পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

শনিদেবকে বড় ঠাকুর বলে কেন? এই দেবতার সৃষ্টি কীভাবে জানেন?

December 16, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শনি খুব রাগী দেবতা হিসেবে পরিচিত। সে জন্য তিনি অনেকের কাছে অপ্রিয়। হিন্দু ধর্মে কর্মফলের দেবতা হিসেবে শনি ঠাকুরের পুজো করা হয়। অনেকে তাঁকে বড় ঠাকুর বলেও ডাকেন। মানুষের বিশ্বাস, শনিবারে তাঁর আরাধনা করলে শনি দেবতা বিশেষভাবে সন্তুষ্ট হন। 

প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় শনিদেবের পুজো করা হয়। তবে শনিদেবের পুজো করার আগে তাঁর স্ত্রী দেবী ধামিনীর পুজো করতে হয়। আবার এই দেবতার পুজোয় যদি কেউ হনুমানের নামে সরষের তেল দিয়ে তাঁকে স্মরণ করেন তাহলে তাঁর বিপদ কেটে যায়। শনি দেবের পুজোর জন্য নীল বা কৃষ্ণ বর্ণের ঘট, পুষ্প, বস্ত্র, লৌহ, মাষ কলাই , কালো তিল, দুগ্ধ, গঙ্গাজল, সরষের তেল প্রভৃতি আবশ্যক। নির্জলা উপবাস বা একাহারে থেকে এই ব্রত পালন করেন ভক্তরা।  

জেনে নিন সবার বড় ঠাকুর শনিদেবের সৃষ্টি কীভাবে হয়েছিল? 

কথিত আছে, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে  যখন কোন‌ও কিছু ছিলনা তখন শুধু ত্রিদেব ব্রম্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর আর সকল দেবদেবী ও অসুরগণ ছিলেন। কিন্তু তখন শুধু স্বার্থের জন্য দেবতা-অসুর যুদ্ধ হতো। একসময় এই  দেবতা-অসুর যুদ্ধ এমনভাবে প্রকট হয়েছে তা অবিস্মরণীয়। শেষ পর্যন্ত সেই যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য স্বয়ং মহাদেবকে আসতে হলো। আর তিনি এই যুদ্ধের সমাপ্তি করেন। 

তখন যে যার কর্ম করতো আর কর্মফল বা ন্যায় করার জন্য কেউ ছিলেননা। স্বয়ং ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর তখন নিজেরাই এই দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্ত এভাবে চলতে দেওয়া যায় না, এর কোন উপায় বের করতে হবে। তখন ত্রিদেব একত্রে কর্মফল দাতা বা ন্যায় কর্তা সৃষ্টি করার জন্য উদ্যোগী হলেন। আর তাঁর জন্ম হবে নিরপেক্ষ সূর্য্য দেব এর ঘরে। কারণ সূর্য্য দেব তার প্রকাশ নিস্বার্থ ভাবে ছড়িয়ে দিতেন। অন্যদিকে সূর্য্য দেবের স্ত্রী সংজ্ঞা সূর্য্যের তেজ সহ্য করতে পারতেননা। এর জন্য দেবী সংজ্ঞা পিতা বিশ্বকর্মার কাছে ঔষধি খুঁজে পায়। কিন্ত বিশ্বকর্মা সেই ঔষধি দেবী সংজ্ঞাকে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। তারপরেও দেবী সংজ্ঞা সেই ঔষধি চুরি করে নিজের ছায়ার উপর ছিটিয়ে দেয়। আর সেই ঔষধি থেকে দেবী সংজ্ঞার একই রূপ দেবী ছায়ার সৃষ্টি হয়। তারপর দেবী সংজ্ঞা অনেক বছরের জন্য তপস্যায় চলে যান যাতে তিনি সূর্য্য দেবের তেজ সহ্য করতে পারে।

