রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বাংলার দুগ্গা পুজো: পুরুলিয়ার রাজাহেঁসলা রাজবাড়ির এই পুজোর নেপথ্যে কোন ইতিহাস?

September 9, 2023 | 2 min read

প্রায় ১,২০০ বছরের প্রাচীন পুরুলিয়ার রাজাহেঁসলা গ্রামের দুর্গাপুজো।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রায় ১,২০০ বছরের প্রাচীন পুরুলিয়ার রাজাহেঁসলা গ্রামের দুর্গাপুজো। এখানে প্রাচীন সংস্কৃতি ছৌ নাচের মুখোশকে অনুসরণ করে দেবী দুর্গার মূর্তি পুজো শুরু হয়। দুর্গম জঙ্গল, পাহাড়ে ঘেরা এই এলাকা। একসময় পাহাড়ী ঝর্ণা হেঁসলা নদী থেকে ঘটা করে ঢাক বাদ্যের সঙ্গে বন্দুকের গুলির শব্দে এখানে দুর্গাপুজোর ঘট আনার রীতি ছিল। পুরনো বহু নিয়ম আজও পালিত হয় এই রাজবাড়িতে।

সেই সময় দিল্লির মুগল সম্রাটদের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়ে বহু হিন্দু রাজা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আত্মগোপন করেছিলেন পাহাড়ি জঙ্গলে। সম্ভ্রম বাঁচাতে লুকিয়ে ছিলেন বহু মহিলারাও। পাড়ি দিয়েছিলেন পশ্চিম ভারত থেকে পূর্ব ভারতের গভীর অরণ্যের আদিবাসী উপত্যকায়। সুদূর রাজস্থান থেকে এমনই এক হিন্দু রাজপুত রাজা এসেছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদা অঞ্চলের অন্তর্গত এই দুর্গম অঞ্চলে।

চারিদিকে দুর্গম পাহাড় আর গভীর জঙ্গলে ঘেরা হেঁসলা গ্রাম। এখানেই একসময় পালিয়ে এসে লুকিয়েছিলেন রাজা দ্বিগ্বিজয় প্রতাপ সিংহ দেও। সেখানেই থেকে গিয়ে পাহাড় জঙ্গল কেটে তিনি তৈরি করেন বিশাল রাজপ্রাসাদ, ধীরে ধীরে ওই এলাকায় ঘটে তাঁর রাজত্ব বিস্তার। সেই সময় থেকে গ্রামের নাম রাজাহেঁসলা নামে পরিচিত হয়। দুর্গম অঞ্চলের আদিবাসিন্দারা রাজার সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। মোট ২৪টি মৌজার দখলদারী পান রাজা দ্বিগ্বিজয়। তৈরি করেছিলেন কাছারি, বাগানবাড়ি, নাটমহল, ঠাকুর দালান। খনন করিয়েছিলেন ১২টি পুকুর।

আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে দ্বিগ্বিজয় প্রতাপ সিংহ দেওর তৈরি ঠাকুর দালানে মা দুর্গার পুজোর সূচনা করেন। প্রথমে শক্তি রূপে পূজিত হয় রণমূর্তিধারী দেবীর খড়্গ। রাজবাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে পাহাড়ি ঝর্না হেঁসলা নদী থেকে দেবী দুর্গার ঘট আনা হয়। ঘটা করে ঢাক বাদ্যের সঙ্গে বন্দুক চালিয়ে রাজা নিজে ওই নদীতে ডুব দিয়ে ঘট তুলে আনতেন। বর্তমানেও চালু রয়েছে একই প্রথা। তবে বন্দুকের গুলির বদলে এখন ফাটানো হয় শব্দবাজি। যদিও বর্তমান দিনে গ্রামে আরও বহু দুর্গাপুজো হয়। তবুও গ্রামবাসীদের ঢল নামে এই রাজবাড়িতে।

একটা সময় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত দেওয়া হত ছাগল ও মোষ বলি। তবে এখন বলিপ্রথা সব বন্ধ। এখানে দেবী দুর্গার পুজো প্রাচীন বৈদিক রীতি মেনে করা হয়।

এই পুজোর কেন্দ্রে বর্তমানে রয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের পরিবারের প্রধান কন্দর্প নারায়ণ সিং দেও। দশমীর দিন তাঁকে রাজা রূপে সম্মান দেন গ্রামবাসীরা। প্রজারা এসে তাঁকে প্রণাম করেন। তিনিও মিষ্টিমুখ করান সকলকে। এভাবেই এই দুর্গাপুজো ঘিরে গ্রামে চলে আসছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ রাজাহেঁসলার আনন্দ উৎসব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Purulia, #raja hensla rajbari, #durga Pujo

আরো দেখুন