কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

বাংলার দুগ্গা পুজো: কীভাবে যাবেন বীরভূমের সুরুল জমিদারবাড়ির পুজো দেখতে?

September 1, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলার আনাচকানাচে ছড়িয়ে আছে এমন কিছু পুজো, যা মনে করিয়ে দেয় শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা। কালের নিয়মে জৌলুস কিছুটা কমে গেলেও গ্রামবাংলার বেশ কিছু জমিদার বাড়িতে এখনও পুজো হয় সাবেকি রীতিনীতি মেনে। আসন্ন পুজো পরিক্রমায় ঘুরে আসতে পারেন এই বাড়িগুলিতে।

সুরুল জমিদারবাড়ির পুজো

বোলপুরের ৫ কিমি আগে সুরুলের জমিদারবাড়ির দুর্গা মন্দির। পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান, বিরাট থামের নাটমন্দির, আর বেলজিয়ান কাচের ঝাড়বাতি মনে করিয়ে দেয় সাবেকি ঐতিহ্য আর রাজকীয় জৌলুসের কথা। সারা বছর ধরে পর্যটকরা আসেন এই জমিদারবাড়ি দেখতে। পুজোর সময়ে জমিদারবাড়ির বাইরের প্রাঙ্গনে মেলা বসে।

জানা গিয়েছে, অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে ভরতচন্দ্র সরকার বর্ধমানে নদীর ধারে নীলপুর থেকে সুরুলে আসেন গুরুর বাড়িতে থাকতে। গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে দীর্ঘসময় সস্ত্রীক থাকেন ভরতচন্দ্র। সেখানে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয় – কৃষ্ণহরি। সুরুলেই পাকাপাকি ভাবে বাস করতে শুরু করেন সরকার পরিবার। সে সময়ে কৃষ্ণহরির পুত্র শ্রীনিবাস ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করে রীতিমতো নাম করেছিলেন, প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছিল। শুরু হয়েছিল সরকারবাড়ির দুর্গাপুজো।

রথের দিন থেকেই এখানে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। সুরুলের সরকারবাড়িতে মৃৎশিল্পীরা ৫ পুরুষ ধরে প্রতিমা বানিয়ে আসছেন। পুজোর ক’টা দিন মা দুগ্‌গাকে সাজানো হয় রাজবাড়ির সোনার অলংকারে। অস্ত্রশস্ত্র যা থাকে দেবীর হাতে, সবই প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো।

পুজোর দিনগুলোতে রাজবাড়ি সেজে ওঠে রেড়ির তেলের প্রদীপে। অন্নভোগের রেওয়াজ নেই এখানে। পুজো হয় বৈষ্ণব এবং শাক্ত মতে। পুজোর নির্ঘণ্ট তৈরি হয়ে যায় এক মাস আগে থেকে।

বিশেষ কিছু রীতিনিয়ম মেনে জমিদারবাড়ির পুজো অনুষ্ঠিত হয়। যেমন দিঘিতে স্নান করিয়ে সাবেকি পালকি করে নবপত্রিকা আনা হয়। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী, এখানে পুজোর ৩ দিন বলি হয়। অষ্টমীর দিন ছাগল, নবমীতে আখ ও সপ্তমীতে চাল কুমড়ো বলি হয়। দশমীর দিন শাঁখ বাজিয়ে শঙ্খচিলের আহ্বান করা হয়। নারায়ণ যেহেতু বলি প্রথার বিরুদ্ধে, বলির সময়টুকু নারায়ণকে রেখে আসা হয় মন্দিরে। বাকি সময়টা তাঁর উপস্থিতিতেই হয় দেবীর আরাধনা।

উল্লেখ্য, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে সুরুলের রাজপরিবারের বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের জমির অনেকাংশ পেয়েছিলেন এই রাজ পরিবারের কাছ থেকে। রবীন্দ্রনাথ আর রথীন্দ্রনাথের নিয়মিত যাতায়াত ছিল সরকারবাড়িতে। মহাত্মাকে নিয়ে কবিগুরু রাজবাড়ির ঘরটিতে রাত কাটিয়েছিলেন, সুরুলের রাজবাড়িতে সেই স্মৃতি এখনও অটুট।

পথ নির্দেশিকা: ট্রেনে বোলপুর যাবেন। সেখান থেকে টোটোতে চেপে মাত্র ৫ কিমি সুরুল সরকার বাড়ি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#birbhum, #Durga Puja 2023, #Surul Zamindarbari Puja

আরো দেখুন