চুয়াড় বিদ্রোহের স্মৃতি আগলে রেখেছে কর্ণগড়ের মহামায়া মন্দির, কিন্তু কীভাবে?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: চুয়াড় বিদ্রোহের স্মৃতি জড়িয়ে আছে রাইপুরের মহামায়া মন্দিরের সঙ্গে। কীভাবে জানেন? এবারে আসি সেই প্রসঙ্গে। ব্রিটিশ বিরোধী গণ বিদ্রোহের কথা বললে প্রথমেই উঠে আসে রানি শিরোমণির নাম। ১৭৯৮ সালে রাইপুরের চুয়াড় বিদ্রোহের প্রাণকেন্দ্র ছিল মেদিনীপুর আর ওড়িশা সীমান্তের কাছে কর্ণগড়। এখানেই ছিল রানি শিরোমণির রাজধানী। তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেবী মহামায়ার মন্দিরের নাম। জানা গিয়েছে, এই মন্দির রানি শিরোমণির প্রতিষ্ঠিত। তবে এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
বাদশাহী আমলে মেদিনীপুর অঞ্চলের নাম ছিল মেদিনীপুর চাকলা । আর, কাঁসাই এর দক্ষিণ তীর থেকে সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত ছিল হিজলি চাকলা (কুরুমবেড়া এই হিজলি চাকলার অন্তর্ভুক্ত ছিল) । মেদিনীপুর চাকলা অনেকখানি জায়গা নিয়ে ছিল । এর অন্তর্গত ছিল কর্ণগড় । মেদিনীপুর শহরের উত্তর পূর্ব কোণে প্রায় ১৪ কিমি দূরে এর অবস্থান । প্রায় জঙ্গলঘেঁষা এই জায়গার রাজা ছিলেন অজিত সিংহ । ১৭৬০ সালে অজিত সিংহের মৃত্যুর পরে সিংহাসনে বসেন রানী শিরোমণি । দীর্ঘ চল্লিশ বছর রাজ্যশাসন, প্রজাপালন ও ব্রিটিশ দমনে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে ।
রানী শিরোমণি নিপুণ বিচক্ষণতার কারণে, প্রজাহিতৈষী নানান পরিকল্পনার জন্য প্রজাদের মধ্যে প্রবল জনপ্রিয় ছিলেন। মহামায়া মন্দিরকে কেন্দ্র করে এক বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন তিনি । চূয়াড়, মাঝি, লোধা, কুরমি প্রভৃতি গোষ্ঠীর প্রজাদের কাছে তিনি ছিলেন স্বয়ং মহামায়ার প্রতিভূ । আবার রাণীও ছিলেন মহামায়ার একনিষ্ঠ ভক্ত । জঙ্গলমহলের প্রজারা রাণীর মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাক্যই মহামায়ার আদেশ রূপে শিরোধার্য করতো । প্রজাদের চোখে আরাধ্যা দেবী মহামায়া আর তাদের প্রিয় রাণী যেন একই।
কথিত আছে যে, শিবায়ন কাব্যের রচয়িতা কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য দেবী মহামায়ার মন্দিরে বসেই নাকি তাঁর কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর এই কাব্যে কর্ণগড়ের রাজপরিবারের বর্ণনা রয়েছে। তবে কর্ণগড়ের এই মন্দিরে বগলা দেবীর বিগ্রহও রয়েছে। দেবী মহামায়া এখানে ‘কোকোমুখা’। জানা যায়, এখানের শিলাখণ্ড প্রথমে দেবী চণ্ডী রূপে পুজো পেতেন। পরে তা বিবর্তিত হয়ে হয় দেবী ‘মহামায়া’।
মহামায়া মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ৭৫ ফুট উচ্চতযুক্ত পাথরের তোরণ দেখা যায়। এখানে দেবীকে নানা পদ দিয়ে পুজো করা হয়। দেবীর আমিষ ভোগের রীতিও রয়েছে। মন্দির চত্বরে রয়েছে সিদ্ধিকুণ্ড। সেই জল শুধু দেবীর অন্ন ও পুজোর কাজে ব্যবহার করা হয়। সেই কুণ্ডে প্রায় আলোই পৌঁছয় না বললেই চলে। এই কুণ্ডের জল নষ্ট হয় না বা প্রচন্ড গরমেও জল শুকিয়েও যায় না।
শোনা যায়, এই মন্দিরেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এক সিদ্ধপুরুষের। গুরুপূর্ণিমার দিন মহাসমারোহে এই মন্দিরে পুজো হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত, এই মন্দিরে পুজো দিলে দেবী মনস্কামনা পূরণ করেন।