পেটপুজো বিভাগে ফিরে যান

ভোজনরসিক স্বামীজিকে কজন চেনেন?

January 12, 2024 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ‘খালি পেটে ধর্ম হয় না’ মোক্ষম মন্ত্রটা দিয়ে গেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। আর স্বামী বিবেকানন্দ? তাঁর মতো আহারবিলাসী মানুষ এই বাংলায় খুব কমই জন্মেছেন। আর তিনি  এতই যে খাদ্যরসিক ছিলেন যে বিলেতে বেদান্ত আর বিরিয়ানির প্রচার এক সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছেন।

বিবেকানন্দের খাদ্যরসিক হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। একেই উত্তর কলকাতার বাসিন্দা, তার ওপর সচ্ছল পরিবারের ছেলে। খাদ্যবিলাসী মানুয হওয়ার পিছনে তাঁর পরিবারের অবদান যথেষ্ট। নরেন্দ্রনাথের বাবা বিশ্বনাথ দত্ত নিজেও ছিলেন খাদ্যরসিক। বাবা জীবিত থাকাকালীন দত্ত পরিবারে রোজ পোলাও হতো। ‘মাংসই দত্তবাড়ির প্রধান আহার্য’-এ তথ্য দিয়েছেন অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু। তাই মাংসের প্রতি একটা অনুরাগ ছিল স্বামীজির।তবে মাংসই যে শুধুমাত্র স্বামীজির প্রিয় ছিল, এমনটা কিন্ত ভাবার কোনও কারণ নেই।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলছেন, ‘নরেনকে খাওয়ালে লক্ষ ব্রাহ্মণ ভোজন করানোর পুণ্য হয়…’ হ্যাঁ, নরেন্দ্রনাথ যে সব কিছু খেতেই ভালবাসতেন। এর মধ্যে বোধহয় সব চেয়ে প্রিয় ছিল ‘কচুরি’ । একবার পরিব্রাজক বিবেকানন্দের কাছে এ প্রশ্নটি করে বসেন কয়েকজন, ‘আপনি গিরি না তোতাপুরী ?’ তখন স্বামীজির উত্তর ছিল-‘কচুরি’ ।

সিমলার বিখ্যাত কচুরি বিক্রেতা ‘পরমহংসের কচুরি’ তিনি আনাতেন বন্ধু রাখালের জন্য। পরবর্তীকালে সেই রাখালই হন স্বামী ব্রহ্মানন্দ। কচুরির প্রতি এতটাই ভালবাসা যে অসুস্থ গুরুভাই স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ যখন রোগীর পথ্য হিসেবে আধসের কচুরি খাচ্ছেন, তখন মোটেই চটে যাচ্ছেন না বিবেকানন্দ। নোনতার মধ্যে যে কচুরিই ছিল তাঁর প্রিয়, এমনটা কিন্তু মোটেই নয়। চানাচুর খেতেও প্রচণ্ড ভালবাসতেন তিনি। একা একা ঘুরতে ফিরতেও চানাচুর খেতেন।

মিষ্টির প্রতিও স্বামীজির কিন্তু প্রেম লক্ষ্য করা যায়। নরেন্দ্রনাথের দক্ষিণেশ্বর গমনও নাকি রসগোল্লার আশায়। বলেছিলেন, যদি আমাকে রসগোল্লা খাওয়াতে পারে তো ভাল, নইলে কান মলে দেব।’ 

এবার আসা যাক স্বামীজির ঝাল বৃত্তান্তে। তাঁর ছোট ভাই মহেন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, স্বামীজির অত্যন্ত প্রিয় ছিল তীব্র ঝাল। রামকৃষ্ণর মৃত্যুর পরে বরানগরে সাধনভজনের সময় প্রবল অনটন । দারিদ্র এমনই যে মুষ্টিভিক্ষা করে এনে তাই ফুটিয়ে একটা কাপড়ের ওপর ঢেলে দেওয়া হতো। একটা বাটিতে থাকতো নুন আর লঙ্কার জল। একটু ঝালজল মুখে দিয়ে এক এক গ্রাস ভাত উদরস্থ করা হতো।’

স্বামীজি নিজে বলতেন, লঙ্কা হল তাঁর ‘বন্ধু ও মিত্র।’ শংকরের মতে, বিবেকানন্দের হাত ধরেই বিলেত লঙ্কা খেতে শিখল। আজকের দিনে যা ‘হট’ । 

স্বামীজির মাংসের প্রতি অনুরাগ ছিল। স্বামীজি মোটেই নিরামিষ খাবার পছন্দ করতেন না। সন্ন্যাসী হয়েও বিবেকানন্দ সারাজীবন মাংস খাওয়ার পক্ষেই লড়াই করে গিয়েছেন। তিনি খাওয়ার ব্যাপারে ছুঁতমার্গকে ঘৃণা করতেন। নিরামিষ খাবারের সঙ্গে ‘ধর্মের জড়াজড়ি ভালবাসাকে স্বামীজি ঘুঁচিয়েছেন বারবার’। 

স্বামী অভেদানন্দ লিখেছেন, ‘ সে দিন নরেন বলিল, চল আজ তোদের কুসংস্কার ভাঙিয়া দিই ।…সন্ধ্যার সময় কাশীপুর বাগান হইতে পদব্রজে আমরা নরেনের সঙ্গে বিডন স্ট্রিটে বর্তমানে যেখানে মিনার্ভা থিয়েটার, তাহার নিকটে পীরুর দোকানে উপস্থিত হইলাম। নরেন ফাউলকারি অর্ডার দিল।…রাত্রে কাশীপুরে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিলেন, কোথায় গিয়েছিলি ? আমি বলিলাম কলিকাতার বিডন স্ট্রিটে পীরুর দোকানে।… জানতে চাইলেন কী খেলি? আমি বলিলাম মুরগির ডালনা।শেষ পর্যন্ত ঠাকুর ঈষত্‍ হাস্য করিয়া বলিলেন, বেশ করেছিস।

স্বামীজি বলতেন, ‘ঈশ্বর কি তোমাদের মত আহাম্মক? তিনি কি ফুলের ঘায়ে এতই মূর্চ্ছা যান যে এক টুকরো মাংসে তাঁর দয়ানদীতে চড়া পড়ে যাবে? ’ তিনি খাওয়াতেও বেশ ভালবাসতেন। দারুণ রান্না করতেন তিনি। ছেলেবেলায় বন্ধুরা মিলে গড়ে তোলেন ‘গ্রিডি ক্লাব’। এই গ্রিডি ক্লাবে নানা রকমের রান্না করা হতো। সেখানে একটা দারুণ রেসিপির সন্ধান মিলছে-‘হাঁসের ডিম ফেটিয়ে চালে মাখিয়ে সেই চাল, কড়াইশুঁটি ও আলু দিয়ে খিচুড়ি।’ 

এতটাই তিনি খাওয়াতে ভালবাসতেন যে শিকাগো যাওয়ার আগে মুম্বইয়ে সকলের জন্য রেঁধেছিলেন পোলাও। নিজে খে্য়েছিলেন এক টুকরো মাংস।

তথ্যসূত্রঃ শঙ্করের লেখা বই

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#foodlover, #/Swami Vivekananda

আরো দেখুন