারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কর্নাটকে ক্ষমতায় বিজেপি সরকার থাকলেও মিল্ক ফেডারেশনগুলিতে কংগ্রেস যথেষ্ট শক্তিশালী। নন্দিনীকে আমূলের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা গেলে মিল্ক ফেডারেশনে কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলা সহজ।

আমূলকে নিয়ে শঙ্কার কারণ কি? এক কথায় দাম কম। স্বাধীনতার আগে যাত্রা শুরু করা ৭৭ বছর বয়সি ওই সংস্থার বাজার ছড়িয়ে আছে ২৮টি রাজ্যে। বিপুল লাভের কারণে তারা অল্পদামে দুধ ও দুধজাত অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে দ্রুত বাজারের দখল নিয়ে নেয়। প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা পিছিয়ে পড়লে তখন সামগ্রীর দাম বাড়ায়।


বাজার দখলে আমূলের এই কৌশল নিয়ে চিন্তায় থাকে বাকি সব প্রতিষ্ঠান। বাংলাতেও রাজ্য সরকারের সংস্থা বেঙ্গল ডেয়ারির সঙ্গে আমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। আবার দিল্লির মাদার ডেয়ারির সামগ্রীও কলকাতা তথা বাংলার বাজার দখলে ব্যস্ত।
মিলমার উৎপাদক কেরল মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান কেএস মানির কথায়, ইদানীং বেশ কিছু সমবায়কে দেখা যাচ্ছে ব্যবসা বৃদ্ধিতে অন্যের বাজারে থাবা বসাতে। আমূল তাদের অন্যতম। অথচ, আমূল সমবায়ের পথিকৃৎ ভার্গিস কুরিয়েনের ভাবনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রকের মন্ত্রী অমিত শাহ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কর্ণাটকের মান্ডায় নন্দিনীকে আমূলের সাথে মিশিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তখন কৃষকেরা এই বিষয়টির তীব্র বিরোধীতা করেছিলেন। এই বিরোধীতার মুখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তারা বলে, শাহ কেবলমাত্র দেশের শীর্ষ দুটি সমবায়ের মধ্যে সহযোগিতার কথা বলতে চেয়েছিলেন।

আর পাঁচটি বিষয়ের মতো এই বিষয়টিও মানুষের মন থেকে মুছে যায়। কিন্তু গত ৫ এপ্রিল টুইটারে আমূল একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছে, বেঙ্গালুরুর বাজারে তাজা আমুল দুধ এবং দইয়ের আগমন হচ্ছে। যা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। এবং সেদিন অমিত শাহ যে অনেক চিন্তাভাবনা করেই কথাটা বলেছিলেন, তা পরিস্কার হয়ে যায়।

এখন, কর্ণাটকের জনগণ নিশ্চিত, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের রাজ্যের নন্দিনীকে আমূলের সাথে এক করে বা কর্ণাটকে আমূলের একটি সমান্তরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে কর্নাটক মিল্ক ফেডারেশনকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর।

কর্ণাটকের সংলগ্ন রাজ্য গুজরাট নয়। গুজরাট ও বেঙ্গালুরুর মধ্যে দুধের ট্রেনও নেই। অতএব, কর্ণাটকের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে থাকা অন্যান্য প্যাকেটজাত এবং প্রক্রিয়াজাত দুগ্ধজাত পণ্যের পরিবর্তে বেঙ্গালুরু বাজারে তাজা আমূল দুধ এবং দই বিক্রির বিষয়ে ঘোষণা ওই আশঙ্কাকেই শক্তিশালী করেছে।

কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশন (KMF) এর ব্র্যান্ড হল নন্দিনী। রাজ্যের ১৬টি জেলা দুগ্ধ সমবায়ের একটি শক্তিশালী ক্ষেত্র হল কেএমএফ। যারা রাজ্যের ২৫ লক্ষেরও বেশি কৃষককে নির্ভরযোগ্য আয় এবং কর্মসংস্থান প্রদান করে। একটি দুগ্ধ ইউনিট হিসাবে নন্দিনী ২০২১-২২ সালে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। যাদের স্থান দেশে আমুলের পরেই রয়েছে। আমুল একই সময়ে প্রায় ৬৫,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে দেশে দুগ্ধ ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় ১০% সংগঠিত খাতে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার চাইছে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে সমবায় সংস্থাগুলির সঙ্গে জুড়ে ব্যবসার হাইব্রিড মডেল শুরু করতে। বিজেপি সরকার ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই পুঁজিপতিদের মুনাফা বাড়াতে বিভিন্ন অসংগঠিত এবং সমবায়কে জুড়ে দিতে।

ফলে শুধু আমূল বা নন্দিনী নয়। মোদী-শাহদের নজরে এখন দেশের সমবায়গুলি রয়েছে। যা দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। আর সেই আশঙ্কা যে আমূলক নয়, তার বড় প্রমাণ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যাক্তি অর্থাৎ অমিত শাহকে সমবায় মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #gujarat, #Amul, #Nandini

আরো দেখুন