দেশ বিভাগে ফিরে যান

অসমে আসন পুনর্বিন্যাসে কোণঠাসা সংখ্যালঘুরা? নেপথ্যে BJP-র এজেন্ডা?

September 16, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বিরোধীদের হাজারও অভিযোগ সত্ত্বেও অসমে লোকসভা ও বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস হল। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি অর্থাৎ এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কের আইনি সমাধানের আগেই অসমের ১৪টি লোকসভা এবং ১২৬টি বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাসের (ডিলিমিটেশন) কাজ শুরু করে ছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে এ সংক্রান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। চলতি বছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত খসড়া তালিকা সম্পর্কে ‘পরামর্শ এবং আপত্তি’র কথা জানাতে বলাও হয়েছিল। ৩১টি জেলার বাসিন্দাদের কাছে থেকে আসন পুনর্বিন্যাস করা নিয়ে মানুষের কাছে থেকে ৪৬৭টি পরামর্শ এবং আপত্তি পেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস সহ সে’রাজ্যের বিরোধী দলগুলো আপত্তি জানিয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই কমিশন আসন পুনর্বিন্যাস করছে। কিন্তু কোনও আপত্তিতে আমল দেওয়া হয়নি। বিগত আগস্টে আসন পুনর্বিন্যাসের অনুমোদন দেন দেশের রাষ্ট্রপতি।

গত ২০ জুন আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়া প্রস্তাব প্রকাশিত হয়। তারপর থেকেই এই নিয়ে নানা রকম আপত্তি এবং একে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন দলের নেতারা। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে ২০০১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাসের হয়েছে। মোট লোকসভা এবং বিধানসভার আসনের সংখ্যা একই থাকলেও কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। লোকসভার ১৪টি আসনের মধ্যে তফসিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য একটি এবং তফসিলি জনজাতির প্রার্থীদের জন্য দু’টি আসন সংরক্ষিত। বিধানসভার ১২৬টি আসনের মধ্যে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি জনজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা যথাক্রমে নয় এবং ১৯। বলাবাহুল্য এরপরেই প্রশাসনিক পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে। বিভিন্ন জেলার মধ্যে উপজেলা গঠন করা হবে বলেও শোনা যাচ্ছে। বিরোধীদের আশঙ্কা আসন পুনর্বিন্যাসে মুসলমান জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমবে, যার সরাসরি ফায়দা পাবে বিজেপি। সে’রাজ্যের মুসলমান জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, এমনভাবে আসন বিন্যাস করা হয়েছে যাতে হিন্দু নির্বাচনী কেন্দ্র আর মুসলমান নির্বাচনী কেন্দ্র আলাদা আলাদা হয়।

পুনর্বিন্যাসের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, অসমের জনজাতি সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আসন সংখ্যা চার থেকে পাঁচ এবং বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অঞ্চলে ১২ থেকে ১৫ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই দুটি অঞ্চল সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যা উত্তর-পূর্বের জনজাতির বিশেষ সুবিধা দেয়।

উচ্চ আসামের তিন জেলায় একটি করে আসনও বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে অসমিয়া ভাষাভাষি সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ১৩-তে কমিয়ে আনা হয়েছে। করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দির মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা থেকে একটি করে আসন কমিয়ে আনা হয়েছে। তিন বিধানসভা কেন্দ্র, যেখান থেকে সাধারণত মুসলমান জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হতেন, তা তফসিলি জাতি ও উপজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। যা কার্যত সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ। তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত বিধানসভা আসনগুলিকে আট থেকে নয় এবং তফসিলি উপজাতিদের জন্য ১৬ থেকে বাড়িয়ে ১৯ করা হয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, মোট জনসংখ্যার ৩০.৯% মুসলিম। ২০১১-র আদমশুমারি অনুসারে, মোট জনসংখ্যায় মুসলমান সম্প্রদায়ের পরিমাণ ৩৪.২২%।

বর্তমানে অসমে ৩১জন মুসলিম বিধায়ক রয়েছে, কেউই বিজেপির নয়। পুনর্বিন্যাসের আগে, অসমের ৩৫ বিধানসভা আসন এবং ১৪ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টিতে মুসলমানরা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করত। বিরোধীদের বক্তব্য, ১০-১১ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে, বিজেপি নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অন্তত ১১০ আসন রাজ্যের আদিবাসী লোকদের জন্য রাখা উচিত। বাস্তবে তা হচ্ছে না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Election Commision of India, #bjp, #election commission, #Minorities, #Agenda, #Assam Election 2023

আরো দেখুন