এদিকে সূর্য্য দেবী ছায়াকে দেবী সংজ্ঞা ভেবে তার সাথে দিন যাপন করে। আর তাদের সংসারে শনিদেব তথা কর্মফল দাতা বা ন্যায় কর্তার জন্ম হয়। শনিদেবের জন্ম হওয়ার পর পর সূর্য্যদেব শনির রূপ দেখে তাঁকে অস্বীকার করেন এবং অভিশাপ দেন সে যাতে সূর্য্যর আলোয় জ্বলে যায়। তখন থেকেই সূর্য্য দেবের গ্রহণ লাগিয়ে শনিদেবের ন্যায় কার্য শুরু হয়। অনেক কষ্টে দেবী ছায়া শনিদেবের লালন পালন করেন। সেই থেকে শনি সূর্য্য ও ছায়াপুত্র নামে পরিচিতি পায়। তার অগ্রজ হিসেবে ছিলেন ধর্মরাজ যম ও দেবী যমুনা। 

কেন সবার বড় ঠাকুর বলা হয়? 

স্বয়ং বিশ্বকর্মা ছিলেন শনিদেব এর পিতামহ। সকল প্রকার অস্ত্র শিক্ষা শনিদেব বিশ্বকর্মার কাছ থেকে নিয়েছিলেন। তাই শনিদেব তাঁকে  খুব শ্রদ্ধা করতেন আর ভালোবাসতেন। অসুর গুরু শুক্রাচার্য শনিদেবকে নিজের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করতেন। সে জন্য তিনি  অসুর গুরু হলেও কারও ক্ষতি করতেন না। 

দেব গুরু বৃহস্পতি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ  জ্ঞানী । কিন্তু শনিদেব দেব গুরু বৃহস্পতির থেকেও  শ্রেষ্ঠ  জ্ঞানী ছিলেন। তারপরেও শনিদেব তাকে তার গুরুদেব হিসেবে সস্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। এটাই ছিল শনিদেবের শ্রদ্ধা ও মহিমা।

কথিত আছে,  শনিদেব অষ্ঠসিদ্ধি শিক্ষা লাভ করার পরেও তার কাছে কোনও অহংকার ছিলনা। তিনি সবসময় নিরপক্ষ চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করতেন। শনিদেব নবগ্রহদের মধ্য একটি অন্যতম গ্রহ, কিন্তু তিনি কর্মফল দাতা বা ন্যায় কর্তা হিসেবে সবার বড় ঠাকুর। এমনকি তিনি স্বয়ং ব্রম্মা ও মহাদেবকেও তার বক্রদৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন। যাতে শনি কর্মফল দাতা বা ন্যায় কর্তার পদ সঠিকভাবে পালন করতে পারে।

তাছাড়া চন্দ্রদেব, দেবী সংজ্ঞা, ইন্দ্র, রাবণ, দেবী যমুনা, ইত্যাদি অনেক দেবদেবী শনির বক্রদৃষ্টি থেকে রেহায় পায়নি। তবে দেবী যমুনার আত্মা পবিত্র ছিল বলে তার উপর কোন প্রভাব পরেনি। সে জন্য শনির বক্রদৃষ্টিতে যারা ভালো কাজ করে তাদের কোন কিছুই হয়না। শনিদেবের পরা শক্তি ছিলেন নিলীমা। সেই নিলীমাকেও  সুকৌশলে তার শক্তিতে যুক্ত করেন। তাতে শনিদেব আরও কঠোর ও শক্তিশালী হয়ে উঠেন। 

শনি দেব ন্যায় কর্মের জন্য অনেকের কাছে তিনি ভয়ংকর দেবতা। যারা তার সঠিক পথ চিনতে পেরেছে  তারা কখনও অন্যায় পথে যায়না। শনিদেবকে অন্যদিকে মহাদেবের আরেক রূপ বলেও বিবেচনা করা হয়। আর সে জন্য যুগে যুগে শনি দেবের পুজো করা হয়।  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#god of Karma justice, #zodiac system, #the Navagraha, #Crow, #Hindu, #Shani, #Hindu deity

আরো দেখুন