পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

নতুন ধানের গন্ধে ভরা বাঙালির প্রাচীন উৎসব “নবান্ন”

December 12, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: “নবান্ন” অর্থ হল “নতুন অন্ন” বা “নব অন্ন”। নবান্ন উৎসব হল কার্তিক মাসে নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে অগ্রহায়ণ মাসে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। বাঙালির ধর্ম, সংস্কৃতি, কৃষি এবং আনন্দের অনন্য মেলবন্ধন হল নবান্ন ব্রত উৎসব।

নবান্ন এক প্রাচীন উৎসব। বৃহদ্ধর্মপুরাণের উত্তরখন্ড, দশম অধ্যায়ে উল্লেখ আছে

মার্গশীর্ষে মহাভাগে নবান্নৈঃপূজয়েদ্ধরিম
পায়সংশর্করা দুগ্ধং দদ্যাৎ কৃষ্ণায় ভক্তিতঃ

অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন দ্বারা হরিপুজো করার বিধি আছে। তাঁকে ভক্তিপূর্বক দুধ ও চিনি এবং পায়েস নিবেদন করতে হবে।

মনে করা হয় নতুন চালের অন্ন দেবী অন্নপূর্ণাকে নিবেদন করলে দেবী সংসার ধনধান্যে পরিপূর্ণ করে রাখেন। সাধারণত বাংলার নবান্ন উৎসব অন্নপূর্ণা পুজার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তবে এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে। যেমন বীরভূমের তারাপীঠে নবান্ন হয় কার্তিক পুজোর সঙ্গে।

নবান্নের খাদ্য তালিকা:

  • সকালে পুজোর পর নতুন চালের গুঁড়ো /সেদ্ধ চাল মাখার জন্য দুধ, চিনি, কিসমিস, ফলের টুকরো, মিষ্টি।
  • দুপুরে পাঁচ, সাত বা নয় রকমের ভাজা।
  • যেমন- আলু-ভাজা, পটলভাজা, বেগুন ভাজা, আখ ভাজা, বড়িভাজা ইত্যাদি। তরকারি, মুগের ডাল,মাছের পদ, টক, চাটনি পায়েস, মিষ্টি, পান। নবান্নে ডিম বা মাংস রান্না হয় না। অনেক জায়গায় পরেরদিন পালন করা হয় অরন্ধন।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বিয়ের পর কৈলাশ শিখরে মহাদেব ও পার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাচ্ছিলেন। আর্থিক অনটনের জেরে বেশ কিছুদিন পরই শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। দারিদ্র্যের কারণে পার্বতীর সঙ্গে কলহে ঘর ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন মহাদেব। কিন্তু কোথাও ভিক্ষা না পেয়ে শেষে কৈলাশে ফিরে আসেন। পার্বতীর মায়ায় তিনি যে ভিক্ষে পাচ্ছিলেন না, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি মহাদেব। কাশীতে তখন পার্বতী মা অন্নপূর্ণা রুপে অন্ন বিতরন করছেন। শিব দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। দেবী অন্নপূর্ণার হাতে রন্ধনকৃত সঘৃত পালান্ন, পায়েস ইত্যাদি ভোজন করেন। এই ঘটনাকেই নবান্নের শুরু মনে করা হয়।

বঙ্গে নবান্য রন্ধন, পুজো ও উৎসর্গে আবদ্ধ থাকলেও বাংলাদেশের নবান্নের নানা অংশ আছে।

  • সেগুলি হল-
  • লক্ষ্মী পুজা :-
  • পিতৃশ্রাদ্ধ:- পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
  • বীরবাশ:- বাড়ির উঠানে গর্ত করে তাতে জ্যান্ত কই মাছ, দুধ দিয়ে মাঝে একটি বাঁশ পোতা হয়। চারপাশে আলপনা আঁকা হয়।
  • কাকবলি:- একটি কলার পাতায় নতুন চাল, কলা, নাড়ু ইত্যাদি কাককে খেতে দেওয়া হয়। মানুষের বিশ্বাস কাকের মাধ্যমে মৃত আত্মারা (পূর্বপুরুষের ) ঐ খাবার খান।

সব অনুষ্ঠান হয়ে গেলে রন্ধনকরা খাদ্য দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। তারপর একসাথে খাওয়া দাওয়া হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #festval, #Nabanno, #harvest celebration

আরো দেখুন