কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

ধর্মতলায় অমিত শাহ’র সভার আয়োজনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও ভিড় নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজেপি

November 27, 2023 | 2 min read

বুধবার ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে জনসভা বিজেপির।

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: বুধবার ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে জনসভা বিজেপির। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। রবিবার হয়েছে খুঁটিপুজো। সোমবার সকাল থেকেই শুরু মঞ্চ বাঁধার কাজ। তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের মতো বিজেপির সভাতেও তৈরি হচ্ছে তিনটি মঞ্চ। মূল মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সভায় উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক এবং সাংসদরা। উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়া নেতাদেরও। মঞ্চে থাকবেন ‘শহিদ’ (ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত্যু) পরিবারের সদস্যরাও। এই মঞ্চের সামনেই রাখা থাকবে দশটি ‘ড্রপ বক্স’। সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিতরা এখানে তাঁদের অভিযোগপত্র জমা করবেন।

এতকিছুর পরেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভায় ভিড় নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন গেরুয়া শিবির। শেষমেশ যদি উল্লেখযোগ্য ভিড়ের ব্যবস্থা করা না যায়, তাহলে মুখ পুড়বে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। তাই কার্যত ভিড়ের ‘লক্ষ্যমাত্রা’ বেঁধে দিতে রাজ্যের জেলায় জেলায় ঘুরে সাংগঠনিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এক্ষেত্রে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মঙ্গল পান্ডের উপর। তিনি ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে জরুরি সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন।

বিজেপির শীর্ষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ২৯ নভেম্বরের সভার জন্য দলের একেকটি সাংগঠনিক জেলাকে ন্যূনতম ১০ হাজার লোক জোগাড়ের টার্গেট বেঁধে দিতে পারে বিজেপি। তবে বিভিন্ন জেলা সংগঠনের বাস্তব পরিস্থিতি মেনে সেই সংখ্যায় স্বাভাবিকভাবেই কিছু কমবেশি হবে। এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৪৩টি। যদি প্রত্যেক জেলাকে কমপক্ষে ১০ হাজার লোক নিয়ে অমিত শাহের সভায় আসতে বলা হয়, তাহলে সবমিলিয়ে সংখ্যাটি দাঁড়াবে চার লক্ষেরও বেশি। এটি আদৌ বাস্তবোচিত কি না, তানিয়েই প্রবল ধন্দে বিজেপি নেতারা। লোকসভা ভোটের আগে হিন্দুত্বের হুঙ্কার দিতে আগামী ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে অমিত শাহের এহেন সমাবেশকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বঙ্গ বিজেপিকে। কারণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সভা থেকেই কার্যত বাংলায় লোকসভা ভোট প্রস্তুতির দামামা বাজতে চলেছে।

সূত্রের খবর, শাহ নিশ্চিত করার পর বুধবারের সভা সফল করার জন্য আদা জল খেয়ে নেমেছেন শুভেন্দু-সুকান্তরা। ওই সভার আগে আবহ তৈরি করতে শুভেন্দু ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় সফর শুরু করেছেন। ২৯ তারিখের সভায় লোক আনতে মোট ৮টি ট্রেন দিচ্ছে মোদী সরকার। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ এবং মেদিনীপুর থেকে আসবে দু’টি করে রেলগাড়ি। একটি করে ট্রেন বরাদ্দ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল, নদীয়ার জন্য। সেগুলির ভাড়া বাবদই গলে যাচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। সভাস্থল ভরাতে শুধু তাতে ভরসা রাখছে না গেরুয়া পার্টি। কারণ, ধর্মতলা থেকে পার্কস্ট্রিট পর্যন্ত কালো মাথার ভিড় তৃণমূলের শহিদ দিবসের চেনা ছবি।
২৯ নভেম্বর সেই ছবিকে টেক্কা দিতে কর্মীদের থাকা-খাওয়া, আসা-যাওয়ার রীতিমতো ‘প্যাকেজ’ অফার করছে তারা। কলকাতার আশপাশের জেলাগুলি থেকে পদ্ম সেনাদের আনতে ভাড়া করা হচ্ছে কয়েকশো বাস ও গাড়ি। দূরবর্তী জেলার কর্মী-সমর্থকদের জন্য দু’দিন আগে থেকে ‘বুক’ থাকবে একাধিক হোটেল, ধর্মশালা। সভার দিনে থাকছে এলাহি খানাপিনার আয়োজন। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে পেল্লাই মঞ্চ, বাহারি সাজসজ্জা, মোড়ে মোড়ে জায়ান্ট স্ক্রিন, বিদেশি সাউন্ড সিস্টেমের জন্যও মোটা টাকা ধরা হয়েছে। তার উপর রয়েছে সভার অনুমতি আদায়ে বড় অঙ্কের আইনি খরচ।

উল্লেখ্য বিরোধী দল থেকে শাসক হয়ে ওঠার পরে একটি বছর ব্রিগেডে ওই সমাবেশ হওয়া ছাড়া ধর্মতলার এই জমিই বরাবরের পছন্দ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রিয় ও পছন্দের জায়গায় বিজেপি মঞ্চ বাঁধতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সভার অনুমতি নিয়ে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়। বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষপর্যন্ত আদালতে জয় হয় বিজেপি’র।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Crowds, #West Bengal, #Amit shah, #bjp, #BJP West Bengal, #politics

আরো দেখুন