পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

বাঁশবেড়িয়ায় কার্তিক পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট হল বিশাল আকারের জিলিপি

November 17, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: উৎসবের মরশুম এখন মধ্যগগনে। দুর্গাপুজো ও কালীপুজো হয়ে গিয়েছে। এবার সামনে জগদ্ধাত্রী ও কার্তিক পুজো। আর জগদ্ধাত্রী পুজো বলতে যেমন চন্দননগরের কথা মাথায় আসে, তেমনই বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক পুজোও খুবই জনপ্রিয়। বছর বছর কার্তিক পুজোকে কেন্দ্র করে কার্যত দুর্গাপুজোর মতো আনন্দে মেতে ওঠে বাঁশবেড়িয়াবাসী। ঐতিহ্য যেমন আছে, তেমনই থিমের ছোঁয়াও রয়েছে বাঁশবেড়িয়ায় কার্তিক পুজোয়।

বাঁশবেড়িয়া ও সাহাগঞ্জের আদি দেবতা হলেন ওই এলাকার রাজা, ধুমো ও জ্যাংড়া কার্তিক। এই তিন কার্তিকের প্রিয় প্রসাদ জিলিপি। ভক্তরা তিন-চার কেজি ওজনের জিলিপি কার্তিককে ভোগ দেন। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, কার্তিকের কাছে মানত করলে হাতেনাতে ফল মেলে। পুজোর হোমের ফল খেলে সন্তানসম্ভবা হন নিঃসন্তান মহিলারা।

সাহাগঞ্জের পুরাতন নন্দীবাজার যুবগোষ্ঠী ধুমো কার্তিকের পুজো করে। এই পুজোর সূচনা হয়েছিল ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে। কথিত, এই এলাকার জমিদার নন্দীরা পুজোর প্রচলন করেন। ১২ ফুট লম্বা এই কার্তিক একসময় এই এলাকার সবথেকে বড় মূর্তি হিসেবে পরিচিত ছিল। চেহরাটাও ছিল গোলগাল। সে কারণেই এই কার্তিকের নাম হয় ধুমো কার্তিক। পুজোর দিন ধুমো ছোট ধুতি পরেন। গায়ে নামাবলী দেন। হাতে কোনও অস্ত্র থাকে না। পুজোর পরের দিন তাঁকে পরানো হয় রাজবেশ। ১২ফুটেরও বেশি দৈর্ঘের ধুতি ও শাল জড়ানো হয় দেহে। ভক্তরা বড় বড় জিলিপি ভোগ দেন। পুজো কমিটির সম্পাদক পিনাকী নন্দী বলেন, ‘আদি বাবা ধুমো কার্তিক খুব জাগ্রত। হোমের কলা খেয়ে কত নিঃসন্তান মহিলা যে সন্তান লাভ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। প্রত্যেক বছর ৬০ থেকে ৭০ পিস বড় আকারের জিলিপি ও সাল ও ধুতি মানত করেন ভক্তরা।’

সর্বজনীন শ্রী শ্রী রাজা কার্তিক পুজো কমিটির কার্তিকের ইতিহাস প্রায় ৩৭৭ বছরের পুরনো। এলাকার এক বর্ধিষ্ণু ব্যবসায়ী সাহা পরিবার ১৬৪৬ সালে এই পুজোর সূচনা করেছিল। এখানে কার্তিক রাজকীয়ভাবে আসেন। দু’টি ময়ূরের উপর থাকে সিংহাসন। তারউপর বসেন কার্তিক। মাথায় থাকে মুকুট। দুই পাশে সখীরা চামর দোলাতে থাকেন। পুজোর দিন পাঞ্জাবি ও কোরা ধুতি পরেন তিনি। শোভাযাত্রার দিন চওড়া পাড়ওয়ালা ধুতি পরানো হয়। এখানে নৈবিদ্যতে ফল ও মিষ্টির পাশপাশি থাকে বড় আকারের জিলিপি। এখানেও ময়ূরের মুখে জিলিরি ঝোলানোর রীতি।

এলাকার অন্যতম নামকরা হলেন জ্যাংড়া কার্তিক। এই পুজোর বয়সও প্রায় ৩০০ বছরের। পিতলের ব্যবসায়ী গুঁই পরিবার এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। এখানে কার্তিক যুদ্ধরত অবস্থায় থাকেন। পিঠের তূণীর থেকে তির বের করে ধনুকে লাগিয়ে ছোঁড়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। কোমরে থাকে ঢাল, মাথায় মুকুট। জ্যাংড়া সেবক সঙ্ঘ এই পুজো করে। এখানেও নৈবিদ্যতে ফল ও মিষ্টির পাশাপাশি দেওয়া হয় বড় আকারের জিলিপি।

চলতি বছরে ৪৮ বর্ষে পদার্পণ করছে বাঁশবেড়িয়ায় অনির্বাণের জামাই কার্তিক পুজো। বিগত বছরগুলিতে একের পর এক দারুণ থিম নিয়ে এসেছে এই অনির্বাণ। আর এবার তাদের থিম নয়া সংসদ ভবন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেশে তৈরি হয়েছে নয়া সংসদ ভবন। অধিবেশনের সূচনাও হয়েছে সেখানে। আর এবার সেই নয়া সংসদ ভবনের আদলেই তৈরি হচ্ছে অনির্বাণের মণ্ডপ। আর শুধু তাই নয়, মণ্ডপের ভিতরে সংসদের অধিবেশনের জীবন্ত নাট্যরূপও দেখা যাবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kartik Pujo, #kartik puja, #Bansberia, #kartik pujo 2023, #Jilipi, #Jalebi

আরো দেখুন