পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

বাংলার লোকসংস্কৃতি ও মৎস্যদেবতা

June 27, 2023 | 2 min read

বাংলার লোকসংস্কৃতি ও মৎস্যদেবতা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সংস্কৃত শব্দ মৎস্য, যার অর্থ “মাছ”। হিন্দু পুরাণে, মৎস্য হলেন ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার, মহাবিশ্বের রক্ষক। বাংলাতে অনেক লৌকিক দেবতা রয়েছেন যাঁরা জল ও মাছের জন্য পুজিত হন। বাংলার লোকসংস্কৃতির সাথে এইসব দেবতা মৎসজীবীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

অজু গোসাঁই:

হুগলির সিঙ্গুর, নদীয়ার চাকদহ, হাওড়ার জনাই এলাকার মৎস্যশিকারিরা জলে ছিপ ফেলার আগে অজু গোসাঁই-এর পুজো করেন। অজু গোসাঁইয়ের কোনও ছবি বা মূর্তি নেই। কল্পনা করা হয়, পুকুর-খাল-বিলে থাকা মাছেদের দেবতা তিনি। যে জায়গায় বসে মাছ ধরবেন মৎস্যশিকারিরা, তার ডান দিকে অজু গোসাঁইবাবার স্থান। পুকুর বা জলাশয়ের পাড়ে একটা বিড়ি আর একটু গাঁজা অজু গোসাঁইয়কে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। তারপর একটু জল নিয়ে তাঁর বসার জায়গাটি মুছে দিতে হয়। এর পর প্রণাম করে ‘জয় গোসাঁই অজু গোসাঁই, কিলবিলিয়ে মাছ আয়’ বলে জলে ছিপ ফেলতে হয়। লোকবিশ্বাস অনুসারে, অজু গোসাঁইকে সন্তুষ্ট করলে ছিপে বড় মাছ ওঠে।

পঠুয়াডাঙি ঠাকুর:

মাছেদের দেবতা পঠুয়াডাঙি ঠাকুর। ময়নাগুড়ি থানার চাতরাপাড় গ্রামে এই দেবতার থান। এই ঠাকুরের বাহন ঘোড়া। এই থানের পাশে রয়েছে একটা বড় বিল। এই দেবতাকে দুধ-কলা ও নৈবেদ্য দেওয়া হয়। লোকবিশ্বাস রয়েছে, এই দেবতার থানে মানত করলেই নাকি জল থেকে মাছ পাওয়া যায়।

মাকাল দেবতা:

হুগলি, মেদিনীপুর ও সুন্দরবনে, জলাশয়ের ধারে আজও মৎস্যজীবীরা মাকাল দেবতার পুঁজো দেন। মাটির তিনটি ছোট ঢিপি তৈরি করে তিরকাঠি ও লাল সুতো দিয়ে চার দিক ঘিরে দেওয়া হয়। তারপর বকরা গাছ কেটে মাকাল ঠাকুরের চার পাশে পুঁতে দেওয়া হয়। হেঁতাল গাছকে মৎস্যজীবীরা বলে বকরা গাছ। ফুল দিয়ে ঢিপিগুলোকে সাজানো হয়। এই ঢিপিগুলোই মাকাল ঠাকুর। এই ঠাকুরের সামনে বানানো হয় কুমিরের মূর্তি। মৎস্যজীবীরা নিজেরাই মাকাল দেবতার পুজো দেন। এই পুজোয় পুরোহিত লাগে না। মাকাল ঠাকুরের পুজোর পর অনেক রাত পর্যন্ত জাগতে হয়। মৎস্যজীবীরা শিয়ালের ডাকের অপেক্ষায় থাকেন। শিয়াল ডাকলে তাকে ‘শাঁখ ডাকা’ বলে। শিয়ালের ডাককে শুভ মনে করা হয়। শিয়ালের ডাক শোনার পরেই মৎস্যজীবীরা পুজো করা জালের এক ধারে ফলমূল আর পান-সুপারি বেঁধে দেন। এরপর মাছ ধরতে যাওয়ার জালগুলো নৌকোয় তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়। তাঁদের বিশ্বাস, মাকাল ঠাকুর খুশি হলেই জালে ওঠে অঢেল মাছ। নদী বা সমুদ্রে কোনও বিপদ হয় না।

কৈমারী ঠাকুর:

ময়নাগুড়ি এলাকায় কৈমারী ঠাকুর নামে এক দেবতা পুজো পান। ইনিও মাছের দেবতা। কইমাছ এই দেবতার বাহন। লোকবিশ্বাস অনুসারে, এই দেবতার পুজো দিয়ে মাছ ধরতে গেলে প্রচুর মাছ জালে ওঠে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #fishermen, #Fish God, #Folk culture

আরো দেখুন